দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সপ্তাহ দুয়েক আগেই সিঙ্গুরে গিয়েছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায়। বিজেপির সভায় দাঁড়িয়ে কোনও কুণ্ঠা না করেই বলেছিলেন, “যেভাবে আন্দোলন করে টাটাকে তাড়িয়েছে, তাতে সারা দেশ বাংলার সম্পর্কে জেনে গেছে। তাই পাপ বোধ হয়। অন্যায় হয়েছিল। ভুল করেছিলাম।”


বাংলার পরিবর্তন তথা তৃণমূলের দুই উত্থান ভূমি বলা হয় সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামকে। শুক্রবার সেই নন্দীগ্রামে দাঁড়িয়ে সিঙ্গুর নিয়ে অনুতাপ শোনা গেল মুকুল রায়ের গলায়। এদিন মুকুলবাবু বলেন, “সিঙ্গুর আন্দোলনে মমতার পাশে থেকে আমরা ভুল করেছিলাম। বাংলার বেকার যুবকদের স্বপ্ন সেদিন ধ্বংস করা হয়েছিল। ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার এলে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সিঙ্গুরে আবার টাটাকে ফিরিয়ে আনার জন্য দরবার করব।”


সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় মুকুলবাবু ছিলেন তৃণমূলের নম্বর টু। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর তিনি বারবারই বলেন, সিঙ্গুরের ওই আন্দোলন ভুল ছিল। বাংলার শিল্প সম্ভাবনাকে গলা টিপে মারা হয়েছিল সেদিন।

তবে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সঙ্গে সিঙ্গুরের কী গুণগত পার্থক্য তা ও বুঝিয়ে দেন এই পোড় খাওয়া নেতা। তাঁর কথায়, “নন্দীগ্রামে সিপিএম মানুষের ভিটে মাটি, মন্দির-মসজিদ কেড়ে নিচ্ছিল। তার বিরুদ্ধে মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছিলেন।”


সিঙ্গুরে গাড়ি কারখানার কাজ প্রায় ৭০ শতাংশ হয়ে গিয়েছিল। গড়ে উঠছিল অনুসারি শিল্পও। কার্যত ১০ বর্গ কিলোমিটারের ছবিটাই পাল্টে গিয়েছিল রাতারাতি। কিন্তু তীব্র আন্দোলনের ধাক্কায় টাটাকে বাংলা ছাড়তে হয়। রতন টাটা বিবৃতি দিয়ে বলেছিলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্যই সিঙ্গুর ছাড়তে বাধ্য হলাম। বাংলার ভাল হল না।” এদিন যেন সেকথাই শোনা গেল মুকুলবাবুর গলায়।
নন্দীগ্রামের মাটিতে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু অধিকারীরও ভূয়সী প্রশংসা করেন মুকুলবাবু। প্রাক্তন রেলমন্ত্রী বলেন, “নন্দীগ্রামের আন্দোলনকে কেউ যদি বুক দিয়ে আগলে রাখে তাহলে সেই কাণ্ডারীর নাম শুভেন্দু অধিকারী। এটা অস্বীকার করলে সত্যের অপলাপ হবে।” সেই সঙ্গে বলেন, বাংলায় এতো মুখ্যমন্ত্রী দেখেছি, প্রফুল্ল ঘোষ থেকে শুরু করে জ্যোতি বসুদের দেখেছি। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো মিথ্যাবাদী মুখ্যমন্ত্রী দেখিনি”।

গত লোকসভায় সিঙ্গুরে ব্যাপক ভোটে হেরেছে তৃণমূল। তার মধ্যে সিঙ্গুরের রাজনীতিতে বেচারাম মান্না বনাম রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের লড়াই সুবিদিত। অনেকে মনে করছেন, বিজেপি চাইছে সিঙ্গুর আর নন্দীগ্রামে তৃণমূলকে কোণঠাসা করে দিতে। যে দুটি জায়গাকে তৃণমূলের আধিপত্যের ভূমি বলা হয়। হয়তো সেই কৌশলেই মুকুলবাবু এদিন একথা বলেছেন।


কারণ, সিঙ্গুরের মানুষের দুর্দশা একেবারে ভিন্ন। জমি ফেরত পেলেও তাতে চাষ করার জো নেই। মাটির গভীরে কংক্রিট রয়ে গেছে। কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে, শতাব্দী পেরিয়ে গেলেও ওই জমিতে চাষ করা যাবে না। ফলে শিল্প-কৃষি দুটিই হারিয়েছেন তাঁরা। এখন অনেকেই বলেন, টাটা কারখানা করলেই ভাল হত। সেদিন দিদির কথায় নেচে ভুল করেছিলাম। এদিন নন্দীগ্রামের মাটি থেকে সেটাই উস্কে দিতে চেয়েছেন মুকুল রায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here