দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: ক’দিন আগে তামিলনাড়ু সরকার ঘোষণা করেছিল, সিনেমা হলে আর সামাজিক দূরত্বের বিধি থাকবে না। ১০০ শতাংশ আসনে দর্শক বসানো যাবে। তার পর পরই তামিলনাডু সরকারকে চিঠি লিখে সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লা।
শুক্রবার নবান্ন সভাঘরে উদ্বোধন হয়েছে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের। টলিউডের অভিনেতা-অভিনেত্রী-পরিচালক-প্রযোজক মায় কে না উপস্থিত ছিলেন সেখানে। করোনা বিধি মেনেই এবারের চলচ্চিত্র উৎসব হবে বলে সেই অনুষ্ঠানে জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তারপরেই ঘোষণা করেন, সিনেমা হলে ১০০ শতাংশ দর্শক নিয়েই হবে ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল।

প্রসঙ্গত, এ বার কোনও বেসরকারি হলে চলচ্চিত্র উৎসবের ছবি দেখানো হবে না। সব ছবিই প্রদর্শিত হবে সরকারি প্রেক্ষাগৃহে।

কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই জল্পনা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। এবার কি চলচ্চিত্র উৎসব নিয়েও কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত শুরু হবে?
তামিলনাড়ুর ঘটনা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বক্তব্য ছিল, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণে। টিকাকরণও শুরু হয়েছে। কিন্তু এর পরেও সামাজিক দূরত্ব রাখার প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে। বিপর্যয় মোকাবিলা আইন মোতাবেক কেন্দ্র এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তা মানতে হবে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে।


কেন্দ্রের ওই সিদ্ধান্ত মতো বাংলায় সরকারি বা বেসরকারি কোনও প্রেক্ষাগৃহে ১০০ শতাংশ দর্শক বসানোর কথা নয়। ফলে সংঘাতের আশঙ্কা করছেন অনেকেই।

এদিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিলেন বলিউড বাদশা তথা পশ্চিমবঙ্গের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর শাহরুখ খান। করোনা-বিধি মাথায় রেখেই শুরু হল কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। নবান্ন সভাঘরে বিকেল চারটেয় এই উৎসবের সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইটে লিখেছেন, ‘সকলে মিলে আমরা এই অতিমারী জয় করব। তবে কলকাতা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল চালিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু এ বছর তা আকারে ছোট হবে।’ আর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘সিনেমার জগতের লোকজনরা তাও এই মহামারী পরিস্থিতিতে পরিবারকে সময় দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। এই চলচ্চিত্র উৎসব এবার আমরা ছোট করে অনুষ্ঠান করছি। আমরা তবু করতে পারছি, অনেকে তো সাহসই পায়নি। বাংলা বিশ্ব দরবারে সমাদৃত। বিদেশের সঙ্গে আমাদের শিল্পীরা কাজ করেন। এটা ভালো লাগে, গর্বের।’ কিছুক্ষণের জন্য ভার্চুয়ালি হাজির হয়ে শাহরুখও বলেন, ‘আমি বাংলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর, বাংলাকে ভালোবাসি। প্রতি বছর কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে প্রতি বছর যাই। এ বছর যেতে পারলাম না, খুব খারাপ লাগছে। সকলকে ধন্যবাদ জানাই। এই মহামারী পরিস্থিতি আমাদের সকলকে কাটিয়ে উঠতে হবে। ২০২১ সালে আমরা যা যা কাজ করব, তা যেন খুব ভালো ভাবে করতে পারি।’

তা ছাড়া এ বার ছিল না কোনও আন্তর্জাতিক ডেলিগেশনও। এই পরিস্থিতিতেও যে চলচ্চিত্র উৎসব করা সম্ভব হচ্ছে তার জন্য রাজ চক্রবর্তী, অরিন্দম শীল- সহ কলাকুশলীদের থেকে শুরু করে টেকনিশিয়ান সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। টলিউডের সবাইকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড করারও আহ্বান করেছেন মমতা। সম্প্রতি তিনি নিজেই সেই কার্ড করিয়েছেন, একথা বলে সবাইকে উৎসাহিত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।


মমতা জানিয়েছেন, যাতে কোনও ভাবেই সংক্রমণ না ছড়ায় তার সব বন্দোবস্ত করা হয়েছে। একটা সিনেমা শেষ হয়ে যাওয়ার পরে গোটা হল স্যানিটাইজ করা হবে। এছাড়া এবার সিনেমা দেখতে গেলে লাগবে ই-টিকিট। বুক মাই শো-তে গিয়ে সেই টিকিট বুক করলে তবেই হলে ঢুকতে দেওয়া হবে। এলইডি স্ক্রিনে থাকবে সিনেমা দেখার ব্যবস্থা। অনলাইনে যাতে টিকিট কাটতে কোনও সমস্যা না হয় তার জন্য নন্দন, টালিগঞ্জ ও সল্টলেকে তিনটি সহায়তা কেন্দ্র করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।


এবারের চলচ্চিত্র উৎসবে ৪৫টি দেশের মোট ৮১টি ফিচার ফিল্ম দেখানো হবে। এছাড়া ৫১টি শর্ট ফিল্মও রয়েছে। বিশেষ শ্রদ্ধা জানানো হবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়- সহ অনেককে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ৯ টি সিনেমা দেখানো হবে বলে জানা গিয়েছে।

শুক্রবার থেকেই নন্দন চত্বরে শুরু হয়ে যাচ্ছে ছবির উৎসব। উদ্বোধনী ছবি হিসেবে ‘অপুর সংসার’ দেখানো হচ্ছে বিকেল পাঁচটায়, রবীন্দ্র সদনে। নন্দন চত্বরে এ বারও তৈরি হয়েছে ‘সিনে আড্ডা’। সিনেমার বহু বিশিষ্ট মানুষ এখানে বিভিন্ন আলোচনায় অংশ নেবেন। অন্যান্য বারের মতো এবারও থাকছে সেলফি জোন, নন্দন চত্বরে নজরকাড়া বেশ কয়েকটি ইনস্টলেশনও বসেছে। তবে, তাৎপর্যপূর্ণভাবে এ বছর কোনও ডেলিগেট ফি দিতে হচ্ছে না। টিকিট বুক করা যাবে অনলাইনে এবং বিনামূল্যে। সংক্রমণ এড়াতেই এই ব্যবস্থা করেছেন ‘কিফ’ কর্তৃপক্ষ। তবে, এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সবাই অনলাইনে করতে পারে না। তাই যাঁদের কার্ড আছে, তাঁদেরও অনুমতি দেওয়া হোক।’

 এ বারের এই উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ ‘স্পেশাল স্ক্রিনিং’ বিভাগের তিনটে বিশেষ ছবি। তিনটি ছবি হল—সুইমিং আউট টিল দ্য সি টার্নস ব্লু, মি রাকসাম আর লালি।

শাহরুখকে রাখিবন্ধনের ডাক দিলেন দিদি মমতা:

সশরীরে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে না পারার জন্য দুঃখপ্রকাশ করে শাহরুখ বলেন, অতিমারি থেকে তিনি শিখেছেন, পরিবারই জীবনের সবচেয়ে দামী জিনিস। শাহরুখ বলেন, ‘‘কলকাতা আমার পরিবার। পশ্চিমবঙ্গ আমার পরিবার। খুব দ্রুতই বাংলায় যাব।’’ এ-ও বলেন যে, পরের বার কলকাতায় এসে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন এবং অনেকটা সময় কাটাবেন। মমতাও শাহরুখকে ‘ভাই’ সম্বোধন করে রাখিবন্ধনে আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে দেন। মমতা-শাহরুখ সম্পর্ক বরাবরই ঘনিষ্ঠ। প্রতিবারই ফিল্মোৎসবের উদ্বোধনে কলকাতায় আসেন শাহরুখ। প্রতিবারই উদ্বোধন হয় নেতাজি ইন্ডোরে। বস্তুত, বাম আমলে নন্দনের ‘ঘেরাটোপ’ থেকে বাইরে এনে ফিল্মোৎসবকে ‘সার্বজনীন’ রূপ দিয়েছিলেন মমতা। ঘটনাচক্রে, তাঁর অন্যতম প্রিয় সেই অনুষ্ঠানই এ বার হতে হল নবান্ন সভাঘরের ঘেরাটোপে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here