হীয়া রায় দেশের সময়

মতুয়াদের নিয়ে রাজনীতি করছে বিজেপি। মতুয়াদের বিদেশি সাজানোর ছক কষা হয়েছে। কিন্তু যাই করুক না কেন, মতুয়াদের অধিকার কেড়ে নিতে পারবে না কেউ। শনিবার চাকদহের সভা থেকে এভাবেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর তোপ, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বলা হয়েছিল, মতুয়াদের নিশর্ত নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।

২০১৯-এর ভোটের আগে বলা হল, মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু ২০২৪-এর ভোটের মুখে সিএএ লাগু করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, সিএএ-র মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাবেন মতুয়ারা। বিজেপিকে একদম বিশ্বাস করবেন না। এটা ওদের একটা ছক। যেই আপনি সিএএ-তে আবেদন করবেন, অমনি আপনাকে বিদেশি সাজিয়ে দেওয়া হবে। এটা এনআরসি করার একটা ধাপ। তৃণমূল কংগ্রেস থাকতে বাংলায় কোনওদিন এনআরসি হতে দেব না। যতই চেষ্টা করুক না কেন বিজেপি, মতুয়াদের অধিকার কাউকে কেড়ে নিতে দেব না। 

মোদিকে নিশানা করে তৃণমূল সুপ্রিমোর আক্রমণ, ভোট এলে আপনি হরিচাঁদ ঠাকুর করেন। ভোট মিটে গেলে আর ফিরেও তাকান না। পাত্তা দেন না। কিন্তু আমরা তা করি না। আমরা সারাবছর মতুয়াদের পাশে থাকি। ঠাকুরবাড়ির বড় মা অসুস্থ হলে কেউ খোঁজ রাখত না। আমি তাঁকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করতাম। বড় মা বীণাপানিদেবীকে আমি বঙ্গবিভূষণ সম্মান দিয়েছি।

হরিচাঁদ ঠাকুরের নামে বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। ঠাকুরনগরের উন্নয়নে প্রচুর কাজ হয়েছে। হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মদিনে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। মমতার তোপ, তৃণমূল বছরের পর বছর ধরে মতুয়াদের উন্নয়নে কাজ করে চলেছে। আর বিজেপি মতুয়াদের প্রথম থেকে মিথ্যে কথা বলে আসছি। ভাঁওতা দিয়ে আসছে। সিএএ প্রসঙ্গে সভাস্থলে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে মমতা বলেন, আপনারা প্রশ্ন করুন, আপনাদের ভোট নিয়ে যখন উনি প্রধানমন্ত্রী হলেন, তখন সিএএ-র কথা বলা হয়নি কেন?

এখন সিএএ-কে সামনে রেখে কেন দেশ থেকে তাড়ানোর ছক কষা হচ্ছে। বিজ্ঞাপন দিয়ে মোদি ভূরিভূরি মিথ্যে কথা বলছেন বলেও এদিনের সভা থেকে অভিযোগ করেন মমতা। বলেন, বলা হচ্ছে, আমরা নাকি হিন্দু ধর্ম জানি না। আপনি কী জানেন? রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ কে চেনেন? মা দুর্গা কে জানেন? দুর্গার ক’টা ছেলেমেয়ে জানেন? ক’টা দেবদেবীর পুজোর মন্ত্র জানেন আপনি? আমি চ্যালেঞ্জ করছি, পাশাপাশি দু’টো মঞ্চ হোক। আমি একের পর এক মন্ত্র বলব। আপনি ক’টা মন্ত্র বলতে পারেন দেখব। মোদিকে মিথ্যেবাদী তকমা দিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমোর বক্তব্য, বাড়িতে ছোট একটা ছেলে মিথ্যে কথা বললে মা তার কান মলে দেয়। কিন্তু দেশের প্রধানমন্ত্রী যদি দিনের পর দিন মিথ্যে কথা বলেন, তাহলে তাঁর কী করা উচিত?

জনতাই ঠিক করবে, কী করা উচিত। আমি এনিয়ে কিছু বলব না। তবে এটুকু বলতে পারি, তৃণমূল যা কথা দেয়, তাই করে। আগামী বছর থেকে আর দ্বাদশ শ্রেণি নয়, একাদশে উঠলেই ছাত্রছাত্রীরা স্মার্ট ফোন পাবে। বাংলায় একজনও উদ্বাস্তু থাকবেন না।

প্রত্যেককেই জমির দলিল দেওয়া হবে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্বাস্থ্যসাথী, সবুজসাথী, কন্যাশ্রী কোনও প্রকল্প বন্ধ হবে না। প্রত্যয়ী মমতার ঘোষণা, বাংলাই দেশ গড়বে। সুতরাং ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। আমরা এনআরসি, সিএএ-র মতো সব আইন ছুড়ে ফেলে দেব। কাউকে নাগরিকত্ব হারাতে হবে না। সন্দেশখালির ঘটনা বিজেপির সাজানো নাটক ছিল বলে এদিন মন্তব্য করেন মমতা। বলেন, প্রথম থেকেই আমি বলে আসছি, সন্দেশখালি নিয়ে নাটক সাজানো হয়েছে। এতদিনে তা ফাঁস হয়ে গেল। মমতার তোপ, বিজেপি মানুষজনকে ধমকাচ্ছে, চমকাচ্ছে। এজেন্সির ভয় দেখাচ্ছে। কিন্তু এসব করে তুমি পার পাবে না। 

এবার তুমি কিছুতেই আর কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসছ না। বিজেপি হারছে। এটা ওরা বুঝে গিয়েছে। সেজন্যই ধর্মকে সামনে রেখে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ তৈরির চেষ্টা করছে। আমরা সব ধর্ম করি। কে, কী খাবে, তা তুমি বলে দেওয়ার কে? মোদিকে নিশানা করে বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোপ, প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই দেখা যাচ্ছে, কোটি কোটি টাকা খরচ করে মিথ্যে কথা বলে বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। নিজের প্রচারের জন্য এত টাকা খরচ করছেন, আর একশো দিনের কাজে গরিব মানুষগুলোর মজুরি দিলেন না। দরকার নেই। বাংলা মাথা নত করবে না। আমরা ওঁদের মজুরি দিয়ে দিয়েছি। কর্মশ্রী প্রকল্প চালু হয়েছে। শ্রমিকরা ৫০ দিন কাজ পাবেন। ৩০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে আমরা বাংলার ন’কোটি মানুষকে রেশন দিচ্ছি।

চ্যালেঞ্জ করে যাচ্ছি, সব টাকাটাই আমরা দিচ্ছি। কেন্দ্রের যে সামান্য অংশ দেওয়ার কথা, সেটাও ওরা গত দু’বছর ধরে দিচ্ছে না। বাংলার ১১ লক্ষ বাড়ির আবেদন আটকে রেখেছে কেন্দ্র। টাকা দিচ্ছে না। দরকার নেই। ভোট মিটলে আমরা বাড়ি তৈরির টাকাও দিয়ে দেব। জনতার উদ্দেশে মমতা প্রশ্ন করেন, প্রধানমন্ত্রী বলছেন, সবার বাড়িতে বিনা পয়সায় বিদ্যুৎ পৌঁছে গিয়েছে। সত্যিই কি আপনার বাড়িতে বিনা পয়সার বিদ্যুৎ পৌঁছিয়েছে?

বিজেপি বলছে, বাড়ি বাড়ি বিনা পয়সার গ্যাস গিয়েছে। আসলে গ্যাস যায়নি। গ্যাস বেলুন গিয়েছে।

জনতার উদ্দেশে মমতার প্রশ্ন, আমি বলেছিলাম, স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড করে দেব। দিয়েছি। বলেছিলাম, ছাত্রছাত্রীদের স্মার্ট ক্রেডিট কার্ড দেব, দিয়েছি। বলেছিলাম, কৃষকদের দশ হাজার টাকা করে ভাতা দেব, দিয়েছি। কিন্তু মোদিবাবু বলেছিলেন, প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেবেন? পেয়েছেন সেই টাকা? তাহলে আপনারা কাকে ভরসা করবেন? কাকে ভোট দেবেন? বিজেপি দশ বছর ধরে শুধু মিথ্যে কথা বলে ভোট নিয়ে যাচ্ছে। এবার ওদের কাছে প্রশ্ন করুন, আর কত গ্যাস বেলুন ওড়াবে ওরা। কবে মিথ্যে কথা বলা বন্ধ করবে। নদীয়ার এক বিজেপি প্রার্থীর উদ্দেশে মমতার তোপ, আমাদের কাছেও কিছু ছবি আছে। সেসব প্রকাশ্যে আনলে অনেক কিছু হবে। সব উধাও হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা বিজেপির মতো নোংরা রাজনীতি করি না। রাজ্যপাল প্রসঙ্গে মমতা বলেন, উনি তো কেন্দ্রের প্রতিনিধি। কী অভিযোগ উঠছে তাঁর বিরুদ্ধে। অথচ সেই রাজভবনেই রাত্রিবাস করছেন প্রধানমন্ত্রী। উনি তো সন্দেশখালি নিয়ে অনেক সন্দেশ দিয়েছেন। তাহলে রাজ্যপাল প্রসঙ্গে তিনি কেন কোনও সন্দেশ দিলেন না?

বাংলার প্রতিটি শহরে তাঁতশিল্পীদের তৈরি সামগ্রী বিক্রির জন্য একটি করে বাজার হবে বলেও এদিন জানান মমতা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here