দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ : অসুস্থ তৃণমূল নেতা মুকুল রায়। তাঁকে ভর্তি করা হয়েছে এসএসকেমের উডবার্ন ওয়ার্ডে। জানা গিয়েছে এই মুহূর্তে তাঁকে রাখা হয়েছে এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডের ১০৩ নম্বর কেবিনে।  জানা গিয়েছে, স্নায়ুজনিত বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে তাঁর। স্নায়ুর সমস্যা নিয়ে চিকিৎসক গৌতম গঙ্গোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে ভর্তি করা হয়েছে প্রাক্তন রেলমন্ত্রীকে। হাসপাতালের তরফে সাত সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে মুকুলবাবুর চিকিৎসার জন্য।

সোডিয়াম পটাশিয়ামের তারতম্য রয়েছে। এমনকী বেশ কিছুটা আচ্ছন্ন ভাব আছে মুকুল রায়ের। তাঁর শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুকুল পুত্র শুভ্রাংশুকে ফোন করেন মুখ্যমন্ত্রী। সূত্রের খবর এমনই।

মাস দেড়েক ধরেই মুকুলবাবুর শরীর ভাল যাচ্ছিল না। তাঁর কথার মধ্যেও অসংলগ্নতা ধরা পড়ছিল। তাঁর ঘনিষ্ঠদের অনেকের বক্তব্য, স্ত্রী বিয়োগের পর থেকেই মুকুলবাবু হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
মেডিক্যাল বোর্ড খতিয়ে দেখবে কী সমস্যা হচ্ছে মুকুল রায়ের। চিকিৎসকদের অনেকের সন্দেহ ডিমেনসিয়া হয়ে থাকতে পারে মুকুল রায়ের। যে অসুখে স্মৃতি লোপ পায়।

আবার সোডিয়াম-পটাশিয়ামের ভারসাম্যের সমস্যাও হয়ে থাকতে পারে। বর্ষীয়ান নেতার কী হয়েছে তার জন্য একাধিক পরীক্ষা করে দেখতে চাইছেন চিকিৎসকরা।

কৃষ্ণনগরে গিয়ে তাঁর মন্তব্য আন্দোলিত করেছিল রাজ্য রাজনীতিকে। মুকুল রায়কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কৃষ্ণনগরে উপনির্বাচন হলে কী হবে? জবাবে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফেরা এই পোড় খাওয়া নেতা বলেছিলেন, আমি ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকে বলতে পারি। এখানে বিজেপি জিতবে। তৃণমূলকে পর্যুদস্ত করে ভারতীয় জনতা পার্টি তার নিজস্ব শক্তিতে প্রতিষ্ঠিত হবে।

পাশে বসে থাকা তৃণমূল নেতারা ভুল শুধরে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কোনও হেলদোলই দেখা যায়নি তৃণমূলের একদা সেকেন্ড ম্যানের। বলেই চলেন তিনি। যেন মনে নেই, ১১ জুন বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।

তারপর একদিন বিধানসভাতেও মুকুলবাবুর কথার মধ্যে অসংলগ্নতা স্পষ্ট হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, আমায় বিজেপির মতো প্রশ্ন করলে বিজেপির মতো বলব, তৃণমূলের মতো প্রশ্ন করলে তৃণমূলের মতো বলব। সেই সময়ে বিজেপির অনেকে বলেছিলেন, উপনির্বাচন এড়াতে মুকুল রায় আসলে এসব ফন্দি এঁটে বলছেন। যাতে তাঁর বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইন প্রয়োগ না করা যায়। কয়েকদিন আগেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, মুকুল রায়কে অসুস্থ সাজিয়ে রেখেছে তৃণমূল। দেখা গেল এদিন হাসপাতালে যেতে হল বর্ষীয়ান নেতাকে।

এমন এক পরিস্থিতিতে বুধবারই শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেন, ‘মুকুল রায়কে অসুস্থ সাজিয়ে ঘরে বসিয়ে রাখা হয়েছে। পিএসি বৈঠকেও হাজির হচ্ছেন না তিনি। তার মানে এটাই, খরচ আমরা করব, হিসেবও আমরা রাখব, এটাই আসলে কাটমানি খ্যাত তৃণমূলের নীতি।’ যদিও শুভেন্দু দাবি করেছেন, মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ খারিজ করার জন্য যতদূর যেতে হয়, তিনি যাবেন। শুভেন্দুর সেই আক্রমণের ২৪ ঘণ্টার আগেই এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হলেন মুকুল।

তৃণমূলের একাংশ অবশ্য তখনই দাবি করেছিল, অসুস্থতার কারণেই এমন অসংলগ্ন বক্তব্য মুকুল রায়ের। এমনকী মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশুও বাবার অসুস্থতার কথা তুলে ধরেন। এরপরে বিধানসভায় এসেও মুকুল রায় দাবি করেছিলেন, তিনি এখনও পর্যন্ত বিজেপি-রই বিধায়ক। সেই বক্তব্য নিয়েও ‘অসুস্থতা’ জল্পনা তৈরি হয়। যদিও শুভেন্দু দাবি করেছেন, পুরোটাই নাটক। তবে, এদিন মুকুল এসএসকেএম-এ ভর্তি হতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here