পিয়ালী মুখার্জী, কলকাতা: বেশ কিছুদিন আগেই পড়ুয়াদের স্কুলের পোশাক তৈরিতে বড়সড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। আর ভিন রাজ্য থেকে কাপড় আমদানি নয়, এবার থেকে এ রাজ্যের উৎপাদিত কাপড় দিয়েই পোশাক তৈরী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই এই ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছেন। স্কুলপড়ুয়াদের পোশাক যাতে এ রাজ্যে উৎপাদিত কাপড়ে তৈরি করা হয়, এখন সেটাই চাইছে রাজ্য সরকার।

এদিকে রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগে ব্যাপক অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতির আশঙ্কায় কপালে ভাঁজ পড়েছে এ রাজ্যেরই স্কুলের পোশাক প্রস্তুতকারক শ্রমিক সংগঠনের কয়েক হাজার শ্রমিক সহ বহু কাপড় ব্যাবসায়ীরা।

বৃহস্পতিবার হগলি জেলার মানকুন্ডু তে একটি সম্মেলনের আয়োজন করে রাজ্যের স্কুলের পোশাক প্রস্তুতকারক শ্রমিক সংগঠন। তারা এই মর্মে বিভিন্ন দাবি নিয়ে একটি চিঠি লেখেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শিল্প প্রতিমন্ত্রী চন্ত্রনাথ সিনহার কাছে।

শ্রমিক সংগঠনের প্রেসিডেন্ট তপনবাবু বলেন এই করোনা কালে লকডাউনে তাদের লক্ষাধিক শ্রমিক প্রভুত ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। কারণ স্কুল গুলো দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ। তবুও তারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে, জমি বিক্রি করে মহাজনের কাছে কাপড় কিনে শ্রমিকদের দিয়ে পোশাক তৈরি করিয়ে পারিশ্রমিক দেওয়া হয়েছে যাতে কেউ কাজ হারিয়ে বিপর্যয়ের মুখে না পড়েন। সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে একটি পত্রিকায় বিবৃতি থেকে জানা যাচ্ছে এবার থেকে এই প্রকল্প তন্তুজ কে দেওয়া হবে। এতে এই পোশাক শিল্পের সাথে যুক্ত সমস্ত শ্রমিক ও কাপড় ব্যাবসায়ীরা কাজ হারানোর ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে দিন কাটাচ্ছেন

তপন বাবুর আরও বক্তব্য, তন্তুজ কাপড় তৈরি করলে আপত্তি নেই কিন্তু তাঁদের কাছে যে পোশাক ও কাপড় মজুদ আছে তা যেন তারা ব্যাবহার করতে পারেন কারণ এতে শ্রমিকদের প্রচুর বিনিয়োগ আছে। সেগুলো বিক্রি না হলে চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হবে তাদের। এটাই প্রধান দাবি।

তিনি আরও বললেন রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী ২০১১ সালে ক্ষমতায় এসে এই সমস্ত শ্রমিক শ্রেণীর মানুষদের কর্মসংস্থানের কথা ভেবেছিলেন এবং তা কার্যকর করেছিলেন। তিনি সাধারণ মানুষের জন্য অনেক প্রকল্প এনেছেন, তাই এই স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও ক্ষুদ্রশিল্পে যুক্ত শ্রমিকরা যাতে বেঁচে থাকেন তার জন্য মূখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন তারা। এই শিল্পের সাথে বহু মহিলাও জড়িত তাই তাদের জন্য আলাদা করে ভাবা হোক যেমন লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের মতো কিছু উদ্যোগ চান তারা। এই সব গ্রাম্য গৃহবধূদের কাজ শিখিয়ে এই শিল্পের সাথে যুক্ত করেন তাঁদের স্বনির্ভর করতে। তাদের আরো দাবি তাদের কিছু সরকারি সুযোগ সুবিধা দেওয়া হোক, যেমন চিকিৎসা ক্ষেত্রে বা বৃদ্ধভাতা ক্ষেত্রে, যাতে তাঁরা সুস্থ ভাবে বাঁচতে পারেন।

রাজ্যের শিল্প মন্ত্রকের মৌখিক আশ্বাস তাঁরা শ্রমিকদের প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখে ওই জমা পোশাক ও কাপড় যাতে এবছরই কাজে লাগে, বিক্রি হয় তা তারা সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করবেন। তবে শ্রমিক সংগঠন কে তারা জানান তারা যেন কাঁচা মালের ক্ষেত্রে নতুন করে আর বিনিয়োগ না করেন।

সংগঠনের প্রেসিডেন্ট তপন বাবু আরো জানান তন্তুজ কাপড় বানালে তাতে রাজ্যে আরো বেশি করে কর্মসংস্থান হবে। তুলোর চাষ বাড়লে কৃষক কাজ পাবেন। পাওয়ারলুম হলে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ পাবে। তখন সরকার যেন এই পোশাক তৈরি শিল্পী দের মজুরী নিয়ে কিছু ভাবেন । এখন পোশাক পিছু ৬০০ টাকা করে পান, এই ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টিপাতের আবেদন জানানো হয়েছে। সংগঠনের আরোও দাবি জেলা স্তরে ও রাজ্য স্তরে তাঁরা এই শান্তিপূর্ণ আবেদন ও আন্দোলন চালিয়ে যাবেন যাতে এই সমস্যার ফলপ্রসূ সুরাহা হয়।

অন্যদিকে,নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের আধিকারিকরা জেলায় জেলায় কত হ্যান্ডলুম ও পাওয়ারলুম মজুদ রয়েছে, তাছাড়া সেগুলি এখন কি অবস্থায় আছে, তা জানতে জোলাগুলোতে তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে। বিভিন্ন জেলায় থাকা হ্যান্ডলুম ও পাওয়ারলুমের পরিমাণের ডাটাবেস তৈরীর কাজ চালাচ্ছে রাজ্য। সে ক্ষেত্রে রাজ্যে তৈরি কাপড়ে স্কুলপড়ুয়াদের পোশাক তৈরি করলে, খরচ অনেকটাই কমে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

পড়ুয়াদের স্কুলের পোশাক তৈরি করতে এতদিন গুজরাত থেকে কাপড় এনে তা দিয়ে পোশাক তৈরি করা হত। শিশুদের পোশাক তৈরি করতে কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছিল রাজ্যের। সেই কারণে আর ভিন রাজ্যের কাপড়ের উপর ভরসা রাখতে চাইছে না-‌রাজ্য সরকার। বাংলায় উৎপাদিত কাপড়েই স্কুলের পোশাক তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য। পুজোর ছুটির পর স্কুল খোলার চিন্তাভাবনা রয়েছে রাজ্য সরকারের। তখনই সরকারের উদ্যোগে স্কুলের পোশাক ও জুতো দেওয়া হবে পড়ুয়াদের। 

রাজ্যের বস্ত্র বয়ন শিল্পের উন্নতির জন্য আর বাইরে থেকে নয়, এই সিদ্ধান্তের জেরেই এরাজ্যে তৈরি করা কাপড়ের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে রাজ্য সরকার। সেক্ষেত্রে এবার থেকে আর ভিন রাজ্যের নয় বাংলার কাপড় দিয়ে তৈরি করা হবে শিশুদের স্কুলের পোশাক। ফলে বাংলার নতুন তন্তুজ, পাওয়ারলুম এবং হ্যান্ডলুমের সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার শিল্পী ও ব্যবসায়ীরা লাভের মুখ দেখতে পাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here