দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আগে তোমায় দেশে ফেরত পাঠাই, তার পরে পোস্ট কার্ডে জবাব দেব।”– ফেসবুক পোস্টে ট্রোল করায় মুস্তাফিউর রহমান নামের এক ব্যক্তির প্রতি এমনই মন্তব্য করলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তার পরেই এই মন্তব্যের স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। প্রশ্ন উঠেছে, এক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কি এভাবে কোনও সাধারণ নাগরিককে হুমকি দিতে পারেন!

বৃহস্পতিবার সন্ধেয় এক ব্যক্তির একটি ফেসবুক পোস্ট শেয়ার করেন বাবুল সুপ্রিয়। সেই পোস্টে দাবি করা হয়, ২৪ ডিসেম্বর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের মঞ্চে যে ছাত্রীটি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ছিঁড়ে প্রতিবাদ করেছেন, তাঁর মা বাবা নাকি তাঁদের মেয়ের আচরণে গর্বিত। এই তথ্যের পাশাপাশি এও দাবি করা হয়েছে, ওই ছাত্রীর মা-বাবা ‘অরাজক’। সেই সঙ্গে জানানো হয়েছে, আইন ছেঁড়ার মতো অপরাধের জন্য শাস্তি হওয়া উচিত ওই ছাত্রীর।

এই পোস্ট শেয়ার করার পরে দেখা যায় মুস্তাফিউর রহমান সেখানে মন্তব্য করেছেন, যেখানে দিলীপ ঘোষের সেই গরুর দুধে সোনা থাকার মন্তব্য নিয়ে যে বিতর্ক হয়েছিল, তা উল্লেখ করে বাবুলকে ট্রোল করা হয়েছে। এর উত্তরেই বাবুল লেখেন, তাঁকে ‘দেশে’ ফেরত পাঠিয়ে তিনি উত্তর দেবেন।

রইলসেই মন্তব্য:

প্রশ্ন উঠেছে, কোন দেশে ফেরত পাঠানোর কথা বলছেন বাবুল? রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের মতে উত্তরটা স্পষ্ট। বাবুল বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে চাইছেন ওই ব্যক্তিকে। তার কারণ অবশ্যই ওই ব্যক্তির পদবি, যা নির্ধারণ করছে তিনি মুসলমান বলে। আর সেই মুসলমান পরিচয়ের নিরিখেই বাবুল এই মন্তব্য করে বসেছেন। যার অর্থ হয়, এনআরসি-তে নাম উঠবে না মুস্তাফিউরের, ফলে তিনি ‘দেশে’ ফিরতে বাধ্য হবেন। অর্থাৎ পদবিতে মুসলমান ধর্ম বহন করার সমীকরণে তাঁকে সরাসরি অনুপ্রবেশকারী বলে দাগিয়ে দিয়েছেন বাবুল।

নেটিজেনদের অভিযোগ, তা হলে কি বাঙালি মুসলমান মাত্রেই তাঁকে অনুপ্রবেশকারী বলে ধরে নেওয়া হবে? অনুপ্রবেশকারী না হলেও কি তাঁকে দেশ থেকে বার করে দেওয়া হবে কেবল মুসলমান বলে? সম্প্রতি নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে দেশজুড়ে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রকাশ্যে বলেছেন, ভারতীয়দের জন্য নাকি এই আইন নয়। পড়শি দেশের অ-মুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য আইনটি করা হয়েছে। এ দেশের হিন্দু বা মুসলমান বা অন্য কোনও ধর্মের কোনও মানুষেরই ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই। তিনি আরও বলেছেন, এনআরসি নিয়ে গত পাঁছ বছরে কোনও কথা হয়নি সরকারে। এমনকি যে অমিত শাহ কয়েক মাস আগে এনআরসি লাগু করার পক্ষে সুর চড়িয়েছিলেন, তিনিও সাম্প্রতিক অশান্তির পরে পিছু হটে বলেছেন, এনআরসি হবে না।

এমন পরিস্থিতিতে এক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কী করে প্রকাশ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও মুসলিম ব্যক্তিরকে ‘দেশে ফেরত পাঠানোর’ হুমকি দিয়ে মন্তব্য করেন, সেটা ভেবেই বিস্মিত নেট দুনিয়ার একটা বড় অংশ।

শুধু তাই নয়। প্রশ্ন উঠেছে, ওই পোস্টে যাদবপুরের প্রতিবাদী ছাত্রীকে উদ্দেশ্য করে যে কথাগুলি বলা হয়েছে, তা নিয়েও। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকারি সিদ্ধান্তের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করার অধিকার সকলের আছে। তার ধরনও বিভিন্ন রকম হতে পারে। বিশেষ করে ছাত্র সমাজে এ ধরনের প্রতিবাদ মোটেই নতুন নয়। শুধু ছাত্র সমাজ কেন, এর আগেও খাস আইনসভায় বসে আইনের প্রতিলিপি ছিঁড়ে প্রতিবাদ করেছেন সাংসদেরা। সেটা যদি সমর্থনযোগ্য হয়, তা হলে এই ছাত্রীর সিএএ-র প্রতিলিপি ছেঁড়াতেই বা আপত্তি কীসের? তাহলে কি ধরে নিতে হবে, এই আইন ছিঁড়ে সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ প্রকাশ করার অগ্রাধিকার শুধু সাংসদদেরই আছে, সাধারণ মানুষের নেই? তাছাড়া শুধু বর্তমান সময়ে যাদবপুরের নিরিখে নয়, দেশ-কাল-পাত্র নির্বিশেষে এমন আইন অমান্য প্রতিবাদ বহুবার হয়েছে। এই ঘটনা নতুন নয়।

রইল সেই পোস্ট:

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=10159237968553574&id=639728573

শুধু তাই নয়, ছাত্রীটি যাই করে থাকুক না কেন, তার জন্য তাঁর মা-বাবাকে অরাজক বলে দাগিয়ে দেওয়া কি কোনও ভাবেই মন্ত্রী-সুলভ কাজ? তাঁর মা-বাবা আদৌ সমর্থন করেছেন কিনা, আর করলেও তার কারণ কী, তাঁদের মতামত কী– সে বিষয়ে কি বাবুল আদৌ কোনও খোঁজ নিয়েছেন? যদি না নিয়ে থাকেন, তা হলে কি কোনও সাধারণ নাগরিককে উদ্দেশ্য করেই এমন মন্তব্য করা যায়? প্রশ্ন তুলেছে নেট-দুনিয়া।

প্রশ্নগুলির সঙ্গে সঙ্গেই ক্রমে ভাইরাল হচ্ছে বাবুলের মন্তব্যের স্ক্রিনশট। এ বিষয়ে বাবুল সুপ্রিয়র সঙ্গে দ্য ওয়াল-এর তরফে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও ফোন ধরেননি তিনি। জবাবা দেননি মেসেজেরও। বাবুল সুপ্রিয়র প্রতিক্রিয়া জানা গেলেই এই প্রতিবেদনটি আপডেট করা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here