দেশের সময় ৪০ ডিগ্রি গরমে নাজেহাল সাধারণ মানুষ। কিন্তু, লোকসভা নির্বাচনে কোনওভাবেই রাজনৈতিক পারদ কমছেই না।

বিচারপতির পদ ছেড়ে সরাসরি রাজনীতির ময়দানে পা রেখেছেন তিনি। বিজেপিতে যোগ দিয়ে তমলুকের প্রার্থীও হয়েছেন। সেখানেই ভোট প্রচারে গিয়ে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে নিজের লজ্জা ঢাকার পরামর্শ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা হাইকোর্টের যে রায় নিয়ে হইচই, সেই ইস্যু নিয়েও অভিজিতকে নিশানা করেন মমতা। 

তমলুকে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন ছাত্রনেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের প্রার্থী ঘোষণার আগেই জানিয়েছিলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কোনও ছাত্রনেতাকেই দাঁড় করাবেন। তাই করিয়েছেন। বৃহস্পতিবার দেবাংশুর সমর্থনে ভোট প্রচারে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানকার বিজেপি প্রার্থীকে চাকরি বাতিল ইস্যুতে আক্রমণ শানান। পাশাপাশি তমলুকে দেবাংশুকে প্রার্থী করার কারণ ব্যাখ্যা করেন তিনি। বিজেপি প্রার্থী তথা প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে উদ্দেশ করে মমতা বলেন, আগে দেবাংশুর সঙ্গে লড়ে দেখান, তারপর তো অন্যকিছু!

চাকরি বাতিলের প্রসঙ্গে মমতা প্রাক্তন বিচারপতিকে নিশানা করে বলেন, ”এখানে যিনি বিজেপির হয়ে দাঁড়িয়েছেন তিনি ভাবছেন এটাও বিচারালয়। খালি পদত্যাগের কথা বলছেন। আমি তাঁকে বলব আগে নিজের লজ্জা ঢাকুন, তারপর পদত্যাগের কথা ভাববেন। আপনি বিচারালয়ের কলঙ্ক।” মমতার কথায়, আগে তিনি  বিকাশ ভট্টাচার্যের জুনিয়র ছিলেন। এখন গদ্দারের সিনিয়র না জুনিয়র তিনি জানেন না।


কলকাতা হাইকোর্ট নিয়োগ মামলায় ২০১৬ সালের পুরো প্যানেল বাতিল করেছে। চাকরি গেছে ২৫,৭৫৩ জনের। এই রায়ের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করেছিলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বলেছিলেন, “এই মুখ্যমন্ত্রী জোচ্চোর। তিনি জোচ্চোরদের আশ্রয় দেন। তিনি মিথ্যাচারী। এই মুখ্যমন্ত্রীর উচিত এখনই পদত্যাগ করা। বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে লোকসভা ভোট হোক”। কার্যত সেই মন্তব্যেরই জবাব দিয়ে মমতা তমলুকের সভা থেকে বলেন, ”সবচেয়ে বেশি চাকরি খেয়েছেন উনি, মিথ্যে কথা বলে। এক কথায় সকলের চাকরি খেয়েছেন।” তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন মমতা। 

হাইকোর্টের রায়ে রাজ্যে প্রায় ২৬ হাজার প্রার্থীর চাকরি বাতিল নিয়ে আগেই সরব হয়েছেন রাজ্যের মুখ্য়মমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই রায় নিয়েই দুদিন আগে ‘বোমা ফাটা’র ইঙ্গিত দিয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। রায় বের হওয়ার ৪৮ ঘন্টা আগে তিনি কী রায় হবে জানলেন কী করে? প্রশ্ন তুললেন মুখ্যমন্ত্রী। চাকরিহারাদের পরিবারের কারও কিছু হলে শুভেন্দু অধিকারীর বাড়ির সামনে গিয়ে বিচার চাইবে বলে আক্রমণ মমতার।

সোমবার কলকাতা হাইকোর্ট বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শাব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ ২০১৬ সালের এসএসসির পুর প্যানেলে বাতিল করার নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের এই রায় নিয়েই আগেই সর্ব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পেছনে বিজেপির ষড়যন্ত রয়েছে বলেও দাবি করা হয়। দুদিন আগেই একটি সভা থেকে এই সপ্তাহে ‘বোমা ফাটবে’ বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেল রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর গড়ে দাঁড়িয়েই একটি সভা থেকে মমতা বলেন, ‘রায় বের হবে, ৪৮ ঘণ্টা আগে জানল কী করে? রায় লিখে দিয়েছিলেন।’ মমতা জানান, যাঁদের চাকরি হারিয়েছে, তাঁদের পরিবারের একজনের কিছু হলে তোমার বাড়ির সামনে এসে বিচার চাইবে।

এমনকি, চাকরিপ্রার্থীদের অর্থ ফেরতের বিষয়টি নিয়েও সরব হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, যাঁরা চাকরি করছিলেন, তাঁরা এতদিন শ্রম দিয়েছিলেন। তাহলে শ্রমের বদলে যে টাকা উপার্জন করেছিলেন সেই টাকা তাঁরা ফেরত দেবেন কেন?

বৃহস্পতিবার তমলুকের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্যের সমর্থনে একটি সভা উপস্থিত থেকেই ফের এই রায় নিয়ে সরব হন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। এই রায়ের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই যেমন চলছে, তেমন চলবে। তবে, তমলুকের প্রার্থী দেবাংশুকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
নির্দেশ দেন, যাঁদের চাকরি হারিয়েছে, প্রচারে তাঁদের দুঃখ-দুর্দশার কথা মানুষের সামনে তুলে ধরতে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here