সৃজিতা শীল মালদা

লোকসভানির্বাচনের দিন ঘোষণার আগেই রাজ্যের চার জায়গায় সভা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচন ঘোষণার পরে কোচবিহার এবং জলপাইগুড়িতে দু’টি সভা হয়েছে তাঁর। তার পর বালুরঘাট কেন্দ্রে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের হয়েও সভা করে গিয়েছেন তিনি।  রায়গঞ্জেও সভা করেছেন। ভোট ঘোষণা হওয়ার পর রাজ্যে এই নিয়ে চতুর্থ সফর মোদীর।

দার্জিলিং, রায়গঞ্জ এবং বালুরঘাট আসনে ভোট চলছে শুক্রবার। সেই সময়ে রাজ্যে প্রচারে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এদিন পুরাতন মালদহে সভা করলেন তিনি। মালদহ উত্তরে বিজেপির প্রার্থী খগেন মুর্মু। মালদহ দক্ষিণে বিজেপির প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী। তাঁদের হয়ে শুক্রবার সভা করলেন মোদী।

এদিন ভোট প্রচারে এসে ফের তৃণমূল কংগ্রেসকে নিশানা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মা-মাটি-মানুষের লড়াই করা তৃণমূল সব থেকে বিশ্বাসঘাতকতা রাজ্যের মহিলাদের সঙ্গে করেছে। ভোটের আবেগকে হাতিয়ার করে বলেন, আজ আপনাদের উৎসাহ দেখে মনে হচ্ছে আমি আগের জন্মে বাংলাতেই জন্মেছিলাম। আর পরের জন্মে বাংলাতেই জন্মাতে চাই। শুক্রবার মালদহ উত্তর কেন্দ্রে এক বিরাট জনসভায় তিনি সাম্প্রতিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ নিয়ে শূলে বেঁধেন তৃণমূল কংগ্রেস সরকারকে। এছাড়াও বিভিন্ন দুর্নীতির কারিগর হিসেবে তৃণমূলকে কাঠগড়ায় দাঁড় করান মোদী।

এই বাংলা রবীন্দ্রনাথ সহ বিভিন্ন মনীষীর জন্মভূমি এই বলে মোদী বলেন, এই রাজ্যকে একসময় সাংস্কৃতিক, শিক্ষার পীঠস্থান বলে মনে করা হতো। কিন্তু আজ তৃণমূল সমাজের সর্বস্তরে দুর্নীতি ছেয়ে রেখেছে। লোকসভা ভোটের দ্বিতীয় দফা চলাকালীনই প্রচারে এসে প্রধানমন্ত্রী বাংলার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার কত টাকা দিয়েছে তা উল্লেখ করেন। একইসঙ্গে বলেন, কিন্তু সেই টাকা খেয়ে ফেলেছে তৃণমূলের তোলাবাজরা।

মোদী বলেন, ‘‘বাংলায় ৫০ লক্ষেরও বেশি কৃষকদের জন্য আট হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। কিন্তু তৃণমূল সরকার সেই টাকা কৃষকদের হাতে পৌঁছাতে দিচ্ছে না। তৃণমূলের নেতারা প্রকল্পের টাকা নিয়ে নেয়। কেন্দ্রের সমস্ত প্রকল্প ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আয়ুষ্মান প্রকল্পকেও আটকে দিয়েছে। মালদহের আমচাষিদের জন্য অনেক পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কিন্তু তৃণমূল সেখানেও কাটমানি চাইবে।’’

মালদহ উত্তর ও দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের ভোটপ্রচার একই মঞ্চ থেকে সারেন মোদী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম না করে তিনি আরও বলেন, তৃণমূলের শাসনে বাংলায় শুধু একটাই কাজ হয়েছে, সেটা হল হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি। জয় মা কালী ও জয় মা দুর্গা শরণ করে এদিন ভাষণ শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, তৃণমূল যে দুর্নীতি করেছে, তার মাশুল চোকাতে হচ্ছে বাংলার মানুষকে।


উপর থেকে দেখে মনে হচ্ছে কংগ্রেস এবং তৃণমূল পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, কিন্তু ওদের উদ্দেশ্য এক। তা হল মুসলিম তোষণ। কংগ্রেস এবং তৃণমূলের নেতারা বলে বেড়াচ্ছেন তাঁরা ক্ষমতায় এলে সিএএ বাতিল করে দেবেন। কিন্তু, তাঁরা জানেন না যে, সিএএ একটা আইন, তা বাতিল করা যায় না। তৃণমূল অনবরত মিথ্যা বলে চলেছে।

দেশবাসীর উদ্দেশে ভোট দেওয়ার বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে বিরোধী তৃণমূল এবং কংগ্রেসকে কটাক্ষ করলেন তিনি। মোদী বলেন, ‘‘বিরোধীরা প্রথম দফার ভোটেই ধ্বস্ত হয়ে গিয়েছে। তৃণমূলের শাসনে শুধু দুর্নীতি হয়। সব ধরনের  দুর্নীতি হয়। এরা উন্নয়নকে আটকে রেখেছে। তৃণমূল দুর্নীতি করে আর মানুষকে ভুগতে হয়। বাংলার কাট কমিশন ছাড়া কিছু হয় না। কৃষকদেরও ছাড়ে না এরা।’’

মোদী বলেন, ‘‘তৃণমূল যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এদের জন্য শিক্ষা ক্ষেত্রে এমন দুর্নীতি হয়েছে যে, ২৬ হাজার পরিবারের সুখ কেড়ে নিয়েছে। রুজিরুটি চলে গিয়েছে। যুব সমাজের উন্নতির সমস্ত পথ বন্ধ করে দিয়েছে তৃণমূল।’’ একই সঙ্গে বিজেপি সরকারের কাজের খতিয়ানও দিলেন প্রধানমন্ত্রী।

মোদী বলেন, ‘‘বাংলায় ৫০ লক্ষেরও বেশি কৃষকদের জন্য আট হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। কিন্তু তৃণমূল সরকার সেই টাকা কৃষকদের হাতে পৌঁছাতে দিচ্ছে না। তৃণমূলের নেতারা প্রকল্পের টাকা নিয়ে নেয়। কেন্দ্রের সমস্ত প্রকল্প ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আয়ুষ্মান প্রকল্পকেও আটকে দিয়েছে। মালদহের আমচাষিদের জন্য অনেক পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কিন্তু তৃণমূল সেখানেও কাটমানি চাইবে।’’

মোদী বলেন, ‘‘সন্দেশখালি মহিলাদের উপর নির্যাতন হয়েছে। মালদহেও মহিলাদের উপর অত্যাচার হয়েছে। কিন্তু তৃণমূল সরকার অপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করে। মহিলাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে তৃণমূল।’’

কংগ্রেস এবং তৃণমূলের জোট রয়েছে। তুষ্টিকরণের জন্য এই দুই দল যা খুশি করতে পারে। মালদহে মন্তব্য করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তিনি আরও বলেন, ‘‘তুষ্টিকরণের জন্য তৃণমূল এবং কংগ্রেস সিএএ বিরোধিতা করছে।’’

কংগ্রেস পুরো দেশে মহিলাদের মঙ্গলসূত্র এবং আদিবাসীদের গয়নার হিসাব করবে। মালদহে দাবি মোদীর। তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেস একটা এক্সরে মেশিন নিয়ে এসেছে। মানুষের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে নেবে। সেই সম্পত্তি নিজেদের ভোটব্যাঙ্কগুলিকে দেবে। আপনাদের কষ্টার্জিত টাকা অন্যদের হাতে চলে যাবে। তৃণমূল কিন্তু এর বিপক্ষে কোনও কথা বলছে না। সমর্থন করছে। তুষ্ঠীকরণের প্রতিযোগিতা চলছে ওদের মধ্যে। তৃণমূল বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে আসছে।’’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here