দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দিনকয়েক আগেই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গাড়িতে রোড শো করে গিয়েছেন যে পথে, সেই পথেই পায়ে হাঁটলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রায় চার কিলোমিটার পথ হেঁটে এসে জামবুনিতে সভা করলেন মমতা। আর পুরোটাই তিনি মুড়ে রইলেন মানুষের স্রোতে। রাজনৈতিক মহলের মতে, বিজেপির বঙ্গ অভিযানের যে স্রোত তাতে তৃণমূলের একমাত্র জবাব মমতাই।

আর অমর্ত্য সেনের প্রতীচি কাণ্ডে যেভাবে মমতা শুরু থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন, তাতে বোলপুরে এদিনের সভা থেকে যে সেই সুর তিনি সপ্তমে চড়াবেন তা আশা করাই গিয়েছিল। বাস্তবে হলও তাই। তিনি বললেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি কু কথায় অকথায় বিশ্বভারতী শান্তিনিকেতনকে আক্রমণ করা হচ্ছে। নতুন করে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখানোর দরকার নেই। সোনার বাংলার স্রষ্টা রবীন্দ্রনাথই। কিন্তু এখন বিশ্বভারতীতে ঘৃণ্য রাজনীতির আমদানি করা হচ্ছে। তাই প্রতিবাদের ভাষাকে জোরদার করতেই এই বোলপুরের মাটিতে এসেছি।’

একই সঙ্গে অমিত শাহকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘বাংলায় এসে শুধু বিবেকানন্দের গলায় মালা দিলে হবে না। সব জানতে হবে। বেলুড় মঠ জানতে হবে, বক্রেশ্বর জানতে হবে, দক্ষিণেশ্বর জানতে হবে, রামকৃষ্ণ জানতে হবে। হিন্দু ধর্ম আমাদের শেখাতে হবে না। আপনারা মনে রাখবেন, বাংলার মানুষ হিন্দু ধর্ম পালন করতে জানে। আপনাদের নতুন আমদানি করা দাঙ্গা ধর্মের কোনও প্রয়োজন নেই বাংলার।’

একইসঙ্গে শুভেন্দুর নাম না করেও তিনি বলেন, ‘টাকা দিয়ে কয়েকটা এমএলএ কিনে নেওয়া যায়। তাও আবার পচা-ধসা। কিন্তু টাকা দিয়ে তৃণমূলকে কেনা যায় না। আমার একটাই পরিবার, মানুষের পরিবার, আর কেউ নেই। তাই ওরা এখন টাকা ছড়াবে। টাকা দিলে গরিব মানুষ নিয়ে নিন, ভোটে ওদের বিদায় দিন। গ্রামে বহিরাগত দেখলে, পুলিশে খবর দিন। ভো কাট্টা করে বিরোধীদের উড়িয়ে দিন। ২১ আমাদের গর্ব, ২১ আমাদের পথ দেখাবে।’

মুখ্যমন্ত্রীর সভা ও রোড শো ঘিরে সকাল থেকেই বোলপুরের রাস্তায় জমায়েত শুরু করেন তৃণমূল কর্মীরা। রীতিমতো জনজোয়ারে ভাসেন মমতা। রাস্তার দুপাশে সাড় দিয়ে দাঁড়িয়ে অগুনতি মানুষ। শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনিতে স্বাগত জানানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে। জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দাবি, শুধু বীরভূম থেকেই তিন লক্ষ লোক এসেছে মিছিল-সভায়।

কেন তিনি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বহিরাগত মনে করেন, সোমবার বোলপুরে তার ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি এই বোলপুরে এসেই অমিত শাহ প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বা রাজীব গান্ধী যখন বিশ্বভারতীতে আসতেন, তখন কি তাঁরা বহিরাগত ছিলেন?’ সেই বহিরাগত তত্ত্বের ব্যাখ্যা দিয়েছেন মমতা।

তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের লোককে বহিরাগত বলি না। বাইরের লোক অর্থাৎ অন্য রাজ্যের মানুষ এ রাজ্যে আসতেই পারেন। এতে কোনও অসুবিধা নেই। আমিও অন্য রাজ্যে যাই।’ এর পরেই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নাম না-করে মমতার অভিযোগ, ‘ওরা একটা মিশন নিয়ে যে সংস্কৃতিটা বাংলায় আমদানি করতে চাইছে, তা দাঙ্গার সংস্কৃতি। ওরা চায়, বাংলার সংস্কৃতির মেরুদণ্ডকে ভেঙে ইতিহাসটাকে ভুলিয়ে দাও। এই সংস্কৃতি আমাদের বিরোধী। ওরা যে তত্ত্ব আমদানি করছে, সেটাই বহিরাগত চিন্তাধারা। আমরা ভারতীয় সংস্কৃতিকে সম্মান করি। কিন্তু ওরা যে সংস্কৃতিটা এখানে আনতে চাইছে, সেটা দেশের এবং বাংলার মানুষের পক্ষে ক্ষতিকারক।’

বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীরও নাম করেননি মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু বিশ্বভারতীর বর্তমান প্রশাসকদের তিনি বিঁধেছেন ‘বহিরাগত’ বলেই। তাঁর কটাক্ষ, ‘বিশ্বভারতী সম্পূর্ণ দখল করেছে বহিরাগতরা। দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় দখল করে ওরা যেমন ওদের সংস্কৃতি কায়েম করতে চাইছে, ঠিক তেমনটা চাইছে বিশ্বভারতীতেও। এরা সম্পূর্ণ রূপে বহিরাগত।’

বোলপুরে মমতার মঞ্চে অনুব্রতকে প্রায় দেখা গেল না,এমন কি লাইভ ফ্রেমেও!

বোলপুরে তৃণমূলের জনসভা হচ্ছে। রাজনৈতিক সভা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই মঞ্চে বোলপুরের সাংসদ অসিত মাল রয়েছেন, বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায় রয়েছেন, মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহাও রয়েছেন। কিন্তু জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল নেই। বিস্ময় জাগবে না!
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বক্তৃতা দিয়েছেন, তাঁর ফেসবুক পেজ থেকে তা লাইভ হয়েছে। কিন্তু সেই ফ্রেমেও দেখা যায়নি কেষ্ট মণ্ডলকে। শুধু বক্তৃতার একেবারে শেষ দিকে এসে, যখন দিদি ‘আমরা কারা তৃণমূল’ স্লোগান তোলেন, সেই সময়ে একবার তাঁর নাম করেন। মঞ্চের সামনের দিকে তাকিয়ে বলেন, “কেষ্ট, চাঁদু, আশিসদা থেকে শুরু করে, অসিত দা থেকে শুরু করে, শতাব্দী থেকে শুরু করে, ধামসা মাদল থেকে শুরু করে…”।


শুধু কি তাই! এদিন রোড শো-তে দিদি যখন হেঁটেছেন। পাশে নজরে পড়েছে শতাব্দীকে। কিন্তু তখনও অনুব্রতকে তাঁর পাশে দেখা যায়নি। অনেকে ভেবেছিলেন, অনুব্রতবাবুর ভারী শরীর। দিদি দ্রুত পায়ে হাঁটেন হন হন করে। পাল্লা দিতে পারবেন না বলেই পাশে ছিলেন না। তবে মঞ্চের ছবি দেখে সন্দেহ তৈরি হয়েছে অনেকেরই মনে। ব্যাপারটা কী!

বোলপুরের সভা শেষ হয়েছে। কর্মী, সমর্থকরা বাড়ি ফিরছেন। অনুব্রতবাবু বিকেল চারটেতেও সে সব নিয়ে ব্যস্ত। তাঁর প্রতিক্রিয়া জানা গেলে প্রতিবেদনে আপডেট করা হবে।


তবে এ ব্যাপারে বিরোধীরা টিপ্পনি কাটতে ছাড়ছেন না। বিজেপির মুখপাত্র সায়ন্তন বসু বলেন, “তাই নাকি! এ বাবা! রবীন্দ্রনাথের ভাবধারা, তাঁর দর্শন নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে, আর এ ব্যাপারে বিদগ্ধ মানুষটিই ছিলেন না!” তাঁর কথায়, চড়াম, চড়াম ঢাক, শুটিয়ে লাল করে দেওয়ার মতো সাধু ভাষা বলে যাঁরা রাজনীতি করেন, তাঁদের ইচ্ছা করেই নিশ্চয়ই এদিন শো কেসে রাখা হয়নি। নইলে ইমেজ খারাপ হয়ে যাবে তো!


এমনিতে বোলপুরে এদিন তৃণমূলের রোড শো থেকে শুরু করে সভার আয়োজনের নেপথ্য কারিগর অনুব্রতই ছিলেন তা নিয়ে সন্দেহ নেই। আগে তিনি বলছিলেন ১ লক্ষ লোকের মিছিল হবে। মঙ্গলবার দুপুরে দাবি করেছেন, ৩ লক্ষ লোক হয়েছে। সেই লোকের মাঝে কেষ্টবাবু নিজেই হারিয়ে যাওয়াতেই প্রশ্ন উঠেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here