দেশের সময়:রাজ্যের সামগ্রিক করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে শুক্রবারই একগুচ্ছ বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল রাজ্য সরকার। নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রাজ্যে বড় কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যেমন বিয়ে, অন্নপ্রাশন,শ্রাদ্ধানুষ্ঠান জলসা ইত্যাদি বন্ধ রাখা হবে। শনিবার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সংক্রান্ত নতুন একটি নির্দেশিকা জারি করল রাজ্য সরকার। নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বিয়েবাড়ির ক্ষেত্রে সর্বাধিক ৫০ জনকে আমন্ত্রণ জানানো যাবে। শুধু বিয়েবাড়ি নয়, অন্যান্য পারিবারিক অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য থাকবে। বিয়েবাড়়িতে করোনা সংক্রান্ত বিধি মেনে চলা যেমন মাস্ক পরা, স্যানিটাইজারের ব্যাবহার এবং সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে চলা বাধ্যতামূলক।

রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শনিবার নতুন নির্দেশিকায় ছাড় দেওয়া হয়েছে বেশকিছু বিষয়কে। যদিও বাজার খোলা-বন্ধের ব্যাপারে যে নির্দেশিকা শুক্রবার জারি করা হয়েছিল, তা নিয়ে ব্যবসায়ীদের একাংশ অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

শুক্রবারে রাজ্যের মুখ্যসচিব এক নির্দেশিকা জারি করে জানান, আপাতত রাজ্যের সর্বত্র সকাল ৭ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত বাজার, হাট খোলা থাকবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে তিনটে থেকে পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকবে। মুদি দোকান এবং ওষুধের দোকানের মত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনি কে এই নির্দেশিকার বাইরে রাখা হয়েছিল।

শনিবার রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নতুন আরেকটি নির্দেশিকা জারি করে বলা হয়েছে, মুদি দোকান, ওষুধের দোকানের পাশাপাশি মিষ্টির দোকান, মাংসের দোকান, মোবাইল রিচার্জের দোকান বন্ধের বাইরে থাকছে অর্থাৎ এই দোকানগুলি খোলা থাকবে।

এর সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে যে, বিয়ে বাড়ি বা এইরকম সামাজিক অনুষ্ঠানে ৫০ জনের বেশি লোক একত্রিত হতে পারবে না। সেখানেও মাস্ক এবং স্যানিটাইজার ব্যবহারের পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে চলতে হবে। যদিও এই নির্দেশিকার বাস্তব প্রতিফলন আদৌ সম্ভব কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

এ ব্যাপারে যদি নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়, তা দেখার দায়িত্ব কার তা নিয়েও চিন্তায় সাধারণ মানুষ। শুক্রবারের নির্দেশিকা অনুযায়ী শপিং মল, সিনেমা হল, সুইমিংপুল, বিউটি পার্লার ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলি আপাতত বন্ধ থাকবে।

এদিকে, রাজ্য সরকারের এই নির্দেশিকা প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের একাংশের মতামত, সকালে দোকান খোলার যে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে তা একেবারেই যুক্তিসঙ্গত নয়। কারণ, দোকান খুলে গুছিয়ে উঠতে উঠতেই দোকান বন্ধের সময় চলে আসছে। এর পাশাপাশি বনগাঁর ব্যবসায়ীদের একাংশের বক্তব্য, রাজ্য সরকারের এই নির্দেশিকা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের কাছে লিখিত আকারে কিছুই দেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র পুলিশ এসে মুখে সেই নির্দেশিকার কথা বলে যাচ্ছে। এতে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। অবিলম্বে এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

প্রসঙ্গত, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বড় পদক্ষেপ নেয় রাজ্য সরকার। শুক্রবার রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের তরফে একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়। এই নির্দেশিকা অনুযায়ী, এদিন থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য রাজ্যের সমস্ত শপিং মল, শপিং কমপ্লেক্স, বিউটি পার্লার, সিনেমা হল, রেস্তোরাঁ, বার, স্পোর্টস কমপ্লেক্স, জিম,স্পা, সুইমিং পুল বন্ধ থাকবে।

রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার নবান্নে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী। যা রাজ্য সরকারকে উদ্বেগে রেখেছে। কলকাতায় তিন হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। এই পরিস্থিতি আঁচ করে হাসপাতালের বেড বাড়ানোর পাশাপাশি সম্প্রতি সেফ হোমের পরিকাঠামো বাড়াতে আরও তৎপর হয় রাজ্য প্রশাসন। রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বড় কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তিনি, এমনই মনে করছিল অভিজ্ঞ মহল। কিন্তু নির্দেশিকায় অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিয়ে বাড়ি বন্ধ রাখার নির্দেশিকায় মাথায় হাত পড়েছিল অনেক বহু পাত্র-পাত্রী এবং তাঁদের পরিবারের মাথায়। করোনা সতর্কবিধি মেনে পারিবারিক অনুষ্ঠানে ছাড় দেওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে অনেকেই।

অন্যদিকে নবান্ন জানিয়েছিল, শর্তসাপেক্ষে খোলা থাকবে বাজার। সকাল ৭টা থেকে ১০টা এবং বিকেল ৩টে থেকে ৫টা পর্যন্ত খোলা যাবে দোকান। শনিবার বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়, ষুধের দোকান, ওষুধের সরঞ্জাম কেনার দোকান, মুদি দোকান, মাংসের দোকান, যানবাহন চলাচল, বিদ্যুৎ, টেলিকম ইত্যাদি এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে না। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে চলা বাধ্যতামূলক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here