দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর নাম ও পরিচয় সামনে আনলেই কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সোশ্যাল মিডিয়া বা অন্য কোনও প্ল্যাটফর্মে সংক্রামিতের পরিচয় ফাঁস করলেই কড়া আইনি ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। বৃহস্পতিবার এমনই নির্দেশিকা জারি করা হল পুণের প্রশাসনের তরফে।

দেশজুড়েই ছড়াচ্ছে করোনাভাইরাসের আতঙ্ক। সরকারি সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবারের হিসেবে ভারতে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭৩ জন। সংক্রামিত রোগীরা ভর্তি দেশের নানা রাজ্যের আইসোলেশন ওয়ার্ডে। করোনা আক্রান্তদের নাম ও পরিচয় গোপন রেখেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ডিভিশনাল কমিশনার দীপক মাহিসেকর জানিয়েছেন, কোনও ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর পরিচয় সামনে আনা দণ্ডণীয় অপরাধ। ফেসবুক, টুইটার বা যে কোনও সোশ্যাল মিডিয়ায় আক্রান্তদের পরিচয় দিয়ে পোস্ট করতে দেখা গেলে সেই ব্যক্তি বা সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণকে মহামারী ঘোষণা করল হরিয়ানা সরকার। সে রাজ্যে ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ জন। রাজ্য স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে খবর, সংক্রামিতরা সকলেই বিদেশি পর্যটক। তবে তাঁদের সংস্পর্শ থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রোগীদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য তৈরি রাখা হয়েছে ২৭০টি আইসোলেশন ওয়ার্ড।

ডিভিশনাল কমিশনার বলেছেন, ‘‘সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে নজরদারি চালানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সাইবার সেলকে। করোনাভাইরাস নিয়ে অযথা আতঙ্ক ছড়াতেও নিষেধ করা হয়েছে। কোনও রোগীর নাম ও পরিচয় সামনে আনলে এবং সেই প্রসঙ্গে গুজব ছড়ালে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
করোনার সংক্রমণকে প্যানডেমিক অর্থাৎ বিশ্বজোড়া মহামারী ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। চিন থেকে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে পড়েছে বিশ্বের একশোটিরও বেশি দেশে। ইরান, ইতালিতে মহামারী করোনাভাইরাস। মৃত্যু হচ্ছে শয়ে শয়ে মানুষের। ভারতেও ছড়িয়েছে ভাইরাসের আতঙ্ক।

দিল্লি, রাজস্থান, কেরল, মহারাষ্ট্র, তেলঙ্গানা, হরিয়ানায় জারি হয়েছে চূড়ান্ত সতর্কতা। কোনও কোনও রাজ্যে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে স্কুল-কলেজ, চেকপোস্টগুলিতে চলছে কড়া নজরদারি। রাজ্যের সীমান্ত এলাকাগুলিতে স্ক্রিনিং চালানোর জন্য পাঠানো হয়েছে স্পেশাল টিমকে।
পুণের প্রশাসনিক কর্তারা বলছেন, কোনও রোগীর মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়লে সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হচ্ছে। এই রোগীর নাম গোপন রাখা হচ্ছে। যার কারণ, ভাইরাসের আতঙ্ক এতটাই ছড়িয়েছে যে সংক্রামিতের পরিচয় সামনে চলে এলে তাঁর পরিবারের লোকজন এলাকায় একঘরে হয়ে যেতে পারেন। রাস্তাঘাটে মানসিক হেনস্থার শিকার হতে পারেন।

অনেক সময়েই দেখা গেছে সংক্রমণ সন্দেহে রোগীদের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। পরে দেখা গেছে তাঁরা ভাইরাস পজিটিভ নন। সেক্ষেত্রেও ওই ব্যক্তিদের পরিচয় সামনে চলে এলে পরবর্তীকালে তাঁদের সমস্যায় পড়তে হতে পারে। মহারাষ্ট্রে এখনও অবধি করোনা আক্রান্ত ১১ জন, পুণেতে আটজনের শরীরে মিলেছে ভাইরাস। সংক্রমণ সন্দেহে আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি আরও অনেকে।

ডিভিশনাল কমিশনার মাহিসেকর জানিয়েছেন, সম্প্রতি পুণের এক রোগীর মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। তাঁর পরিচয় সামনে আনে কোনও একটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। যার কারণে রীতিমতো ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সেই ব্যক্তির পরিবারের লোকজনকে।

সামাজিকভাবে পুরোপুরি বয়কট করা হয়েছে সেই পরিবারকে। এমন অবস্থায় যাতে বাকিদের পড়তে না হয়, তার জন্যই এই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


হরিয়ানার স্বাস্থ্যমন্ত্রী অনীল ভিজ বলেছেন, ভাইরাসের সংক্রমণ সন্দেহে রাজ্যের ৪৪ জনের রক্ত ও দেহরসের নমুনা পাঠানো হয়েছিল ল্যাবোরেটরিতে। তবে ৩৮ জনের শরীরেই ভাইরাসের খোঁজ মেলেনি। কিন্তু সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন বাকি ছ’জন। পরীক্ষার রিপোর্ট এলেই সংক্রমণ ছড়িয়েছে কিনা বোঝা যাবে।

হরিয়ানার স্বাস্থ্যমন্ত্রী অনীল ভিজ বলেছেন, ভাইরাসের সংক্রমণ সন্দেহে রাজ্যের ৪৪ জনের রক্ত ও দেহরসের নমুনা পাঠানো হয়েছিল ল্যাবোরেটরিতে। তবে ৩৮ জনের শরীরেই ভাইরাসের খোঁজ মেলেনি। কিন্তু সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন বাকি ছ’জন। পরীক্ষার রিপোর্ট এলেই সংক্রমণ ছড়িয়েছে কিনা বোঝা যাবে।

হরিয়ানার মানেসরের কাছে চারশো বেডের বিশাল আইসোলেশন ক্যাম্প আগেই তৈরি করেছিল সেনাবাহিনী। আইটিবির সেনা ক্যাম্পেও রয়েছে আইসোলেশন ইউনিট। উহান ও মলদ্বীপ ফেরত মোট ৬৪৭ জনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল সেখানে। তাঁদের মধ্যে আড়াইশো জনকে ইতিমধ্যেই বাড়ি ফিরে যেতে দেওয়া হয়েছে।

রাজ্য স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, হাসপাতাল-নার্সিংহোমগুলির উপর থেকে চাপ কমাতে রাজ্যজুড়ে আরও অনেক আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করা হচ্ছে।
সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে ১২০৬টি বেডের মোট ২৭০টি আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করার কাজ চলছে বলে জানা গিয়েছে।
ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছুঁয়েছে ৭৩। দিল্লি, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, কেরলে জারি হয়েছে চূড়ান্ত সতর্কতা। দেশের ২১টি বিমানবন্দরে চলছে বিশেষ থার্মাল স্ক্রিনিং। নজরদারিতে সমুদ্রবন্দরগুলিও। এখনও অবধি স্ক্রিনিং করা হয়েছে মোট ১০ লক্ষ ৫৭ হাজার ৫০৬ জনকে। বিদেশে ভ্রমণ ও বিদেশি পর্যটকদের দেশে আসার ব্যাপারে বিশেষ ট্রাভেল অ্যাডভাইজারি জারি করেছে কেন্দ্র।

নির্দেশিকায় বলা হয়েছে অপ্রোয়জনে বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ থাকবে। চিন, ইটালি, ইরান, কোরিয়া, জাপান, ফ্রান্স, স্পেন ও জার্মানিতে যাওয়া এই মুহূর্তে নিষিদ্ধ।
ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করতে নিষেধ করা হয়েছে। সংক্রামিত রোগীর নাম ও পরিচয় সামনে আনলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নির্দেশিকা জারি করেছে পুণে প্রশাসন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here