দেশের সময় : ১৫ এপ্রিল ও ১৬ এপ্রিল, ২০২৩ আয়না ঘর নাট্যমঞ্চে দমদমের ঐতিহ্যবাহী নাট্যসংস্থা রবীন্দ্রনগর নাট্যায়ুধ আয়োজন করেছিল ৯ম বর্ষ শম্ভু মিত্র ও বিজন ভট্টাচার্য স্মৃতি নাট্য উৎসব-এর দ্বিতীয় পর্ব। ইতিমধ্যে প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২৪, ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি অজিতেশ মঞ্চে এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ আয়না ঘর নাট্যমঞ্চে। কিংবদন্তী দুই প্রয়াত নাট্যব্যক্তিত্ব শম্ভু মিত্র ও বিজন ভট্টাচার্যের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে এই উৎসবের আয়োজন করে চলেছে সংস্থা।

এবার বাংলা ১৪৩০ নতুন বর্ষকে নাটকের মাধ্যমে বরণ করার লক্ষ নিয়ে এই নাট্যপার্বণ অনুষ্ঠিত হয়। এবারের পর্বে পরিবেশিত হয় স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছয়টি নাটক এবং নাট্য বিষয়ক সেমিনার। ১৫ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের দিনে প্রথমে প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে উৎসবের শুভ সূচনা হয়। উদ্বোধনী মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সৌমিত্র কুমার চ্যাটার্জী, অসীম ভট্টাচার্য ও বরিষ্ট অভিনেতা সুনীল কোলে মহাশয়। সংস্থার রীতি অনুযায়ী উপস্থিত গুণীজনদের সম্মান জানানো হয়। তাঁরা তাঁদের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে রবীন্দ্রনগর নাট্যায়ুধের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান।

করোনাকালীন সময়ে ড. দানী কর্মকারের ভাবনাপ্রসূত সর্বভারতীয় নাট্যসংস্থার মিলিত যৌথ নাট্যমঞ্চ ‘অল ইন্ডিয়া থিয়েটার এ্যাসোসিয়েশন’(এআইটিএ) প্রতিষ্ঠা ও পরবর্তীকালে আয়না ঘর নাট্যমঞ্চ তৈরির প্রসঙ্গে তুলে বক্তব্য রাখেন অসীমবাবু। সৌমিত্রবাবু তার বক্তব্যে থিয়েটার চর্চার পাশাপাশি নাট্যপত্রিকার প্রকাশের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। সুনীলবাবু থিয়েটারের প্রতিবাদী সত্তাকে তুলে ধরেন। নাট্য প্রযোজনা, উৎসব, কর্মশালা ও সেমিনারের পাশাপাশি নিয়মিত আন্তর্জাতিক দ্বিভাষিক নাট্য পত্রিকা ‘থিয়েটার দুনিয়া’ প্রকাশ করে চলেছে রবীন্দ্রনগর নাট্যায়ুধ। পরে ‘থিয়েটার দুনিয়া’ পত্রিকার বর্ষ ১০, সংখ্যা ৯, ‘মহিলা নাট্য পরিচালক’ বিষয়ক বিশেষ নাট্যসংখ্যার মোড়ক উন্মোচন করেন সৌমিত্র কুমার চ্যাটার্জী।

বৈশাখ মাসের সূচনা লগ্নকে মনে রেখে পরিবেশিত হয় ‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ’ রবীন্দ্রনৃত্য। এরপরই পরিবেশিত হয় আড়িয়াদহ নাট্যপীঠের মুন্সী প্রেমচন্দ্রের গল্প অবলম্বনে নাটক ‘বড়ে ভাই সাহাব’, নাট্যকথা গ্রুপের নাটক ‘ভাসান যাত্রা’ এবং রবীন্দ্রনগর নাট্যায়ুধের নাটক ‘মেঘের কোলে বুনো হাঁস’। দ্বিতীয় দিনের প্রথমেই ছিল নাট্য বিষয়ক সেমিনার। চল্লিশের দশকে পশ্চিমবঙ্গে গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনের যে ঢেউ উঠেছিল তা এই বছর ৭৫ বর্ষে পদার্পণ করেছে। ফলে এবারের সেমিনারের বিষয় ছিল ‘গ্রুপ থিয়েটারের ৭৫ বর্ষ’।

এই আলোচনাসভায় বক্তা হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বরিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব গৌতম মুখার্জী। ‘নবান্ন’ নাটক মঞ্চায়নের পরবর্তীকালীন গ্রুপ থিয়েটারে শম্ভু মিত্র, উৎপল দত্ত প্রমুখের থিয়েটার আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে বর্তমান সময়ের ব্রাত্য বসুর নাট্যচর্চার এক দীর্ঘ ধারাবাহিকতার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন তিনি। আলোচনার শেষে মঞ্চস্থ হয় দমদম শিল্পাঙ্গনের নাটক ‘গাঙচিল’, শৌভিক সাংস্কৃতিক চক্রের নাটক ‘পোকামাকড়ের কুটুম’ এবং রবীন্দ্রনগর নাট্যায়ুধের নাটক ‘অন্তরণ’।

এছাড়া ছিল নাট্যপত্রিকা ও নাট্যগ্রন্থের প্রদর্শনী। সমগ্র উৎসবের ভাবনা ও পরিকল্পনায় ছিলেন সংস্থার কর্ণধার নাট্যনির্দেশক ড. দানী কর্মকার। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, “বছরের প্রথম দিন আমাদের বড়রা বলেন ভালো কিছু করতে, ভালোভাবে থাকতে, যাতে সারা বছর ভালোভাবে কাটে। আমরা বছরের শুরুটা নাট্যযাপনের মধ্যে দিয়েই শুরু করলাম। সর্বক্ষণের নাট্যশিল্পীদের কাছে নাটকই তো সব।” দুইদিন ধরে প্রেক্ষাগৃহ ছিল পূর্ণ।

উপস্থিত দর্শকের হাততালি ও প্রশংসাসূচক আশীর্বাদ নাট্য উদ্যোগকে সাফল্যমণ্ডিত করেছে। সমগ্র অনুষ্ঠানের বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন বর্ণালী কর্মকার, রাজদীপ সাহা ও সীমা কর্মকার। সহায়তায় ছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অধীন পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here