সৃজিতা শীল, কলকাতা:

উত্তর কলকাতার ঠনঠনিয়া কালীমন্দিরের কাছে বিধানসরনীর দুইদিক জুড়ে বড় বড় প্রাসাদের মতো কয়েকটি লালরঙের বাড়ি লাহাবাড়ি নামে প্রসিদ্ধ।সবকটি বাড়িই এক ই পরিবারের ও একই ধাঁচের।ঘুরে ঘুরে পালা করে প্রতিবছর‌ পূজো হয় এইসব বাড়িতে।

কলকাতার পত্তনের আদি লগ্নে প্রায় দুশো বছর আগে হুগলী জেলার চুঁচুড়া থেকে লাহাবংশের এক আদিপুরুষ রাজীবলোচন লাহার তিন পুত্র বাণিজ্যের কারণে কলকাতায় বসতি স্থাপন করেন এবং পরবর্তী কালে তারা বাণিজ্যে ভারতে অন্যতম শীর্ষ স্থান অধিকার করেন। জানা যায় তাঁরা অত্যন্ত প্রগতিশীল চিন্তাধারায় বিশ্বাসী ছিলেন ৷

স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, এই পরিবারের পুরুষেরা অনেকেই মেকি বাবুয়ানিতে‌ অর্থ ব্যয় না করে তা কাজে লাগিয়েছিলেন দেশ গঠনের কাজে। তবে লাহারা শুধু লক্ষ্মীর বরপুত্র ছিলেন না দেবী সরস্বতী র আশীর্বাদ পেয়েছিলেন অকৃপণ ভাবে। দেখুন ভিডিও

উল্লেখ্য এই পরিবারের দূর্গা মূর্তি কিন্তু দশভুজা নন‌ দ্বিভুজা শিবের কোলে সমাসীনা।সঙ্গে সবাহন লক্ষ্মী সরস্বতী কার্তিক গণেশ। প্রকৃতপক্ষে শ্রীমদভাগবতে শিব পার্বতীর এই অন্তরঙ্গ মোহন মূর্তির উল্লেখ পাওয়া যায়। জানা যায় বৈষ্ণব পরিবার বলেই দেবীর এই শান্ত সুন্দর রূপ পূজিত হয়।

এই বাড়ির প্রতিটি কোনে লুকিয়ে রয়েছে বহু ইতিহাস।

২০০ থেকে ২৫০ বছর আগের কথা , একদিন এই পরিবারের কর্তৃ স্বপ্নাদেশ পান যে এক অষ্টাধাতুর এক মুর্তি জঙ্গলে পরে আছে , দেবী সেইখানে একদম ভালো নেই তাই দেবী নির্দেশ দেন তাকে উদ্ধার করার জন্য এবং তাকে যেন নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠা করা হয় ৷
এই বাড়ির কূল দেবী হলেন জয় জয় মা ।

প্রতি বছর প্রতিমা নিরঞ্জনের পর মাটি ধুয়ে সেই কাঠামো সংরক্ষণ করা হয়। পরের বছর নন্দোৎসবের দিন কাঠামো পূজা করে বাড়িতেই শুরু হয় ঠাকুর গড়ার কাজ। একটি‌ ছোট্ট গণেশ মূর্তিরও পূজো হয় সেদিন, পরে তা মূল গণেশের শরীরে ঢুকিয়ে‌ দেওয়া হয়।

অষ্টমীর দিনে ধুনা পোড়নো, প্রতিমা বিসর্জনের প্রথা ও অনেকটাই অভিনব ৷ দোলাতে করে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয় প্রতিমা নিরঞ্জনের জন্য ।

ঠাকুর নিরঞ্জনের জন্য যখন নিয়ে যাওয়া হয় তখন সদর দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় , তারপরে গৃহ কর্তা জিজ্ঞাসা করেন “মা আছেন ভেতরে?” , গৃহিনী উত্তর দেন মা আছেন ঘরে তার পরে দরজা খোলা হয়।

এই পরম্পরা বিশ্বাস অবিশ্বাসে্‌ এই ঐতিহ্যে শারদীয়া উৎসব পূর্ণ হয়ে ওঠে পরমানন্দে, অপেক্ষা থাকে আগামী বছরের।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here