সঙ্গীতা চৌধুরী কলকাতা :

সে কালের এক অভিজাত ও বনেদি স্থান  কলকাতার জোড়াসাঁকো অঞ্চল। এই জোড়াসাঁকোরই একটি বিখ্যাত পুজো হল নরসিংহচন্দ্র দাঁয়ের বাড়ির পুজো। পারিবারিক বন্দুকের ব্যবসা আছে বলে এই পুজো সকলের কাছে ‘ বন্দুকওয়ালা বাড়ি’র পুজো নামে খ্যাত। 

The heritage pujo of North Kolkata, Girish Park Daw bari is in progress . As the soil work is complete idol covered with a ordinary sharee , this is their ritual that idol doesn’t keep nude. Desher Samay Photo/ Subhendu Ghosh.

 পরিবারটির আদি বাস ছিল গন্ধেশ্বরী নদীর পাশে বাঁকুড়ার কোতলপুরে। গন্ধবনিক পরিবারটি পরবর্তীকালে জোড়াসাঁকো অঞ্চলেই বসবাস শুরু করে। ১৮৩৫ সাল থেকে কলকাতায় নরসিংহচন্দ্র দাঁ বন্দুকের ব্যবসা শুরু করেন এবং ১৮৫৯ সালে শুরু করেন দুর্গোৎসব। 

এই পরিবারের উত্তরসূরী কৌশিক দাঁ তাদের পুজোর বিশেষত্বের দিকগুলো তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, ” এই পুজো বাঁকুড়ার কোতলপুরে হয়েছে বলে কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই, ১৮৫৯ সাল থেকেই আমাদের পূর্বপুরুষ নরসিংহচন্দ্র দাঁ জোড়াসাঁকোর বাড়িতে মহাসমারোহে দুর্গাপুজো শুরু করেন। আমরা মা দুর্গাকে বাড়ির মেয়ে হিসেবে মনে করি তাই পুজোর কটা দিন মেয়ে বাড়িতে ফিরে আসার আনন্দে মেতে থাকি।

 একচালা প্রতিমাকে ডাকের সাজে সাজানো হয়। তাছাড়া সোনার গয়নাও থাকে মায়ের সর্বাঙ্গে। রথের দিন কাঠামো পুজো হয়। ঐ দিন মায়ের ডান পায়ের তলার একটি কাঠের টুকরোকে পুজো করে রেখে দেওয়া থাকে, পরে প্রতিমা তৈরির সময় টুকরোটি তাতে দেওয়া হয়।

আমাদের মা দুর্গার মুখের আদল সকলের থেকে আলাদা কারন মুখের ছাঁচটি বহু বছর ধরে রেখে দেওয়া হয়েছে, প্রতি বছর ঐ ছাঁচে ফেলেই মায়ের এক অপরূপ মুখাবয়ব তৈরি হয়। প্রতিপদের দিন থেকেই পুজো শুরু হয়।

সন্ধিপুজোয় এক মণ চালের নৈবেদ্য হয়, যেটা শুধুমাত্র বাড়ির ছেলেরা সাজান। বৈষ্ণবমতে পুজো হয় বলে পুজোর ভোগে ফল, নানারকম মিষ্টি ও লুচি দেওয়া হয়। কোন রকম বলি হয় না। এই বাড়ির বিশেষ রীতি অনুযায়ী আজও সন্ধিপুজোয় গর্জে ওঠে কামান। ১০বোরের এই ছোট্ট কামানটি সে কালে তৈরি করেছিল আমেরিকার ‘ উইনচেষ্টার রিপিটিং আর্মস’ কোম্পানি। তাছাড়া বন্দুক স্যালুট দেওয়া হয়। আমি এই পরিবারের পঞ্চম প্রজন্ম, এখনও আমরা বন্দুকের সেই পুরনো ব্যবসার সঙ্গেই বংশ পরম্পরা জড়িত আছি।

অষ্টমীর আরেকটি বিশেষ নিয়ম হল মায়ের সামনে ধুনো পোড়ানো যেখানে বাড়ির কয়েকজন সধবা মহিলা উপস্থিত থাকেন। নবমীর দিন একটি ব্রাহ্মণ বাচ্চা মেয়েকে কুমারী পুজো করা হয়।বিসর্জনের দিন মাকে বরণ করে সিঁদুর খেলার পর যখন বাড়ি থেকে বার করা হয় তখন কাধে করে সাত পাক ঘুরিয়ে বিদায় জানানোর সময় কনকাঞ্জলি দেওয়া হয়। মেয়েরা শ্বশুরবাড়ি যাবার সময় আমাদের যে রীতি রয়েছে, মায়ের ক্ষেত্রেও সেই নিয়ম পালন করি। এই সময়ও বন্দুকের স্যালুট দেওয়া হয়।”

মায়ের এই অনন্য রূপের সৌন্দর্যের টানেই বহু দর্শনার্থী ভিড় জমান দাঁ বাড়ির ঠাকুর দালানে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here