সৃজিতা শীল, কলকাতা :

উত্তর কলকাতার বহু বনেদি বাড়ির সঙ্গেই রয়েছে বহু ইতিহাস এবং ঐতিহ্য। কলকাতার এক প্রাচীন পরিবার এই ” ঠন্‌ঠনিয়া দত্ত বাড়ি” ৷

১৮৫৫ খ্রীষ্টাব্দে দ্বারিকা নাথ দত্ত এই বাড়িতে দুর্গা পুজোর সূচনা করেন। মজার কথা হল এই বৃহৎ অট্টালিকার দুটি ঠিকানা , ৩ এবং ৪ কর্নওয়ালিশ স্ট্রিট যা বর্তমানে ৩ এবং ৪ বিধান সরনি ।

এই বাড়ির দুর্গৎসবের এক ইতিহাস আছে ৷ বিশাল অট্টালিকার মাঝে আছে চক্ মেলানো শ্বেত পাথরের বহু খিলেনের ঠাকুর দালন ৷ এই বাড়ির কুলদেবতা হল শ্রী শ্রী ৺শ্রীধর জিউ ও লক্ষ্মীমাতা ঠাকুরাণী ৷ এই পরিবার বৈষ্ণব মনোভাবাপন্ন ৷ তাই এখানে মহিষমর্দিনী মূর্তির বদলে মা দুর্গা স-পরিবারে শিব অঙ্কে মাতৃরূপে পূজিত হন৷

প্রতিমার চালচ্চিত্রের কেন্দ্র-শীর্ষে মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গার চিত্র দেখা যায়। সত্য, ত্রেতা, দ্বাপরের অবতারদের পাশাপাশি সহাবস্থান এবং শাক্ত শিব বৈষ্ণব দেবদেবীর মহামিলন মেলা ওই পটচিত্রটি।


শিবদুর্গার পাশাপাশি দীর্ঘকাল লক্ষ্মী নারায়ণ পূজা, হরি পূজা ইত্যাদি পূজাও হয়ে চলেছে। দেখুন ভিডিও

জন্মাষ্টমীতে বাড়িতে প্রতিমা তৈরী হত , covid পরিস্থিতির পর থেকে কুমারটুলি থেকে ঠাকুর তৈরী হয়ে আসে।
দত্ত বাড়ির শিব দুর্গা পূজা প্রকৃতপক্ষে দশ দিনের। মহালয়ায় পিতৃপক্ষের সমাপন ও দেবী পক্ষের সূচনা। দেবীর বোধন বসে প্রতিপদের দিন এবং এই ১০ দিন ষোড়শোপচারে পুজো হয়।

পুজোর একটি বিশেষ অনুষ্ঠান হল মহা অষ্টমীর দিনে ধুনো পোড়ানো। বাড়ির সধবা ও বিধবা মহিলাদের মাথায় বিড়ার উপর জ্বলন্ত মালসা বসিয়ে ধুনো পোড়ানো হয়। তখন তারা এক মনে মাতৃ আরাধনায় নিমগ্ন থাকেন।

শিব দুর্গা পুজোর মূল উপকরন আতপ চাল ও বাটা চিনি যা এই পুজোর বিশেষ নৈবেদ্য।
এই পূজা উপলক্ষে ব্যবস্থা আছে অন্মদান বস্ত্রদান, দরিদ্রনারায়ণ সেবা ইত্যাদি ৷

এই পূজার পাওনাদার, লক্ষ্মীর বরপুত্র পূণ্য প্রাণ দ্বারিকানাথের সুকর্মের ফলশ্রুতি হিসাবে তাঁর উত্তরপুরুষেরা আজও বজায রাখতে পেরেছেন তার ইচ্ছায় ৷বদলে গেছে অনেক কিছু কিন্তু তবুও বদলায়নি বাঙালির আবেগ উন্মাদনা এবং ঐতিহ্য।
ঠনঠনিয়া দত্ত বাড়ির এই শিব দুর্গা পুজো প্রতি বছর সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here