দেশের সময় উত্তর ২৪ পরগনা -অবশেষে গ্রেফতার সন্দেশখালির ‘বেতাজ বাদশা’ শেখ শাহজাহান। বুধবার রাতে মিনাখাঁর বামনপুকুর এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকার জানান, বসিরহাট আদালতে পেশ করা হচ্ছে তাঁকে। একইসঙ্গে তাঁকে পুলিশি হেফাজতে চাওয়া হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন এডিজি দক্ষিণবঙ্গে। শাহজাহানের বিরুদ্ধে ১৪৭, ১৪৮ ও ১৪৯ সহ বিভিন্ন ধারায় মামলা করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।

তবে এদিন সংবাদমাধ্যমের সামনে কোনও প্রশ্নের জবাব দেননি শেখ শাহজাহান। ইতিমধ্যেই একবার আদালত কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। পরে ফের আদালত কক্ষ থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয় শেখ শাহজাহানকে।

১০ দিনের পুলিশ হেফাজতে থাকবেন শাহজাহান। বসিরহাট মহকুমা আদালতে শাহজাহানকে ১৪ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে চায় পুলিশ। আদালত তাঁকে ১০ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়।

সাদা কুর্তা পাজামা ,পায়ে স্নিকার্স পরিহিত এদিন আদালতে হাজির হয়েছেন সন্দেশখালির ‘বাঘ’।

একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি শাহজাহান। শুধু আঙুল নাড়িয়ে তাঁকে কিছু ইঙ্গিত করতে দেখা যায়।

এদিকে শেখ শাহজাহানকে পেশ করা ঘিরে যাতে কোনওরকম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয়, তার জন্য গোটা আদালত চত্বরে মোতায়েন করা হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। পাশাপাশি শাহহাজানের বাড়িতেও প্রচুর পুলিশ ও RAF মোতায়েনও করা হয়েছে। একইসঙ্গে সন্দেশখালির ২৩ জায়াগায় জারি ১৪৪ ধারা।

শাহজাহানের বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ জানাল পুলিশ?

ইডির করা অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয়েছে শাহজাহানকে। সন্দেশখালির “বাঘে”র বিরুদ্ধে কী কী ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে, তাও জানানো হল। পাশাপাশি পুলিশের তরফে যে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করা হয়েছিল, সেই মামলাতেও শোন অ্যারেস্টের আবেদন জানানো হয়েছে।

গ্রেফতার হওয়া রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ডায়েরি থেকেই শেখ শাহজাহানের নাম উঠে আসে। রেশন দুর্নীতির তদন্তে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ৫ জানুয়ারি সন্দেশখালিতে যান ইডির আধিকারিকরা। অভিযোগ, শাহজাহানের নির্দেশেই একদল গ্রামবাসী ইডির আধিকারিকের উপরে হামলা করে। ভাঙচুর করা হয় ইডির গাড়ি। এরপর থেকেই খোঁজা হচ্ছিল শেখ শাহজাহানকে। কিন্তু বিগত ৫৫ দিন ধরে নাগাল মেলেনি তাঁর। গতকাল, ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে মিনাঁখা থেকে গ্রেফতার করা হয় শেখ শাহজাহানকে।

পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে,  ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯, ১৮৬, ৩০৭, ৩৪১, ৩৪২, ৩৫৩, ৩৭৯, ৫০৬, ৩৪১, ৩৫৩, ৩২৩, ৪২৭, ৫০৬, এবং সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি আইনের ৩ নম্বর ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।

যে যে ধারায় গ্রেফতার করা হল শাহাজানকে-
ভারতীয় দণ্ডবিধির
১৪৭ ধারা (অশান্তি ছড়ানো)
১৪৮ ধারা- প্রাণঘাতী অস্ত্র নিয়ে হামলা, অশান্তি ছড়ানো,
১৪৯ ধারা- অবৈধ জমায়েত।
৩০৭ ধারা (পরে যোগ হয়)- খুনের চেষ্টা।
৩৪১ ধারা- বলপূর্বক আটকে রাখা।
৩৪২ ধারা- অবৈধ অনুপ্রবেশ।
৩৫৩ ধারা- সরকারি কর্মীদের কাজে বাধাদান।
৩২৩ ধারা- মারধরের জেরে জখম।
১৮৬ ধারা- সরকারি কর্মীকে সরকারি কাজে বাধাদান।
৩৭৯ ধারা- চুরি।
৪২৭ ধারা- সম্পত্তি নষ্ট।
৫০৬ ধারা- হুমকি।
৩৩৩ ধারা (পরে যোগ হয়)- সরকারি কর্মীকে কাজে বাধাদান ও আক্রমণের জেরে গুরুতর জখম।

৩৪- অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র।
৩২৫ ধারা- মারধরের জেরে গুরুতর জখম।
৩৯৫ ধারা- ডাকাতি করা।
৩৯৭ ধারা- ডাকাতি করতে এসে মারধর করে জখম।
৩২৬ ধারা- অশান্তি সৃষ্টি
৪৪০ ধারা- খুনের বা ব্যাপক মারধর করে জখম করার উদ্দেশ্যে লোক জড়ো করা।
এছাড়া সরকারি সম্পত্তি নষ্টের আইনের অধীনে তিনটি ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

অন্যদিকে এদিনই জেলিয়াখালিতে যাওয়ার কথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর। কলকাতা হাইতোর্টের অনুমতি পেয়েই সেখানে যাচ্ছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে যেতে পারবেন বিধায়ক শংকর ঘোষ। তবে সেখানে যেতে গেলে পুলিশের কাছে লিখিত আবেদন করতে হবে শুভেন্দুকে, এমনটাই নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here