দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ইডি, সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় বাহিনীর রাজনৈতিক ব্যবহারের বিরুদ্ধে ১৪টি রাজনৈতিক দল যখন সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে, তখন তীব্র আক্রমণ করতে ছাড়লেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । সাধারণত নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে এহেন কথা বলেন মোদী। কিন্তু মঙ্গলবার দলের সদর দফতরে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর রাজনৈতিক বক্তৃতায় বলেন, সমস্ত দুর্নীতিবাজ এক মঞ্চে হাজির হয়েছে।

শুধু তৃণমূল কংগ্রেস নয়, গত কয়েক মাসে শিবসেনা, তেলঙ্গনা রাষ্ট্রীয় সমিতি, আরজেডি, কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি সহ কমবেশি প্রায় ১৪টি দলের নেতা, মন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সি ইডি ও সিবিআই। সঙ্গে আয়কর হানাও চলছে। বিরোধীদের সমষ্টিগত অভিযোগ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়েই এই অভিযান শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ আদালতে যৌথ পিটিশন দাখিল করেছে তারা। যা নিয়ে ১৫ এপ্রিল শুনানি হওয়ার কথা।

এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, “আমাদের দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলির ভিত খুব মজবুত। ভারতের গতিকে স্তব্ধ করতে সেই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলিকেই আক্রমণ করা হচ্ছে”। মোদীর কথায়, “এজেন্সি কিছু ব্যবস্থা নিলেই তাদের আক্রমণ করা হচ্ছে। কোনও কোনও পার্টি তো আবার দুর্নীতিবাজ বাঁচাও অভিযানে নেমেছে।”

প্রধানমন্ত্রীর এই খোঁচা নিয়ে পাল্টা জবাব দিয়েছেন বিরোধীরাও। তৃণমূল মুখপাত্র তাপস রায় বলেন, যাঁর আমলে দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলি বিপন্ন, যিনি ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর মতো বিচারব্যবস্থার উপরেও ছরি ঘোরাতে চাইছেন, তিনি কিনা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বাঁচানোর কথা বলছেন!
মোদীকে উদ্দেশে পাল্টা জবাব দিয়েছেন লোকসভায় কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীও। তিনি বলেন, একটা সরকার প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির মাধ্যমে একটা বাণিজ্যিক সংস্থাকে লক্ষ কোটি টাকার মালিক বানিয়ে দিল। গোটা দুনিয়া তা দেখতে পাচ্ছে। আর তিনি কিনা বিরোধীদের লেকচার দিচ্ছেন!

১৯৮৪ সালের শিখ দাঙ্গার পরবর্তী সময়ে বিজেপিকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তিনি বলেন, “দেশ কখনই ১৯৮৪ সালের সেই অন্ধকারময় পর্বটি ভুলতে পারবে না। সেই নির্বাচনে কংগ্রেস ঐতিহাসিক জনমত পেয়েছিল। পরিবেশ ছিল সম্পূর্ণ আবেগপূর্ণ। আমরা সেই তরঙ্গে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা হতাশ হইনি, অন্যকে দোষারোপও করিনি।”

প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেন, কংগ্রেস জমানায় বেআইনি লেনদেন দমন আইনের আওতায় মাত্র ৫ হাজার কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। বিজেপি সরকার ১০ লক্ষ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে। ২০ হাজার আর্থিক অপরাধীকে পাকড়াও করা হয়েছে। গত সাত দশকে এই প্রথম দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে এমন কঠোর পদক্ষেপ করা হয়েছে। তাঁর কথায়, “এরকম করলে কেউ কেউ তো রেগে যাবেই। কিন্তু দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই থামবে না, তা সে যতই মিথ্যা অভিযোগ করুক।”

প্রধানমন্ত্রীর এই খোঁচার জবাবে অধীর চৌধুরী বলেন, আসল বেআইনি লেনদেন প্রধানমন্ত্রী কেন দেখতে পাচ্ছেন না তা নিয়েই বিষ্মিত গোটা দেশ। বিদেশের পত্রপত্রিকাতেও বলা হচ্ছে, ভুয়ো কোম্পানি তৈরি করে তাঁর পছন্দের কোম্পানিতে ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। এই টাকা বেআইনি লেনদেন নয়? তার তদন্ত কী হবে?

এ প্রসঙ্গে রাহুল গান্ধীর মন্তব্যকে স্মরণ করাতে চেয়েছেন অধীর। তিনি বলেন, আদানির অ্যাকাউন্টে ঢোকা ওই ২০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে বিজেপি কিছু বলছে না। কারণ, বিজেপিই আদানি।

মঙ্গলবার (২৮ মার্চ), নয়া দিল্লিতে বিজেপির নবনির্মিত কেন্দ্রীয় কার্যালয় সম্প্রসারিত অংশের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, এই ভবনের সম্প্রসারণ আসলে দলের অগ্রগতির প্রতীক। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ভারতে কয়েকটি মাত্র হাতে গোনা পরিবারবাদী দল পড়ে রয়েছে। তবে, বিজেপিই দেশের একমাত্র দল যাদের সর্বভারতীয় উপস্থিতি রয়েছে।

তিনি বলেন, “দেশে পরিবার-পরিচালিত রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে বিজেপি এখন একমাত্র দল যাদের পূর্ব থেকে পশ্চিমে এবং উত্তর থেকে দক্ষিণে সর্বভারতীয় উপস্থিতি আছে। আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল দুটি লোকসভা আসন দিয়ে। এখন আমাদের ৩০৩টি আসন রয়েছে।” এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদী ছাড়া বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-সহ গেরুয়া শিবিরের অনেক বিশিষ্ট নেতা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী দাবি করেন, বর্তমানে বিজেপি শুধুমাত্র বিশ্বের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলই নয়, বিশ্বের সবথেকে ভবিষ্যতবাদী দলও বটে। আর, এর একমাত্র লক্ষ্য হল একটি আধুনিক এবং উন্নত ভারত গঠন করা। তিনি বলেন, “এই কার্যালয়ের সম্প্রসারণ শুধু একটি ভবনের সম্প্রসারণ নয়, এটি প্রতিটি বিজেপি কর্মীর স্বপ্নের সম্প্রসারণ। আমি দলের কোটি কোটি কর্মীকে প্রণাম করছি। আমি দলের সমস্ত প্রতিষ্ঠাতা সদস্যকেও প্রণাম করছি। বিজেপি একটি ছোট দল ছিল, যার স্বপ্ন ছিল দেশের জন্য। এই ভবনটির সম্প্রসারণ দলের অগ্রগতির প্রতীক।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here