দেশেরসময় ওয়েবডেস্কঃ পথশ্রী-রাস্তাশ্রী প্রকল্পের উদ্বোধন করতে আজ সিঙ্গুরে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷

এদিন সিঙ্গুরে দাঁড়িয়েই এ বার তিনি নতুন ভাবে বিঁধলেন কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আর্থিক বঞ্চনা ও মূল্যবৃদ্ধির অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ‘নন্দলাল’ বলে সম্বোধন করেন তিনি। সলিল চৌধুরীর ‘নন্দলাল ও দেবদুলাল’ গানের অনুকরণে সুর করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ওহে নন্দলাল, ১১৪৯ টাকার চালে ফুটছে বিনা পয়সার চাল। ওহে নন্দলাল বাহবা, বাহবা, বাহবা। বাহবা নন্দলাল।’’ এর আগেও বিনামূল্যের চাল এবং গ্যাসের অতিরিক্ত দাম নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মমতা। তবে এ বারের আক্রমণ একেবারেই অভিনব।

পথশ্রী-রাস্তাশ্রী প্রকল্পের জন্য বিধানসভার বাজেট অধিবেশনে বরাদ্দ করা হয়েছিল তিন হাজার কোটি টাকা। আজ মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সেই প্রকল্পের উদবোধন হয়।

এদিন সিঙ্গুর থেকে ১২ হাজার কিলোমিটার রাস্তার উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেখানে বক্তব্য রাখার সময় ফের প্রাপ্য টাকা না দেওয়া নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে একহাত নেন মমতা। তিনি বলেন, “এক পয়সা না দেওয়া সত্ত্বেও আমরা ১০০ দিনের মধ্যে ২৬ দিনের কাজ করিয়ে দিয়েছি। শুধু ছবি লাগালে হয় না, বুদ্ধি খরচ করে কাজ করতে হয়। ২০১১ সালে আমাদের সরকার ক্ষমতায় আসার পর গোটা রাজ্যে ৩০ হাজার কিলোমিটার রাস্তা ছিল। সেই রাস্তা ছিল ঢেউ খেলানো, রাস্তায় মাছের চাষ করা যেত। আমাদের সরকার ১ লাখ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করেছি।”

মমতা বলেন, “অনেক সময় রাস্তা তৈরি করলেও, বড় ট্রাক গ্রামের রাস্তা দিয়ে চলাচলা করে। সেই কারণে রাস্তা ভেঙে যায়। গ্রামবাসীরা বড় ট্রাক গ্রামের রাস্তা ঢুকতে দেবেন না। ছোটো গাড়ি বা অন্যন্য গাড়ি চলাচল করলে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু, মালবাহী ট্রাকের জন্য বড় রাস্তা রয়েছে। গ্রামের রাস্তা কোনওভাবে যেন না ভাঙে। রাস্তা তৈরি, রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমরা পুরস্কার পেয়েছি। গ্রাম বাংলার চেহারা পালটে গিয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, নজর রাখতে হবে কাজের ওপর। শেষ করতে হবে বর্ষার আগেই। ঠিক মতো কাজ হচ্ছে কিনা দেখতে হবে। জব হোল্ডাররা যাতে কাজ পান, সেদিকে নজর রাখতে হবে। 

রাস্তা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে নিজের ছোটবেলার স্মৃতিও রোমন্থন করেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, “ছোটোবেলায় পরীক্ষার ছুটির পর একমাস গ্রামে গিয়ে থাকতাম। তখন দেখতাম যে গ্রামের রাস্তা গুলোর কী অবস্থা, বড় বড় গর্ত, ঢেউ খেলানো। এখন সেই গ্রামে এসে দেখি কী সুন্দর রাস্তা।”

সিঙ্গুর নিয়েও মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন মমতার আন্দোলনে গোটা দেশে পরিচিতি পেয়ছিল সিঙ্গুর। সেই প্রসঙ্গও এদিন মুখ্যমন্ত্রীর মুখে শোনা যায়। মমতা বলেন, “এই সেই সিঙ্গুর, যেখানে জমি ফেরানো নিয়ে ২৬ দিন আমরণ অনশন করেছিলাম জল পর্যন্ত না খেয়ে। এই সেই সিঙ্গুর যেখানে তাপসী মালিককে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। এখানে আমার বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন করেছি। আমরা কথা দিয়েছিলাম, কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

সিঙ্গুরে মমতার আন্দোলনের জন্য গুজরাটে চলে গিয়েছিল টাটাদের ন্যানো কারখানা। তারপর থেকে মমতাকে ‘শিল্প বিরোধী’ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করে চলেছে বিরোধীরা। সেখানেই এবার ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক তৈরির কথা জানিয়েছেন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আট একর জমিতে ৯ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয় করে এই পার্ক তৈরি হবে, এবং কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে।

আজ সিঙ্গুরে দাঁড়িয়ে তিনি মনে করিয়ে দেন, এই বিপুল পরিমাণ রাস্তা তৈরির টাকা কেন্দ্রের দেওয়া নয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২২ জেলায় রাস্তার কাজ হবে এবং এর টাকা কেন্দ্র দিচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘১২ হাজার কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করতে পৌনে ৪ হাজার কোটি খরচ। পুরো খরচ দিচ্ছে রাজ্য সরকার। এক টাকাও দিল্লির নয়। সব রাজ্যের টাকা।’

আজও তিনি কেন্দ্রকে কটাক্ষ করেন। বলেন জিএসটিকে সাপোর্ট করা ভুল হয়েছে। জিএসটির পর থেকে কেন্দ্র সব টাকা তুলে নিয়ে যায় বলেও অভিযোগ করেছেন। মমতার অভিযোগ, তিনি ভেবেছিলেন জিএসটিতে রাজ্যের সুবিধা হবে। কিন্তু তা হয়নি। কেন্দ্রকে কটাক্ষ করে আজ তিনি বলেন, ‘একশো দিনের কাজের টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। জব কার্ড হোল্ডারদের কাজ দিচ্ছে না। গ্রামীণ আবাস যোজনা, ছাত্রছাত্রীদের স্কলারশিপের টাকা বন্ধ করে দিয়েছে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here