দেশের সময়: গ্রাম দখলের লড়াইয়ে রক্তের হোলি। বেলাগাম সন্ত্রাস। ভোট শুরুর আগে থেকে শুরু হওয়া সন্ত্রাসে ঝরে গেল ৩২  প্রাণ। ভোটের দিন হত ১৪। এর মধ্যে তৃণমূলের সাত ৷ নিহতদের মধ্যে মুর্শিদাবাদেরই পাঁচ৷ তিনজন তৃণমূলের ৷ একজন কংগ্রেসের| একজন সিপিএমের ৷ বেলডাঙায় নিহত তৃণমূল কর্মী বাবর আলি ৷ রেজিনগরে নিহত তৃণমূলের ইয়াসিন শেখ ৷ খড়গ্রামে নিহত তৃণমূল কর্মী সাবিরুদ্দিন শেখ ৷ নওদায় নিহত কংগ্রেসের হাজি নিয়াকত আলি ৷ লালগোলায় নিহত সিপিএম কর্মী ৷ নিহতদের মধ্যে কোচবিহারের দুই ৷ মালদহের এক| দক্ষিণ দিনাজপুরের এক ৷ পূর্ব বর্ধমানের দুই ৷

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নিহতের সংখ্যা। দুপুরে মাত্র আধঘণ্টার মধ্যে চারটি খুনের ঘটনা ঘটে। মালদহ, বাসন্তী, লালগোলা ও কাটোয়ায়। কাটোয়ায় খুন হন তৃণমূলের এজেন্ট গৌতম রায়। মালদহের ন’ঘরিয়ায় তৃণমূল প্রার্থী মাম্পি খাতুনের শাশুড়ি তসলিমা বেউয়া। লালগোলায় সিপিএম কর্মীকে বুথের মধ্যে পিটিয়ে খুন করা হয় ৷ বাসন্তীর ফুলমালঞ্চে খুন তৃণমূল কর্মী। নিহতের নাম আনিসুর ওস্তাগর ৷  তিনি তৃণমূল প্রার্থী রোকেয়া ওস্তাগরের ভাইপো ৷ এরপরও থেমে ছিল না খুনোখুনি ৷  চাকুলিয়ায় খুন বিদায়ী তৃণমূল প্রধানের স্বামী ৷ নিহতের নাম মহম্মদ ৷ তিনি তৃণমূল প্রার্থী ছিলেন ৷ দিনহাটার ওকড়াবাড়িতে ভোটারকে গুলি৷ এই দিনহাটার ভিলেজ এক নম্বরে দুপুরেই মৃত্যু হয় ভোটের লাইনে গুলিবিদ্ধ চিরঞ্জিৎ কার্জির ৷ কোচবিহারের ফলিমারিতে নিহত মাধব বিশ্বাস ৷ মানিকচকে নিহত মালেক শেখ ৷ মুড়িমুড়কির মতো মৃত্যু নিয়ে কাঠগড়ায় রাজ্য নির্বাচন কমিশন।  গতবার পঞ্চায়েত ভোটে সন্ত্রাসের বলি হয়েছিল ১২ জন । এবার তা ছাপিয়ে গেল ৷ 

এদিন রাজ্যের  বিভিন্ন জেলায় ভোট শুরুর পর থেকে অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। যদিও কমিশনের হিসাব বলছে মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। হিংসার ঘটনা কিছুটা বেশি দুই ২৪ পরগনা, কোচবিহার, মুর্শিদাবাদে— বলেছেন নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিংহ।

ভোট শুরুর আগে থেকেই পর পর খুন। বেলাগাম সন্ত্রাস। হিংসার নগ্ন নৃত্য। গণতন্ত্রের উৎসবে জেলায় জেলায় খুনোখুনি। পঞ্চায়েত ভোটের বাংলা যেন কুরুক্ষেত্র! শনিবার সকাল থেকেই রক্তে ভাসল বাংলা। পঞ্চায়েত ভোটেও হিংসার হটস্পট দিনহাটা। পিছিয়ে নেই মুর্শিদাবাদের রানিনগর। দিনহাটা যেন বধ্যভূমি! কোথায় পুলিশ? কোথায় কেন্দ্রীয় বাহিনী? প্রশ্ন উঠলেও মিলল না উত্তর। ভোট ঘিরে ন’ঘণ্টায় খুন হতে হল ন’জনকে। এই মৃত্যুর দায় কার? প্রশ্ন রাজ্যবাসীর। গণতন্ত্রের উৎসবে দিকে দিকে শোনা গেল স্বজন হারানোর বুক ফাটা কান্না। আর্তনাদ। ভয়ঙ্কর হিংসার ছবি দেখে একটাই প্রশ্ন উঠল, এ কোন গণতন্ত্র? বাংলার রাজনৈতিক সংস্কৃতি কি তাহলে ভেন্টিলেটরে? না হলে ভোটের নামে এভাবে মানুষ বলি হল কেন? দেখে মনে হল যেন মড়ক লেগেছে বাংলায় ৷ টিভির পর্দায়  গণতন্ত্রের উৎসব  দেখতে বসে লাশ গুনলেন বাংলার মানুষ ৷ দুপুর আড়াইটে নাগাদ রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা জানান, এখনও পর্যন্ত ১৩০০ অভিযোগ এসেছে ৷  ৬০০ অভিযোগের নিস্পত্তি করা হয়েছে ৷ 

পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গ্রাউন্ড জিরোয় রাজ্যাপল সি ভি আনন্দ বোস। সাধারণ মানুষকে ভোট দেওয়ার আবেদন জানালেন তিনি। কিন্তু ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী কোথায়, প্রশ্ন তুললেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। বললেন, বাহিনীকে পঙ্গু করে রাখা হয়েছে। তোপ দাগেন বিজেপির বিরুদ্ধেও। বাহিনী পাঠাতে গড়িমসি করা হল কেন, প্রশ্ন তোলেন তিনি। ভোটের আগের দিন কেন্দ্রীয় বাহিনী এসে কী করবে? চাঁদ এনে দেবে? তোপ অধীরের। তাঁর প্রশ্ন, এই নির্বাচনের কী দরকার ছিল। বললেন, তৃণমূলের হার্মাদ বাহিনী ও পুলিশ জোট বেঁধে সন্ত্রাস চালিয়েছে ভোটে। মুর্শিদাবাদে যে সন্ত্রাস হয়েছে, কলকাতা থেকে তা পরিচালনা করেছেন দিদির হাকিম ভাই। পুলিশ নেই, কমিশন নেই, বাংলা কি অনাথ? প্রশ্ন অধীরের। বলেন, লুট, ছাপ্পা, এটা কি গণতন্ত্রের উৎসব? অধীরের তোপ, পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে বাংলায় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চলেছে। পুলিশ-গুণ্ডা মিলে এই সন্ত্রাস চালিয়েছে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর হুঙ্কার, এই অবৈধ পঞ্চায়েত কেন্দ্র থেকে যাতে এক টাকাও না পায়, সেই চেষ্টা করব ৷ তাঁর হুঁশিয়ারি বাংলায় যা চলছে চলতে দেব না ৷ গুলি খেতে হলে খাব ৷ গঙ্গারামপুরে তৃণমূল۔বিজেপি সংঘর্ষ ৷

ঘটনাস্থলে ছুটে যান স্থানীয় সংসদ তথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ৷ মুর্শিদাবাদের রাধাকান্তপুর ভোটারদের বাধা| ক্ষোভে ফেটে পড়েন মহিলা ভোটাররা ৷ প্রশ্ন তোলেন, প্রশাসন কী করছে? এই রাধাকান্তপুরেই অসুস্থ হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন তৃণমূল প্রার্থী ৷ নিউটাউনের পাথুরিঘাটায় ছাপ্পা ভোট ৷ চলল গুলি ৷ রানিগঞ্জে বুথ দখলের চেষ্টা I সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরা দেখে পালাল দুষ্কৃতীরা ৷ বেলাগাম হিংসার জন্য কমিশনকে দায়ী করেছেন আইএসএফ চেয়ারম্যান নওসাদ সিদ্দিকী ৷ নদীয়ার হাতিশালা পঞ্চায়েতে সন্ত্রাস রুখতে গুলি চালানোর অভিযোগ ঘটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে ৷

শনিবার সকাল ৭টা থেকে গ্রামবাংলায় পঞ্চায়েত ভোট শুরুর পর একের পর এমন অভিযোগ এসেছে। তার পর শনিবার দুপুর ১টা নাগাদ রাজ্য নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, গত ছয় ঘণ্টায় রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৩৬.৬ শতাংশ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here