দেশের সময়: এক কেজি আমের দাম আড়াই লক্ষ টাকা! কি চমকে উঠলেন? তা চমকে ওঠারই কথা।

বাজারে যখন হিমসাগর দশ টাকা কেজিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে, তখন এ আবার কী আম! যে আড়াই লক্ষ টাকা কেজি। তথ্য বলছে, আড়াই লাখ নয়, দু’লক্ষ ৭৫ হাজার টাকাকেও বিক্রি হয়েছে এক কেজি মিয়াজাকি আম। হ্যাঁ, সেই বিরল আমই দেখা যাবে বাঁকুড়ায় আম উৎসবে।

২২ জুন বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে ওই উৎসব। বাঁকুড়ার মাচানতলায় এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হলে ওই ম্যাঙ্গো ফেস্টিভালের আয়োজন করেছে ‘পরশমণি’। চলবে ৩ জুলাই পর্যন্ত। এখানে দেশ-বিদেশের নানা অচেনা আম দেখার পাশাপাশি কেনার সুযোগও থাকছে। রয়েছে আমের মিষ্টি মধুর ইতিহাস জানার সুযোগও।

এই উৎসবে পরশমণির সঙ্গে সহযোগিতা করেছে বাঁকুড়া চেম্বার অব কমার্স। প্রতিদিন বিকেল তিনটে থেকে রাত দশটা পর্যন্ত খোলা থাকবে স্টল। প্রথম বছরের এই ম্যাঙ্গো ফেস্টিভাল ঘিরে বাঁকুড়াবাসীর মধ্যে দারুণ উন্মাদনা।
পরশমণি’র কর্ণধার সিদ্ধার্থ সেন জানিয়েছেন, তাঁদের ফার্মেই ফলেছে মহার্ঘ মিয়াজাকি আম। সেই আম উৎসবে দেখতে পারবেন দর্শকরা। কেনারও সুযোগ থাকছে।

জাপানের কিউশু প্রদেশের মিয়াজাকি শহর এই আমের উৎপত্তিস্থল। মিয়াজাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এবং স্থানীয় কৃষকরা এই আমের জাতটির উদ্ভাবন করেন। এই আমের একটা নিজস্ব গন্ধ ও স্বাদ রয়েছে। তাছাড়া এই আমটির মধ্যে এমন কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও রাসায়নিক উপাদান রয়েছে যেমন বিটা ক্যারোটিন এবং ফলিক অ্যাসিড। যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে অনেকটাই। এছাড়াও জিঙ্ক, ক্যালশিয়াম, ভিটামিন সি, ই, এ এবং কে পাওয়া যায় এই আমে।

আমাদের দেশে প্রথমে মধ্যপ্রদেশের কয়েকটি জায়গায় মিয়াজাকি আম ফলতে শুরু করে। এখন চাষ হচ্ছে আমাদের রাজ্যেও। এবং বাঁকুড়ার মাটিতে পরশমণির ফার্মে খুব ভালোই হচ্ছে মিয়াজাকি। যেসব ডায়াবেটিক রোগী সুগার বেড়ে যাওয়ার ভয়ে আম ছুঁতে ভয় পান, তাঁরা অনায়াসেই কামড় বসাতে পারেন মিয়াজাকি আমে। কারণ, এই আমে এমন গুণাগুন রয়েছে যা শরীরে ইনসুলিন হরমোনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে সুগার থাকে কন্ট্রোলে। আন্তর্জাতিক বাজারে আড়াই লক্ষ টাকা কেজিতে মিয়াজাকি আম বিক্রি হলেও এখানে এখনও ততটা দাম ওঠেনি। তবে আর পাঁচরকম আমের চেয়ে এর মূল্য যে অনেকটাই বেশি তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

সিদ্ধার্থ জানিয়েছেন, তাঁদের ম্যাঙ্গো ফেস্টিভালে থাকছে সদাবাহার নামে আমের একটি প্রজাতি। বছরে তিনবার এই আমের ফলন পাওয়া যায়। আলফানসোর সঙ্গে অন্য এক প্রজাতির আমের সংমিশ্রণে এই ভ্যারাইটি তৈরি করেছেন রাজস্থানের এক কৃষক। তিনিই এই আমের পেটেন্ট পেয়েছেন। তাছাড়া ফেস্টিভালে থাকছে বাংলাদেশের নতুন আম বিআর-১২।

একটি আমের ওজন ৪ কেজি। থাকছে চীনের কিউজাই নামে একটি প্রজাতির আম। দর্শকরা চাক্ষুস করতে পারবেন থাইল্যান্ডের কাটিমন আম। এছাড়া থাকছে থাই ব্যানানা ম্যাঙ্গো। এই আমটি দেখতে একেবারে কলার মত। আমাদের ফেস্টিভালে থাকছে আমেরিকান রেড পালজার আম। এসব আমের নাম বেশিরভাগ মানুষ শোনেননি। কিন্তু আমরা পরশমণি ফার্মে আমের এই বিরল প্রজাতিগুলি চাষ করছি। এবং তা খুব ভালোভাবেই হচ্ছে। এছাড়া আমাদের অতি পরিচিত এমনকী প্রিয় আলফানসো, হিমসাগর, ল্যাংড়া, ফজলি, আম্রপালির মতো আম তো থাকছেই। সবমিলিয়ে ৮০টিরও বেশি প্রজাতির আম থাকছে বাঁকুড়ার আম উৎসবে।

চেনাঅচেনা আমের হাত ধরেই আমরা বাঁকুড়াকে পর্যটকদের সামনে তুলে ধরতে চাইছি। আর সেকারণেই এই উৎসবের আয়োজন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here