দেশের সময়: পিন্দারে পলাশের বন…।
মহানগরে কংক্রিটের জঙ্গলের মাঝে পুরুলিয়ার একটা ছোট্ট গ্রাম। অরণ্য ঘেরা যে গ্রামে পা রাখলে উদাস হয়ে যায় মন। প্রানভরে শ্বাস নিতে ইচ্ছে করে। আদিবাসী সাঁওতালদের হাতের সুনিপুণ কাজ দেখে মুদ্ধ হয়ে যেতে হয়। একেবারে অন্যভাবনার এই পুজোয় শামিল হতে গেলে আপনাকে আসতেই হবে বেনিয়াপুকুর সর্বজনীনে।

ছবি তুলেছেন ধ্রুব হালদার ৷

শতবর্ষ থেকে মাত্র চার বছর দূরে এই ক্লাবের পুজো। আর তাই নিজেদের আলাদা করে চেনাতে চেষ্টার খামতি রাখতে চান না উদ্যোক্তারা। রঙিন সব জিনিসপত্র দিয়ে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ। যা মানুষের মনকে রঙিন করে তোলারই প্রয়াস। তাই তো থিমের নাম রংয়ের খেলায় হবে রঙিন। চতুর্থীতে এই পুজোর উদ্বোধন করেছেন মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। শুধু পুজো নয়, উৎসবের মরশুমে গা ভাসিয়ে সামাজিক দায়িত্ববোধ মোটেই ভুলে যাননি এই ক্লাবের সদস্যরা।

এলাকার কোন শিশুদের পুজোয় নতুন পোশাক হয়নি, তাদের খুঁজে বের করে কিনে দিয়েছেন জামাকাপড়। নতুন পোশাক পেয়ে হাসি ফুটেছে সেইসব শিশুর মুখে। আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া ওই শিশুদের মুখের হাসিই যেন শোভা পাচ্ছে প্যান্ডেলে মা দুর্গার মুখে। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবে সবাই যাঁর যেমন সামর্থ্য, আনন্দ করছেন। কিন্তু অনাথ আশ্রমের শিশুরা? তাদের কথাও ভেবেছেন বেনিয়াপুকুর সর্বজনীনের সদস্যরা।

পুজোর দিনগুলোতে বাহারি আলো আর হাজারো খুশির মাঝে অনাথ আশ্রমের শিশুদের যাতে একবারও মনে না হয়, তাদের কেউ নেই, সে কথা মাথায় রেখেই কলকাতার ক্রিক রোডের একটি অনাথ আশ্রমের শিশুদের জামাকাপড় থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পাঠিয়েছেন এই ক্লাবের সদস্যরা। সবাইকে নিয়েই তো পুজোর আনন্দ। সবাই শামিল হলে তবেই তো সর্বজনীন রূপ পায় উৎসব।

তবে শুধু তো উৎসবে গা ভাসালেই চলবে না, পুজোর দিনগুলিতে অসুস্থ মানুষদের যাতে রক্তের প্রয়োজন হলে, সমস্যায় পড়তে না হয়, রক্তের জন্য হাহাকার করতে না হয়, সেকথা মাথায় রেখে রক্তদান শিবিরেরও আয়োজন করেছে এই পুজো কমিটি। পুজোর অন্যতম পৃষ্ঠপোষক রবীন্দ্রনাথ দাস বললেন, গত ডিসেম্বরে আমি পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে গিয়েছিলাম। সেখানে পাহাড়ের উপর সবুজে ঘেরা একটি ছোট্ট গ্রামের মাঝে স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেদের হাতে মন্দির তৈরি করেছেন, যার সামনে দাঁড়ালে অবাক হতে হয়, এত সুন্দর হাতের কাজ। পুরুলিয়ার যা হস্তশিল্প পাওয়া যায়, সেগুলি দিয়েই সাজানো হয়েছে মন্দিরটি।

মন্দির ঘিরে তার পাশে যেভাবে সাজানো হয়েছে, না দেখলে সত্যিই বিশ্বাস করা যায় না। ওই মন্দির দেখেই মাথায় আসে, এটির আদলে যদি পুজো মণ্ডপ তৈরি করা যায়, সেইমতো ফিরে এসে শিল্পী তন্ময় হাজরাকে বলি। শিল্পী নিজে গিয়ে দেখে আসেন। তারপর শুরু হয় মণ্ডপসজ্জার কাজ। বেনিয়াপুকুর সর্বজনীনের মণ্ডপ তৈরি হয়েছে পুরুলিয়ার চরিদার মুখোশ, কুলো, ঘট, বুনো ঘাস, হোগলা পাতার মতো উপকরণ দিয়ে।

পুরুলিয়ার মাটির বাড়িগুলিকে অনন্য করে তোলে আলপনা। আদিবাসীদের হাতের সেই আলপনার ছবিও ফুটে উঠেছে বেনিয়াপুকুরের মণ্ডপে। ফলে এই পুজো কোনওভাবেই মিস করা চলবে না। এই মেসেজটুকুই দিতে চান উদ্যোক্তারা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here