দেশের সময়: মাতল রে ভুবন…।

বেনিয়াপুকুর পুজোমন্ডপের প্রতিমা- ছবি – ধ্রুব হালদার৷

আজ মহাসপ্তমী। মণ্ডপে মণ্ডপে জনজোয়ার। মহালয়ার আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল পুজোর উদ্বোধন। বৃষ্টির ভ্রূকূটি থাকায় তৃতীয়া-চতুর্থী থেকেই ঠাকুর দেখা শুরু হয়ে যায়। পঞ্চমীতে তো কলকাতার পুজো মণ্ডপের সামনে ঢল নামে দর্শনার্থীদের। কোন পুজো ছেড়ে কোনটা দেখব, তা বাছতেই সময় চলে যাচ্ছে অনেকটা। পঞ্চমীতেই পুজোর শুভেচ্ছাবার্তা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বার্তা, গোটা রাজ্য উৎসবের আমেজে মেতে উঠেছে। সকলের মুখে হাসি দেখে খুব আনন্দ হচ্ছে। মায়ের কাছে প্রার্থনা, সকলকে আশীর্বাদ করুন, যাতে আমরা সুখে থাকি। সুস্থভাবে এই উৎসব উদযাপন করতে পারি। 

তখনও চতুর্থীর সন্ধ্যা হয়নি। বিভিন্ন দেশের কনসাল জেনারেলরা ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছেন। তাঁরা হেঁটে পুজো পরিক্রমা করছিলেন। বাংলার দুর্গাপুজো দেখে প্রত্যেকেই আপ্লুত। বললেন, দেখে মনে হচ্ছে প্রত্যেকটা মণ্ডপের যেন একটা নিজস্ব গল্প রয়েছে। ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে কলকাতায় পা রাখা মাত্র যেন গোটা ভিড় ভাগ হয়ে যাচ্ছে দু’ভাগে। একভাগ চলে যাচ্ছে দক্ষিণে। একভাগ লেকটাউনে সুজিত বসুর শ্রীভূমি ক্লাবের মণ্ডপ দিয়ে শুরু করছে ঠাকুর দেখা। দর্শক টানতে শ্রীভূমির জুড়ি মেলা ভার। এবার তাদের আকর্ষণ ভ্যাটিকান সিটি। শ্রীভূমির ঠাকুর দেখেই দর্শনার্থীরা ছুটছেন সল্টলেকের দিকে।

মহানগরীর বুকে যেন একটা আস্ত গ্রাম তুলে এনেছে সল্টলেকের এফডি ব্লক। গ্রামের দৃশ্যে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা। বসেছে বিরাট মেলা। শুধু গ্রামের নৈসর্গিক সৌন্দর্য কেন, সল্টলেকের পুজোয় ফুটে উঠেছে পদ্মাপাড়ের ছবি। মাঝিমাল্লাদের জীবনযাপন। আয়োজক এ-ই ব্লক পার্ট ওয়ান। বাগবাজারের পুজো না দেখলে যেন ঠাকুর দেখাই হয় না কলকাতায়। মায়ের এমন মুখ আর কোথায় দেখতে পাওয়া যায়! রয়েছে হাতিবাাগান, শোভাবাজার রাজবাড়ি, কুমোরটুলি, আহিরীটোলা সর্বজনীনের পুজো। বাদ যায় কেন টালা কিংবা দমদম পার্কের পুজো। ফলে প্রতি মুহূর্তেই মোবাইলে বন্ধুবান্ধব, পরিচিতদের কাছ থেকে খবর নেওয়া চলছে, কোথায় ভিড় একটু হালকা আছে। যেদিকে ভিড় কম, সেদিকেই গন্তব্য করছে আট থেকে আশি। 

তিন বছর পর খুলে গিয়েছে টালা ব্রিজ। আপাতাত বাইক ও ছোট গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ফলে যাঁরা বিটি রোড ধরে ঠাকুর দেখতে যাচ্ছেন কলকাতায়, তাঁদের ভোগান্তি কমেছে অনেকটাই। কারণ, টালা ব্রিজ বন্ধ থাকার ফলে পাইকপাড়া থেকে বেলগাছিয়া ঘুরে তাঁদের এতদিন পৌঁছতে হচ্ছিল শ্যামবাজার। মারাত্মক যানজট। পাইকপাড়া থেকে শ্যামবাজার যেখানে পৌঁছতে সময় লাগে পাঁচ মিনিট, তা লেগে যাচ্ছিল এক-দেড় ঘণ্টা। সেই যন্ত্রণা থেকে রেহাই মেলায় খুশি আমজনতা। আহিরীটোলা, কুমোরটুলি ও হাতিবাগানের পুজো আর কয়েক বছরের মধ্যেই পা রাখবে শতবর্ষে।

উত্তর কলকাতার অন্যতম বনেদি পুজো এই তিনটি। ঐতিহ্যবাহী এই পুজোগুলির টানে বহু দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন আসে। হাতিবাগান এবার পটচিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছে বাংলার পটচিত্র। কুমোরটুলি তুলে ধরেছে নাম মাহাত্ম্য। তাদের থিম ‘শিরোনাম’। আরিহীটোলা পুরনো দিনের বাংলা গানকে ফিরিয়ে দিতে চেয়েছে তাদের থিমের মাধ্যমে। এই পুজোর উদ্যোক্তাদের কথায়, বাংলা গানের ইতিহাস যেন বাঙালির অস্তিত্ব। গানের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে গ্রামোফোন, রেকর্ড, টেপ রেকর্ডার। এগুলো আজ নস্টালজিয়া। তাই হারিয়ে যাওয়া এসব স্মৃতি দিয়েই সাজানো হয়েছে মণ্ডপ। থিমের নাম দেওয়া হয়েছে, পুরনোর দিনের গান আজও ভরে মন প্রাণ। যাঁরা আহিরীটোলার পুজো দেখতে চান, তাঁদের জন্য বলা থাকল, শোভাবাজার মেট্রো স্টেশন থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বেই রয়েছে এই পুজো। 

কুমোরটুলির পুজো শুরু হয়েছিল ১৯৩১ সালে। কুমোরপাড়ার পুজো। ফলে প্রতিমা শিল্পীরা এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন অঙ্গাঙ্গিভাবে। তাঁদের সম্মান জানাতেই এবারের থিম নাম মাহাত্ম্য। এই পুজো ঘিরে রয়েছে বহু ইতিহাস। একসময় কুমোরটুলির পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু থেকে তৎকালীন সমাজের বহু নামী ব্যক্তিত্ব। কলকাতায় যখন পুজো শুরু হয়, তখন প্রতিমা হত একচালার। কুমোরটুলিই প্রথম সেই ধারা ভেঙে আলাদা চালিতে প্রতিমা গড়েছিল। এই সাহস দেখাতে পেরেছিল তারা। একেবারে গঙ্গার ধারে এই পুজোর পরিবেশটাই অন্যরকম। হাতিবাগানে এলে আপনি দেখতে পাবেন বাংলার হারিয়ে যাওয়া পটচিত্র। এখানকার প্রতিমা তৈরি করেছেন শিল্পী সনাতন দিন্দা। খান্না মোড় ও হাতিবাগান জংশনের সংযোগকারী রাস্তাতেই পড়বে এই পুজো। এবার কলকাতায় দু’টি মণ্ডপে পটচিত্র দেখা যাচ্ছে। একটি উত্তরে হাতিবাগানে, অন্যটি দক্ষিণে, ভবানীপুর ৭৫ পল্লী। 

কলকাতার দক্ষিণের পুজোর অন্যতম সেরা আকর্ষণ চেতলা অগ্রণী। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এই পুজোর মূল উদ্যোক্তা কলকাতার মেয়র তথা মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। দেড় লক্ষ কলাগাছ, প্রায় তিন বছর ধরে কাঁচামাল সংগ্রহ, তার পর স্টুডিওতে নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় সেগুলিকে শৈল্পিক রূপ দেওয়া, দশ টনের বেশি লোহা ও স্টিলের কাঠামো নির্মাণ, সবটাই দেখা যাবে এই পুজোয়। তিনমাস ধরে ৬০ জন শিল্পী কাজ করেছেন দিনরাত। চেতলা অগ্রণীর এবারের থিম ষোলোকলা পূর্ণ। ভাবনার আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে গ্রামীণ শিল্পীদের শিল্পকলাকে বিশ্বজনীন রূপ দেওয়ার চেষ্টা। উদ্যোক্তারা বলছেন, কলাগাছ মাঙ্গলিক অর্থ বহন করে। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণে কলাগাছ দরকার হয়।

পুরাণ মতে, কলাগাছ নাকি সংসারে সমৃদ্ধি আনে। সেকারণে কলাগাছের বাকল তুলে তা প্যারাফিনে চুবিয়ে তা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মণ্ডপসজ্জার সামগ্রী। মণ্ডপে কলাগাছের বাকল ১৬২টি মানুষের অবয়ব ফুটিয়ে তুলেছে। থিম শিল্পী সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু কলাগাছের বাকল দিয়ে মণ্ডপসজ্জা নয়, হারিয়ে যেতে বসা ব্রতচারীর লাঠিখেলাও তুলে ধরা হয়েছে এখানে। ঢাক ও ঢোলের সঙ্গে দেহ সৌষ্ঠবের প্রকাশ দেখতে পাবেন দর্শনার্থীরা। শস্য ও সমৃদ্ধির কামনায় রয়েছে বিশাল দু’টি নৌকা। গোটা মণ্ডপ দাঁড়িয়ে রয়েছে লোহার কাঠামোর উপর। কম খরচে কলাগাছের ফাইবারকে ব্যবহার করেও যে পরিবেশবান্ধব শিল্প গড়া যায়, সেটাই তুলে ধরতে চেয়েছেন উদ্যোক্তারা। দেবী দুর্গা এখানে শস্যদায়িনী শাকম্ভরী। তাঁর কোলে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী।

এই পুজোর পাশাপাশি নজর কাড়ছে রানিকুঠির ডিজি বিড়লা স্কুলের সামনে নেতাজি জাতীয় সেবাদলের পুজো। এই পুজোর উদ্যোক্তা কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী। থিম মহামায়া। মণ্ডপের ভিতরে ঢুকলে দর্শকরা লাইট অ্যান্ড সাউন্ডের এফেক্ট দেখতে পাবেন। তথ্যপ্রযুক্তির এই কলাকৌশল ফুটিয়ে তোলার দায়িত্বে রয়েছেন প্রখ্যাত আর্ট ডিরেক্টর তন্ময় চক্রবর্তী। মহামায়ার অজস্র রূপ দেখা যাবে এই পুজোয়। তাই আর মিস কেন! কলকাতা দক্ষিণের পুজো দেখতে এসে মোটেই মিস করা চলবে না ত্রিধারার পুজো। এই পুজো রাসবিহারীতে। পুজো কমিটির সভাপতি বিধায়ক দেবাশিস কুমার। প্রতিমা শিল্পী গৌরাঙ্গ কুইলা। তিনি তৈরি করেছেন দুর্গার শান্তিময়ী মূর্তি। অসুর, সিংহ, মহিষ প্রত্যেকেই অহংকারমুক্ত। রং ও জ্যামিতিক প্রদর্শনীর নানা অবয়ব মণ্ডপকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। ফাইবার দিয়ে তৈরি হয়েছে প্রতিমা।

কয়েক বছর আগে সবচেয়ে বড় দুর্গা করে সাড়া ফেলে দিয়েছিল দেশপ্রিয় পার্ক সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটি। এবার তারা তৈরি করেছে দশ হাজার বর্গফুটের বিশাল রাজবাড়ি। থিমের নাম ফিরে দেখা। ২০০ বছর আগে রাজবাড়ির নাটমন্দিরে কীভাবে পুজো হত, রাজবাড়ির উঠোনে রানি মা কীভাবে প্রতিমাকে বরণ করতেন, সেসবই দেখা যাবে এই পুজোয়। বনেদি বাড়ির ডাকের সাজের প্রতিমা। টালিগঞ্জ থানার ঠিক পিছনে সাড়া জাগানো পুজো প্রতাপাদিত্য রোড ত্রিকোণ পার্ক।

দেখলে মনে হবে, যেন একটি গ্যারেজ। কিন্তু এটিই মণ্ডপ। চারদিকে পড়ে রয়েছে গাড়ির যন্ত্রাংশ। তেল-কালি। দুর্গা সপরিবার উঠেছেন লরিতে। বাস্তব জীবনের কথা ও কাহিনী মিলে গিয়েছে এই পুজোয়। থিমের নাম কালি। এই পুজোর সভাপতি সাংসদ মালা রায়। বললেন, চলমান জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ কালি। কালিমাখা শ্রমিকের অবদমিত কান্না অন্তর ভেদ করে প্রতিধ্বনিত হবে মণ্ডপে। সেইসঙ্গে থাকবে আলোর সন্ধানে যাত্রা। এ তো গেল দক্ষিণের পুজো। উত্তর কলকাতায় প্রাচীন ঐতিহ্যকে তুলে ধরেছে হরি ঘোষ স্ট্রিট সর্বজনীন। দেশব্যাপী স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমিতে এদের পুজো শুরু হয় ১৯৪০ সালে। এদের এবারের থিম দুর্গা দালান। এই পুজোর হাত ধরে হেদুয়ার পাশের রাস্তার ছবিটা যেন বদলে গিয়েছে। এই পুজোয় পা দিলেই পৌঁছে যেতে হবে কয়েকশো বছর পিছনে। সেই পুরনো দিনের জমিদারবাড়ি। ঝাড়লণ্ঠন। দুর্গাপুজোয় সপরিবার হাজির জমিদার। এখানে কোনও বাহারি আলো নয়, ব্যবহার করা হয়েছে জমিদারবাড়ির লণ্ঠনের আলো। সিমলা ব্যায়াম সমিতি প্রতিবারের মতো এবারও সাবেকিয়ানার ঐতিহ্য মেনেই পুজোর আয়োজন করেছে। থিমের ভিড়ে যাঁরা ক্লান্ত, তাঁরা এই পুজোয় এসে মনের আরাম পেতে পারেন। মধ্য পঞ্চাশে যাঁরা পৌঁছে যেতে চান কিশোরের দিনগুলিতে, তাঁদের আসতে হবে নাইন বি সিংহি লেনের পুজোয়। প্রতিমা শিল্পী সনাতন রুদ্র পাল। থিমের জাঁকজমক নেই। আছে ভক্তি ও নিষ্ঠা। বৃন্দাবন মাতৃমন্দিরের পুজোয় মিলেছে একাল-সেকাল। মণ্ডপে যেমন রয়েছে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, তেমনই রয়েছে সেকালের রকের আড্ডা। ঢেঁকিতে ধান ভানার দৃশ্য। 

কলকাতার অজস্র বারোয়ারি পুজোর ভিড়েও স্বতন্ত্র আবাসনের পুজো। একটা সময় ছিল, যখন যৌথ পরিবারে দুর্গাপুজোয় চাঁদের হাট বসত। যে যেখানেই থাকুন না কেন, পুজোর পাঁচদিন সব কাজ ফেলে ছুটে আসতেন বাড়িতে। একসঙ্গে জমিয়ে খাওয়াদাওয়া, গল্পগুজব, আড্ডা। হইহই করে কেটে যেত দিনগুলো। এখন সেই যৌথ পরিবারের সংখ্যা কমেছে। কর্মসূত্রে এখন সবাই যে যাঁর মতো থাকেন নানা জায়গায়। জীবন আটকে পড়েছে ফ্ল্যাটের চার দেওয়ালের মধ্যে। এ যেন নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি। কিন্তু চেনা ছন্দ ফেরাতে কলকাতার বেশকিছু আবাসনের পুজো আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পুজোর ক’দিন আবাসনের প্রত্যেকেই যেন হয়ে ওঠেন একটা যৌথ পরিবারের সদস্য। মায়ের আরাধনাকে সামনে রেখেই তাঁরা একত্রিত হন।

একসঙ্গে বসে খাওয়াদাওয়া। অনুষ্ঠানে শামিল হন। এবার মায়ের হাতেই দেবীর বোধন করেছে উল্টোডাঙার বিধান নিবাস আবাসন। মহিলা মিলে পুজো করেছেন এখানে। পাশে থেকে সাহায্য করেছেন পুরুষরা। এখানে প্রতিমাকে পরানো হয়েছে সোনা ও রুপোর গয়না এবং অস্ত্রশস্ত্র। পুজো উপলক্ষে এই আবাসনে নাচ-গান, নাটকের আয়োজন করা হয়। কালিকাপুর মাদুরদহের দিশারী এস্টেট আবাসনের পুজোতেও থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গতবার ভার্চুয়ালি হয়েছিল এই পুজো। এবার বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে হচ্ছে। দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়ার প্রুডেন্ট প্রাণা আবাসনের পুজোয় প্রয়াত শিল্পী কেকে, লতা মঙ্গেশকর, নির্মলা মিশ্র, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের স্মরণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। এই পুজোর উদ্বোধন হয়েছে পঞ্চমীতে। ইএম বাইপাসের ধারে অভিষিক্তা আবাসনের পুজোয় দেখা মিলবে পটশিল্পের।

এই আবাসনের বাসিন্দারা পুজোর আনন্দ ভাগ করে নিচ্ছেন সুন্দরবনের জয়গোপালপুর বিকাশ কেন্দ্রের পড়ুয়াদের সঙ্গে। সপ্তমীর সকালে তারা এই পুজোয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেবে। সোদপুর মার্লিন ম্যাক্সিমাসের পুজোর ভাবনা, ঘরের মেয়ে। খড় দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মণ্ডপ। থাকছে নাটক, আঁকা, ফ্যাশন শো, গানের আসর। যশোর রোডের ইমামি সিটি আবাসনের পুজো ঘিরেও বাড়তি উন্মাদনা। শিল্পী প্রদীপ রুদ্র পাল তৈরি করেছেন সাবেকি দুর্গা মূর্তি। এখানে পুজো উপলক্ষে থাকছে ব্যান্ডের অনুষ্ঠান। নবমীতে হবে ডান্ডিয়া নাচ। রঘুনাথপুরের সরকার বাগান দিশা আবাসনের পুজো এবার ১৫ বছরে পা রাখল। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, পুজো উপলক্ষে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া, গল্পগুজব তো আছেই। সঙ্গে প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আসর। 

কলকাতার দর্পনারায়ণ ঠাকুর স্ট্রিট পল্লী সমিতির সর্বজনীন পুজো এবার ৫৭তম বর্ষে। তাদের থিম সেতু। ভালোবাসার সেতুবন্ধন ফুটে উঠেছে এদের পুজোয়। ভাবনা ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পী পার্থ দাস। থিমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা হয়েছে প্রতিমা। নজরকাড়া আলোকসজ্জা। ওয়েলিংটন নাগরিক কল্যাণ সমিতির পুজো এবার ৩৩ বছরে। শিল্পী অনির্বাণ দাসের ভাবনায় এদের থিমে ফুটে উঠেছে মূল্যবোধ। বিশাল ভাস্কর্যের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে শহরের নির্মাণ ও যানজট। যেভাবে জঙ্গল কেটে কংক্রিটের ইমারত গড়া হচ্ছে, ধ্বংস হচ্ছে বাস্তুতন্ত্র, সেটাও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মণ্ডপসজ্জায়। বার্তা দেওয়া হয়েছে, প্লাস্টিকের গাছ দিয়ে ঘর সাজানোর পরিবর্তে জরুরি একটি চারা গাছে রোপণ করা। প্রতিমা তৈরি করেছেন শিল্পী নবকুমার পাল। পাটুলির এল ব্লকের কসমোপলিস দুর্গোৎসবের বয়স এবার পাঁচ। পঞ্চমীতে এই পুজোর উদ্বোধন করেছেন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজ। এখানে তুলে ধরা হয়েছে দেবী দুর্গার রুদ্রাণী রূপ। ১৪ ফুটের প্রতিমা গড়েছে শিল্পী প্রশান্ত পাল।

ট্যাংরার ঘোলপাড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব এবছর ১০৩ তম বর্ষে। এই পুজোর থিম, সৃষ্টির জন্যই ধ্বংস। শিল্পী কমলেশ সেনগুপ্তের ভাবনায় মণ্ডপের প্রবেশদ্বারে ফুটে উঠেছে শিবের তাণ্ডব নৃত্য ও ধ্বংসের ছবি। সামনে মূল মণ্ডপে শঙ্খ শোভিত শিবলিঙ্গ। ভিতরে মহাদেব শঙ্খধ্বনির মাধ্যমে সৃষ্টির জানান দিচ্ছেন। হালতুর নন্দীবাগান সর্বজনীন দুর্গোৎসব এবার ৩০ বছরে। প্রত্যেকবারের মতো এবারও তারা শারদ মেলার আয়োজন করেছে। বেলেঘাটা সরকার বাজার বিবেকানন্দ সংঘের পুজো এবার ৭৪ বছরে। এদের থিম উপাচার। মাটির ঘট, চেলি, গামছা, কাপড়, আলতা, সিঁদুর, শাঁখা, পলা, ঝুড়ি, চাঁদমালা, ধূপকাঠি দিয়ে সাজানো হয়েছে মণ্ডপ।

প্লাস্টিক পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে চলেছে। কিছু অসেচতন মানুষ যেখানে সেখানে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ফেলেন। সেসব বৃষ্টির সঙ্গে ধুয়ে পুকুর, নদী, সমুদ্রে গিয়ে মেশে। বলা হচ্ছে দায়িত্বজ্ঞানহীন মানুষেরা এভাবে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ রাস্তাঘাটে ফেলায় তা থেকে যে দূষণ ছড়াচ্ছে তা মারাত্মক। ক্রমেই বিপন্ন হয়ে উঠছে পরিবেশ। সমুদ্রে প্রচুর তিমির মৃত্যু হচ্ছে শুধুমাত্র প্লাস্টিকের দূষণের কারণে। সামুদ্রিক কচ্ছপ সহ অন্তত ৮০০ জলজ প্রাণীর অস্তিত্ব বিপন্ন শুধুমাত্র প্লাস্টিকের দূষণের কারণে। দশ লাখ পাখির অস্তিত্বও চরম সঙ্কটে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে ২০৫০ সালে সমুদ্রে প্রাণীর চেয়ে প্লাস্টিক বেশি থাকবে। এই অশনি সঙ্কেত তুলে ধরেই প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করেছে রাজডাঙা নবউদয় সংঘ। তাদের পুজোর থিম অশনি সঙ্কেত। অ্যাক্রোপলিস মলের পিছনে বাঁদিকে ঢুকলেই দেখা যাবে বিশাল তিমির অবয়ব। মণ্ডপের দিকে এগলে চোখে পড়বে সমুদ্র তরঙ্গের পরিমণ্ডল। ভিতরে ইতিউতি মরে পড়ে রয়েছে নানা ধরনের সামুদ্রিক মাছ, কঙ্কাল, জলজ প্রাণীর পচাগলা দেহ। তিমি মাছের নিচে দিয়ে ভিতরে ঢুকে দেখা যাবে অজস্র প্লাস্টিক জমাট বেঁধে রয়েছে। টের পাওয়া যাবে ফুসফুসের সঙ্কোচন, প্রসারণ। মানুষের বাঁচার আর্তি।

মহিষাসুর তৈরি হয়েছে বিশেষ প্লাস্টিক দিয়ে। দুর্গার পোশাক ও অলঙ্কার পাটের তন্তু দিয়ে তৈরি। মায়ের মূর্তির নিচে নৌকায় সন্তানরূপী জনতার প্রতীক। প্লাস্টিককে বন্দি করে দু’দিকে তৈরি হয়েছে ব্যাঙের ছাতার মতো দু’টি টাওয়ার। এগুলি বিশ্বজনীনতার বার্তা দিচ্ছে। সভ্যতার সঙ্কট থেকে মুক্তি খুঁজে শান্তির সন্ধানে টালিগঞ্জ গল্ফ গ্রিন সর্বজনীনের পুজোর থিম হয়েছে। অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে মেসেজ দিতে এদের থিমের নাম শাশ্বত শান্তি। গৌতম বুদ্ধের বাণী তুলে ধরা হয়েছে মণ্ডপে। উত্তর কলকাতায় রামমোহন সম্মিলনীর পুজো উদ্বোধন করে নাচের তালে পা মিলিয়েছেন মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা। শিল্পী তাপসী চক্রবর্তীর হাতে মণ্ডপে ফুটে উঠেছে আদিবাসী আলপনা, সাঁওতালি শৈলী। যেন এক টুকরো জঙ্গলমহল।

রাজারহাটে একসময় জমিদার ছিলেন ঘোষরা। ২৭২ বছর আগে তাঁরা পুজো শুরু করেছিলেন। এখনও তা চলছে। কথিত আছে, বিষ্ণুপুর এলাকাটি একসময় জঙ্গল ছিল। সেই বনাঞ্চল ১৫০ টাকায় কিনে নিজের সহায়ক রাম ঘোষকে দান করেছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। সেখানেই জঙ্গল কেটে বসতি স্থাপন করেন রাম। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে জনপদ। এর পর শুরু হয় পুজো। এখন ঘোষ বাড়ির পুজোর ভার সপ্তম বংশধরদের হাতে। তাঁদের কথায়, এই পুজো দেখতে একসময় পালকি করে মানুষজন আসতেন। তারপর আসতেন মার্টিন রেলে চেপে। বারুইপুরে রায়চৌধুরিদের পুজো এবার সাড়ে তিনশো বছরে পা রাখল। নিয়ম মেনে আজও সদাব্রতঘাটে ওড়ানো হয় নীলকণ্ঠ পাখি। জমিদার রাজবল্লভ রায়চৌধুরির হাত ধরে শুরু হয়েছিল এই পুজো। মহালয়ার পরদিন থেকেই এখানে পুজো শুরু হয়ে গিয়েছে। ষষ্ঠীর দিন বেলতলায় মাকে পরানো হয়েছে গয়না ও শাড়ি। সপ্তমী ও অষ্টমীতে পাঁঠা বলি হয়। নবমীতে হয় চালকুমড়ো বলি। দশমীতে পরিবারের মহিলারা সিঁদুরখেলায় মাতেন। রূপোর পাখা দিয়ে মা দুর্গাকে হাওয়া করতে করতে বিসর্জনে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয় কাঁধে করে। পুজোর ক’দিন দক্ষিণেশ্বরে মা ভবতারিণীকে ষোড়শপচারে পুজো করা হবে। নিত্যদিন যেমন পুজো হয় তেমনই হবে। সঙ্গে হবে মা দুর্গার পুজো। দু’বেলা বদলানো হবে মায়ের সাজপোশাক। ভোগে থাকবে এলাহি আয়োজন। নিবেদন করা হয় মাছের ভোগ। থাকে পাঁচরকম ভাজা, পরমান্ন, ঘি ভাত, শুক্তো, ডাল, দই ও পাঁচরকম মিষ্টি। এখানে অবশ্য কলাবউকে স্নান করানোর রীতি নেই। অন্য সময় মন্দিরে ঢাক না বাজলেও দুর্গাপুজোর সময় শোনা যায় ঢাকের বাদ্যি। দশমীতে ঘট বিসর্জন দেওয়া হয়। 

কলকাতার পাশাপাশি পিছিয়ে নেই শহরতলিও। সোদপুর, আগরপাড়া, খড়দহের পুজোতেও থিমের ছড়াছড়ি। মহালয়ায় সোদপুর উদয়ন সংঘের পুজোর ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদের থিম যাত্রাপালা। মণ্ডপসজ্জায় উঠে এসেছে এক টুকরো চিৎপুর। যাত্রাপাড়ার বিবর্তনের ছবি ধরা পড়েছে এখানে। সোদপুর স্টেশনের কাছেই রয়েছে এইচ বি টাউন বিজয়পুর সর্বজনীনের পুজো। তাদের থিম শতবর্ষে সত্যজিৎ। মণ্ডপে ঢোকার মুখে বসানো হয়েছে সত্যজিতের আবক্ষ মূর্তি। ভিতরে সত্যজিৎ রায়ের বিভিন্ন সিনেমার দৃশ্য। পানিহাটির ৩ নম্বর দেশবন্ধুনগর নবোদয় সংঘের পুজোর থিম শক্তিরূপেণ সংস্থিতা। ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র ও বাতিল যন্ত্রাংশ দিয়ে সাজানো হয়েছে মণ্ডপ। স্টেশন রোডে দু’নম্বর দ্বীপ প্রাঙ্গনে পুজো কমিটির থিম বাঁশের আর্তনাদ। মণ্ডপসজ্জায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বাঁশের কারুকার্য।

পানিহাটির শহিদ কলোনির থিম ৭৩-এর চূড়ায়। পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে বৌদ্ধ মন্দির। গুহা দিয়ে ঢুকতে হবে মণ্ডপে। ভিতরে বিভিন্ন পৌরাণিক মূর্তি। ৩০ ফুট পাহাড়ে উঠতে হবে দর্শকদের। সেই পাহাড়ে রয়েছে চা বাগান, হোটেল। পূর্ব পানিহাটি সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি তুলে ধরেছে বাংলার সাবেকিয়ানা। আগরপাড়া ইয়ুথ রিক্রেয়েশন ক্লাবের থিম মুখোশের আড়ালে। খড়দহ অরুণাচল পুজো কমিটির থিম অকৃত্রিম। এখানে মণ্ডপ সাজানো হয়েছে বাঁশ, বেত আর চট দিয়ে। প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে দেওয়া হয়েছে বার্তা। বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকছে সাড়ে তিনশো আলোর ঝাড়বাতি। খড়দহ কল্যাণগর পুজো কমিটি এবার মায়াপুর ইসকন মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করেছে। জল অপচয় বন্ধের বার্তা দিয়েছে খড়দহের মিত্রমঞ্চ। পানশিলা উত্তর নাটাগড়ে পুজোর উদ্যোক্তা মহিলারা। খড়দহের রহড়া বাজার অরবিন্দ এরিনা হাউজিং কমপ্লেক্সের পুজো এবার ২৪ বছরে। খড়দহে এটিই প্রথম হাউজিংয়ের পুজো। ১২৮টি পরিবার থাকে এই আবাসনে। সকলেই অংশগ্রহণ করেন পুজোয়। কর্মসূত্রে আবাসনের অনেকেই বাইরে থাকেন। কিন্তু পুজোর সময় তাঁরা এখানে আসার চেষ্টা করেন। এলাকার দুঃস্থ মহিলাদের বস্ত্র দান করা হবে এবারের পুজোয়। সন্ধিপুজোর পর এলাকার মানুষকে খাওয়ানো হবে পোলাও, আলুরদম। অষ্টমী ও নবমীতে আবাসনের কোনও ফ্ল্যাটে রান্না হবে না। সবাই মিলে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া হবে। পুজো প্রাঙ্গনে বসেই পংক্তিভোজ সারবেন সবাই মিলে। প্রতিমা তৈরি করেছেন শিল্পী কালীদাস আচার্য। প্রতিমায় সাবেকিয়ানা। আন্তরিকায় এই পুজোর ইউএসপি। পুজোর ক’দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তাতে আবাসনের সকলেই অংশগ্রহণ করেন। 

ছবিগুলিতুলেছেন- ধ্রুব হালদার

হাওড়ার পুজোও কম আকর্ষণীয় নয়। সত্যজিৎ রায়কে শ্রদ্ধা জানাতে পুজোর থিম বেছেছে বাগনানের খালোড় দক্ষিণপল্লী। এখানে থাকছে সোনার কেল্লা, বাঁশবাগানে ভূতের নাচ, পথের পাঁচালির অপু-দুর্গা, দড়ি দিয়ে বাঁধা হীরক রাজা। মণ্ডপের গ্যালারিতে থাকছে সত্যজিৎ রায়ের বিভিন্ন সিনেমার ছবি, হাতে আকাঁ স্কেচ। বাগনানের মহাপ্রভু সংঘের থিম আদিযোগী দিব্যদর্শন। তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটুরের বিখ্যাত আদিযোগী শিব মূর্তির আদলে থাকছে ৬৮ ফুটের শিব। এছাড়াও মণ্ডপে থাকছে শিবের নানা রূপ দর্শনের সুযোগ। বাগনানের বেড়াবেড়িয়া শুভ শক্তি পুজো কমিটির থিম, হারিয়ে যাওয়া খেলনা। একসময় গ্রামে শিশুদের গুলতি, গুলি, লাট্টু, টিনের ঢোল, তালপাতার সেপাই, মাটির পালকি, নৌকা, কাঠের লরি, খেলনাবাটি নিয়ে খেলতে দেখা যেত। এখন সেসব হারিয়ে গিয়েছে। তাঁরা এখন মোবাইল গেমে অভ্যস্ত। হারিয়ে যাওয়া খেলা তুলে ধরতেই তাদের থিম। বাঁটুল প্রগতি সংঘ তাইল্যান্ডের স্বর্ণমন্দিরের আদলে তৈরি করেছে মণ্ডপ।

হাবড়ার পুজোয় উঠে এসেছে কেদারনাথের মন্দির, রাজস্থানের গ্রাম, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ছোট ব্যবসায়ী ও হকারদের পসরা। কোথাও আবার তুলে ধরা হয়েছে ক্ষুদ্র কুটিরশিল্পকে। থিমের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে তৈরি করা হয়েছে প্রতিমা। হিজলপুকুর মধ্যপাড়া সর্বজনীন কাগজের পাখা, ঘুড়ি, লাটাই, মাটির প্রদীপের কারিগর, ঘুরে ঘুরে বাদাম ও ঘটিগরম বিক্রি করেন যাঁরা, তাঁরা করোনাকালে কীভাবে সঙ্কটে পড়েছিলেন, সেটাই তুলে ধরতে চেয়েছে। এখানে মা এসেছেন পল্লী বধূর বেশে। কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী গ্রামের বালক-বালিকার বেশে। হাবড়া অ্যাথলেটিক ক্লাবের সর্বজনীন পুজোয় তুলে ধরা হয়েছে কেদারনাথের শিবমন্দির। ৮৫ ফুট উঁচু মণ্ডপ। ডাকের সাজের দুর্গা। উত্তর হাবড়া সেবা সংঘ পরিচালিত সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি তাদের পুজোয় তুলে ধরেছে বাংলার ক্ষুদ্র কুটির শিল্প। এই শিল্পকে ঘুরে দাঁড় করানোর বার্তা দিতেই তাদের এই ভাবনা। দক্ষিণ ভারতের বালাজি মন্দিরের আদলে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ। সেই মণ্ডপ সাজানো হয়েছে চটের উপর হোগলা পাতা ও পাটকাঠির কারুকার্য দিয়ে। উত্তর হাবড়া ইউনাইটেড ক্লাবের পুজোর এবার সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষ। এখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রাজস্থানের গ্রাম। সেখানকার মানুষের জীবনযাপন ও সংস্কৃতি যতটা সম্ভব তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন উদ্যোক্তারা। রাখা হয়েছে বিভিন্ন মডেল। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here