অর্পিতা বনিক, গোবরডাঙা : পুরসভার সূত্র অনুযায়ী দু’বছর আগেই গোবরডাঙার বয়স দেড়শো ছুঁয়েছে। উত্তর২৪ পরগনার এই শহর প্রাচীন কৃষ্টি, সংস্কৃতি বহন করে চলেছে৷


অতীতে কুশদহ বা কুশদ্বীপের অংশ ছিল আজকের গোবরডাঙা শহর। এখানে জড়িয়ে রয়েছে প্রাচীন ঐতিহ্য ও স্থাপত্যের ইতিহাস। শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার কয়েকশো বছরের ঐতিহ্য বহন করে চলেছেন এখানকার মানুষ। শহরটিকে ‘ভিলেজ অফ থিয়েটার’ নামে চেনেন রাজ্যের মানুষ। আজও এই শহরের অঙ্গনে নিয়মিত থিয়েটার হয় ৷ আর সেই সব থিয়েটারে রুটিন মেনে অনুশীলন চলছে প্রতি মুহুর্তে৷ দেখুন ভিডিও :

এখানেই রয়েছে ‘নকসা ‘-র মতো গুরুত্বপূর্ণ দল ৷ এই নাট্যদল নিজেরাই তৈরী করেছে নিজস্ব থিয়েটার ভবন ৷ সৃষ্টি হয়েছে গোবরডাঙা সংস্কৃতি কেন্দ্র ৷

৪২ বছরে ছোট বড় মিলিয়ে অন্তত ৬০ টি প্রোডাকশন করেছে নকসা৷ সম্প্রতি মার্চ মাস থেকে করোনাকাল পেরিয়ে এখানে শুরু হয়েছে থিয়েটারের এক বছরের রেসিডেন্সিয়াল প্রশিক্ষণ ৷ শুধুমাত্র ফেসবুক, সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারে এখানে এ বছরে থিয়েটার প্রশিক্ষণে এসেছেন জম্মু, কাশ্মীররের নিশা ও সুমিত রায়না ৷ উত্তর প্রদেশ থেকে এসেছেন মনীশ গুপ্তা ৷অসম থেকে এসেছেন পরীক্ষিত গগৈ৷ এবং বাংলার প্রীতম সাহা এবং বাপন ঘোষ ৷এবং এই ৬ জনকে মাসে চার হাজার টাকা করে ষ্টাইপেন্ড দেওয়া হচ্ছে বলে জানালেন আশিস দাস ৷ কয়েকজন পৃষ্ঠপোষকের সহযোগিতায় তাঁদের এই নতুন উদ্যোগ। এক বছর এখানেই থাকা-খাওয়া এবং সারাদিন থিয়েটারের কাজ শেখা৷ আশিস বাবুর কথায়, থিয়েটার মানে তো শুধু অভিনয় নয় , তার টেকনিক্যাল দিকগুলো সম্পর্কে অবহিত হওয়া। আলোর কাজ সমেত মঞ্চের নানা কাজেই তাই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন এরা ৷ এবং গোবরডাঙ্গা এসে জম্মু-কাশ্মীর, অসম ও উত্তর প্রদেশের শিক্ষার্থীরা বাংলা ভাষাও শিখে যাচ্ছেন ৷ ইতি মধ্যেই শুভাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিচালনায় নকশার অন্যদের সঙ্গে এই ৬ জন শিক্ষার্থী অভিনয় করেছেন নতুন ভাবনার ‘রাজা’ নাটকে।

এবং এই ৬ জনকে মাসে চার হাজার টাকা করে ষ্টাইপেন্ড দেওয়া হচ্ছে বলে জানালেন আশিস দাস ৷ কয়েকজন পৃষ্ঠপোষকের সহযোগিতায় তাঁদের এই নতুন উদ্যোগ। এক বছর এখানেই থাকা-খাওয়া এবং সারাদিন থিয়েটারের কাজ শেখা৷ আশিস বাবুর কথায়, থিয়েটার মানে তো শুধু অভিনয় নয় , তার টেকনিক্যাল দিকগুলো সম্পর্কে অবহিত হওয়া। আলোর কাজ সমেত মঞ্চের নানা কাজেই তাই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন এরা ৷ এবং গোবরডাঙ্গা এসে জম্মু-কাশ্মীর, অসম ও উত্তর প্রদেশের শিক্ষার্থীরা বাংলা ভাষাও শিখে যাচ্ছেন ৷ ইতি মধ্যেই শুভাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিচালনায় নকশার অন্যদের সঙ্গে এই ৬ জন শিক্ষার্থী অভিনয় করেছেন নতুন ভাবনার ‘রাজা’ নাটকে।

কলকাতায় কল শো ছাড়া নিজেরা হল ভাড়া করে থিয়েটার এখন আর করে না নকশা ৷ স্কুলের ছোটদের নিয়েও কাজ করে নকশা। ৬০ জন ছেলেমেয়ে ছোটদের গ্রুপে নাটক শেখে, নাটক করে ইতিমধ্যে শেক্সপিয়ারের ‘কিংলিয়র ‘ প্রযোজনার কাজকর্ম শুরু করেছে নকসা ৷ আশিস বাবু আরও জানান । লোকনাট্যের আদলে তাঁরা তৈরি প্রধান চরিত্রটি একটি পরিবারের মধ্যমণি। রিটায়ারমেন্টের পর তাকে কোন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়৷ সেটাই লোকভাবনার এই ‘কিংলিয়র’-এ ফুটে উঠবে ৷ সব মিলিয়ে স্বপ্ন দেখা চলছে৷ তার সঙ্গে প্রশিক্ষণ ও মহড়াও চলছে পুরোদমে ৷ এই স্বপ্নের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে ভিন রাজ্যের বেশ কয়েকজন যুবক ) যুবতীরাও৷ তাঁরাও স্বপ্নের জাল বুনে চলেছেন প্রতি মুহুর্তে৷

প্রাচীন এই শহরে এখন তৈরি হয়েছে থানা, দমকল, আধুনিক টাউন হল, পাকা রাস্তাঘাট। পথেঘাটে আলোর ব্যবস্থা হয়েছে। শহরবাসী জানাচ্ছেন, তাঁদের দাবি মেনে ২০১৪ সালের অক্টোবর মাস থেকে গোবরডাঙা পুরসভা অডিটোরিয়ামের কাজ শুরু করেছিল।

গোবরডাঙা শহরের নাটকপ্রেমীদের দীর্ঘদিন ধরে চাহিদা ছিল নাট্যচর্চার জন্য একটি স্থায়ী মঞ্চের। ওই দাবিতে এলাকার নাট্যকর্মী সংস্কৃতিকর্মী থেকে সাধারণ মানুষ দীর্ঘ আন্দোলনও করেছিলেন সেই সময় ৷

নাট্য পরিচালক তথা নকসা নাট্য সংস্থার কর্ণধার আশিস দাস বলেন, ‘‘এর থেকে আনন্দের খবর আর কিছু হতে পারে না। শুধু নাট্যপ্রেমী নয়, গোবরডাঙার সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণ হয়েছে পুরসভা অডিটোরিয়াম হওয়ায় ।’’

পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০০ সালের বন্যায় বহু বছরের পুরনো জরাজীর্ণ গোবরডাঙা টাউন হলটি কার্যত ধূলিসাৎ হয়ে যায়। তার আগে টাউন হলেই নাট্য চর্চা ও উৎসব হত। টাউন হলের জায়গাতেই নতুন অডিটোরিয়ামটি তৈরি হয়েছে।

নাট্যচর্চার জন্য গোবরডাঙার খ্যাতি গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। গোবরডাঙা ও সংলগ্ন এলাকায় ছোট-বড় নাট্য দলের সংখ্যা এখানে গোটা তিরিশের মতো। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, বিভাস চক্রবর্তী, মনোজ মিত্রের মতো বহু মানুষ এখানে নাটক করে গিয়েছেন। এখানকার নাট্যচর্চার ইতিহাস প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো। সেখানেই এতদিন অডিটোরিয়াম না থাকায় নাট্যপ্রেমীদের আক্ষেপ ছিল। এতদিনে তা মিটেছে। এই থিয়েটার হল সারা দেশের নাট্যকর্মীদের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হবে বলে মনে করছেন অনেকেই৷ ৷

‘‘আমরা আধুনিক নাট্যমঞ্চ পেয়েছি। আমরা খুব খুশি।’’ নাট্যপ্রেমীরা মনে করেন, গোবরডাঙার মানুষের নাটক দেখার দীর্ঘদিনের অভ্যাস ‘ নতুন এই প্রেক্ষাগৃহ চালু হওয়ায় নাটকের ভাল দর্শক তৈরি হতে আরও সুবিধা হবে৷

নকসার আশির বাবুর স্ত্রী দীপান্বিতা বনিক দাস-এর কন্যা ভূমিসূতা ও নাটকের মানুষ এনএসডি থেকে তিন বছরের পাঠ্যক্রম শেষ করে এসে ” নকসা” -র নতুন নাটকের নকশা বুনছেন৷ আশীস বাবুর এখন একটাই স্বপ্ন কলকাতার দর্শকরা তাঁদের নাটক গোবরডাঙাতে এসে দেখুন ৷

তাহলেই গোবরডাঙার আরএক নাম ‘ভিলেজ অফ থিয়েটার’ সার্থক হবে ৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here