দেশেরসময় ওয়েবডেস্কঃ ‘ফণি’, ‘আমপান’, ‘ইয়াস’-এর পর এ বার বাংলার দিকে ধেয়ে আসতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘সিতরাং’! হ্যাঁ, আন্দামান সাগরে তৈরি হতে চলা ঘূর্ণিঝড়ের পোশাকি নাম আপাতত রাখা হয়েছে এটাই। শুক্রবার নবান্নে উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে জেলাশাসকদের পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুত রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিব। উপকূল থেকে মানুষদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা দলের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

যদিও এখনও তৈরি হতে চলা এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম হাওয়া অফিসের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী সাগরে তৈরি কোনও ঘূর্ণাবর্ত, ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে তবেই আনুষ্ঠানিক ভাবে নাম ঘোষণা করা হয়। আন্দামান সাগরের ঘূর্ণাবর্ত প্রতিনিয়ত শক্তি বাড়ালেও এখনও পর্যন্ত তা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়নি। তবে আবহবিদদের মতে, এই ঘূর্ণাবর্ত থেকে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

‘সিতরাং’ আসলে তাইল্যান্ডের বাসিন্দাদের একটি পদবি। ভিয়েতনামের ভাষায় আবার এর অর্থ পাতা। ২০২০ সালে আবহাওয়া দফতরের তালিকাভুক্ত ১৬৯টি ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে একটির নাম দেওয়া হয় ‘সিতরাং’।

ঘূর্ণিঝড়ের অভিমুখ কি এই বাংলায় না কি তা ধেয়ে যাবে ও পার বাংলার দিকে? এখনও পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে আগামী কয়েক দিনের পূর্বাভাস দিল আলিপুর আবহাওয়া দফতর।

হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, নিম্নচাপটি উত্তর আন্দামান সাগর এবং দক্ষিণ আন্দামান সাগরের পার্শ্ববর্তী অঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের উপর অবস্থান করছে। এর পর উত্তর-পশ্চিমদিকে অগ্রসর হয়ে গভীর নিম্নচাপে ঘনীভূত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আগামী ২২ অক্টোবর, শনিবারের সেই নিম্নচাপ, পূর্ব মধ্য ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে ২৩ অক্টোবর, রবিবার। সুগভীর নিম্নচাপটি আগামী ২৪ অক্টোবর, সোমবারের মধ্যে পশ্চিম, মধ্য ও তৎসংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে।

এর পরে, আগামী ২৫ অক্টোবর, মঙ্গলবার, এটি ধীরে ধীরে উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বাংলাদেশের উপকূল, ওড়িশা উপকূল ঘেঁষে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলের কাছে পৌঁছনোর সম্ভাবনা রয়েছে। তত ক্ষণে ঘূর্ণিঝড়টি প্রবলভাবে শক্তি বাড়িয়ে ফেলতে পারে। সেই সময় বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ থাকতে পারে, ঘণ্টায় ৮৫ থেকে ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে।

হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, ২৪ ও ২৫ অক্টোবর হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়। ২৪ অক্টোবর, সোমবার, দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ভারী বৃষ্টি হতে পারে। মঙ্গলবার এই জেলাগুলিতে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। উত্তরবঙ্গে এর কোনও প্রভাব পড়বে না।


সোমবার দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ৪৫ থেকে ৫৫ কিলোমিটার বেগে হাওয়া বইতে পারে। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া চলবে। ২৫ অক্টোবর, মঙ্গলবার, দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইবার সম্ভাবনা রয়েছে। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ৩৫ থেকে ৪৫ কিলোমিটার বেগে হাওয়া বইতে পারে।

২৩ অক্টোবর থেকেই মৎস্যজীবীদের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। ২৪ ও ২৫ অক্টোবর সুন্দরবন এলাকায় সমস্ত ফেরি চলাচল বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। সেই সময় দিঘা, মন্দারমনি, শঙ্করপুর, সাগরের মতো সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় পর্যটকদের ঢুকতে দিতে বারণ করা হয়েছে

শুক্রবার নবান্নে সব দফতরের সচিবদের সঙ্গে এই ঘূর্ণিঝড় নিয়ে বৈঠকে বসেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। ছিলেন দক্ষিণের জেলাগুলির জেলাশাসক ও পুলিশ সুপাররাও। নবান্ন সূত্রের খবর, এই বৈঠকে ঠিক হয় এই ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকবে ১৫টি এনডিআরএফ টিম ও ২০টি এসডিআরএফ দল। এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নৌসেনার আধিকারিকরাও।

কালীপুজোর সময় এই ঘূর্ণিঝড় নিয়ে উদ্বিগ্ন নবান্ন। ঝড়ের গতিবিধি নিয়ে আলিপুর আবহাওয়া দফতর যেমন আপডেট দেবেন সেইমতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জনা গেছে। ইতিমধ্যেই উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে মাইকিং শুরু করে দিয়েছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন।

এদিনের বৈঠক থেকে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে ইন্টিগ্রেড কন্ট্রোলরুম চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নবান্নে চালু হবে একটি কন্ট্রোলরুম। আরও জানানো হয়, নদী বাঁধ এলাকায় এলাকায় মাইকিং করতে হবে। প্রসঙ্গত, আপৎকালীন কাজের সঙ্গে যুক্ত সকলকে ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি উপযুক্ত ত্রাণ মজুদ রাখারও কথা বলা হয়েছে নবান্নের তরফে। ২৩ তারিখ থেকে মৎসজীবীদের সমুদ্রে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here