দেশের সময় , বনগাঁ: ২৩ অক্টোবর রবিবার ধনতেরাস উৎসব। দু’ বছর করোনা অতিমারি কাটিয়ে এই বছরে লাভের আশায় বুক বাঁধছেন ব্যবসায়ীরা। করোনার থাবায় অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়ছিল গোটা বিশ্ব। বাদ যায়নি ভারতও। উৎসবের মরসুমে মুখ থুবড়ে পড়েছিল ব্যবসা। এই বছর পুজোর অনেক আগে থেকেই পশরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা।

কালীপুজো, ধনতেরাসের আগেই শহর বনগাঁয় দেখা গেল একই চিত্র। কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে উদযাপিত হয় এই ধনতেরাস উৎসব। এই দিনটিতে পুজো করা হয় ধন্বন্তরি দেব, কুবের এবং মা লক্ষ্মীর। পুরাণ বলে, ধনতেরাসে স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বৃদ্ধি পায় প্রায় তেরো গুণ। ধনতেরাসে সাধারণ মানুষ সোনা রূপোর জিনিস কিনতে ভিড় জমান দোকানে।

এই বছর করোনার প্রকোপ কমতেই ধনতেরাসের কয়েকদিন আগে থেকেই ভিড় বনগাঁর সোনার বাজারে ৷ শুক্রবার সকালে বনগাঁবাজার এলাকায় পা রাখতেই দেখা গেল কোনও দোকানই খালি নেই। প্রায় প্রত্যেক দোকানেই প্রচুর ক্রেতা রয়েছেন। স্বভাবতই হাসি ফুটেছে বিক্রেতাদের মুখে। কোনো কোনো দোকানে তো বিক্রেতারা দম ফেলার সময় পাচ্ছেন না। আলোর রোশনাইতে সেজে উঠেছে গোটা এলাকা। সাজানো হয়েছে প্রত্যেকটি দোকান। তার সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অফার।

ত্রিকোণ পার্কে ঠিক মোড়ের মাথায় নিউসিংহ জুয়েলার্স। সকাল বেলায় দেখা গেল ভালই ভিড় রয়েছে দোকানে। মালিক রতন সিংহ নিজে তখন চা খাচ্ছেন, খাওয়াচ্ছেন ক্রেতাদেরও। ব্যবসা কেমন চলছে জিজ্ঞেস করতে জানালেন, “এবারে আশা করছি ব্যবসা ভাল হবে। এখনও তো আর মাএ ১টি দিন বাকি, কিন্তু ভিড়টা দেখুন। ২০২০ সাল তো ছেড়েই দিন। গত বছরেও ব্যবসা খুব একটা ভাল যায়নি। আশা করছি এবারে লাভের মুখ দেখব”।

বনগাঁয় ইছামতি নদীর দু’পারে রয়েছে অসংখ্য সোনার দোকান৷ যেমন মতিগঞ্জ নিউ সিংহ জুয়েলার্স – এর শো রুম আলোয় সেজে উঠেছে৷ বোঝাই যাচ্ছে ধনতেরসের হাত ধরেই দীপাবলির আলোর উৎসবে মেতে উঠবেন বাঙালি৷

মতিগঞ্জ সিংহ জুয়েলার্স – এর তরুণ সিংহ জানালেন, ‘গত দু’ বছরের অতিমারি কাটিয়ে মানুষ যে বেরিয়েছেন, ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা করার সুযোগ পাচ্ছেন সেটাই স্বস্তির। জানেন তো, গত কয়েকদিনে ডলারের হিসেবে টাকার দাম পড়ে গিয়েছে অনেকটা। কিন্তু তাতে সোনার দামে কোনও প্রভাব পড়েনি। প্রতিদিনের সোনার দর দেখেই মানুষ দোকানে আসছেন। কেউ কেউ বিয়ের গয়নাও কিনতে আসছেন। আসলে যাঁরা ধনতেরাসের আগে সোনার দোকানে আসেন তাঁরা অনেকেই অনেক দূরের গ্রাম থেকেও আসেন। গত দু বছরে যানবাহনের সমস্যাটা ছিল। এবারে ট্রেন, বাস একেবারে স্বাভাবিক। ক্রেতাদের যত রকম সুবিধা দেওয়া যায় আমরা সেই দিকটা মাথায় রেখেছি।

এদিন বাজার ঘুরে দেখা গেল প্রায় প্রত্যেক দোকানেই ডিসকাউন্ট রয়েছে, থাকছে কেনাকাটার ওপর আকর্ষণীয় গিফ্টের ব্যবস্থাও। নিউ সিংহ জুয়েলার্সের রতন বাবুর কথায়, কেনাকাটার ওপর আকর্ষণীয় গিফ্টে ও ডিসকাউন্টই মানুষকে আরও টেনে আনবে”।

শুক্রবার সকালে ১ গ্রাম ২২ ক্যারেটের সোনার দাম ছিল ৪৯৪০ টাকা । কয়েকদিন আগেই সোনার দাম কিছুটা পড়েছে। যে কারণে সাধারণ মানুষের ভিড় বেড়েছে। শুধু সোনার দোকান নয়, ভিড় রয়েছে গ্রহ রত্নের দোকানেও। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ভিড়। 

সবেমাত্র একটি শোরুম থেকে সোনা কেনাকাটা করে বেরিয়েছেন বাগদার পূর্বাশা মজুমদার৷ ধনতেরাসের আগে কেনাকাটা হল? উত্তর দিলেন, ‘সামনে মেয়ের বিয়ে। স্বামী দেখে নিয়েছেন যে, সোনার দাম পড়েছে। তাই আর অপেক্ষা না করে চলে এলাম। আরও বেশ কয়েকটা দোকান ঘুরে দেখা গেল , আসলে গত দু’ বছরে এই ঘুরে কেনাকাটা করার অভ্যাস কমিয়ে ফেলেছেন অনেকেই ৷ আবার অনেকেই জানালেন, চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে এবছর নতুন নতুন আধুনিক ডিজাইনের সম্ভাব দেখে৷’

শুক্রবার সকালের ভিড়ে বেশিটা হয়তো ছিল বনগাঁর হীরা মহল গলির সোনাপট্টীতে সেখানেই ছিলেন স্বর্ণ ব্যবসায়ী কল্যাণ তারণ। এখনও পর্যন্ত ব্যবসা কেমন হল? উত্তরে ঝরে পড়ল স্বস্তি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here