দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আর অপেক্ষা নয়। অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের প্রথম পর্যায়ের ট্রায়াল সফল। সুখবর শুনিয়ে দিয়েছে ল্যানসেট মেডিক্যাল জার্নাল। তাই সেপ্টেম্বর নয়, বরং অগস্টেই অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু হয়ে যেতে পারে মানুষের শরীরে। মঙ্গলবার এমনটাই জানিয়ে দিলেন সেরামের সিইও আদর পুনাওয়ালা।

ব্রিটেনের জেন্নার ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ডিএনএ ভেক্টর ভ্যাকসিন ChAdOx1 nCoV-19 ক্যানডিডেট ডিজাইন করেছে অক্সফোর্ডের ভাইরোলজিস্ট সারা গিলবার্টের টিম। এই গবেষণায় রয়েছেন অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পোলার্ড, টেরেসা লাম্বে, ডক্টর স্যান্ডি ডগলাস ও অধ্যাপক অ্যাড্রিয়ান হিল। কোভিড ভ্যাকসিন গবেষণায় অক্সফোর্ডের হাত ধরেছে ব্রিটিশ-সুইডিশ ফার্ম অ্যাস্ট্রজেনেকা। অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রজেনেকার সঙ্গে চুক্তি করে ভারতে অক্সফোর্ডের ফর্মুলায় ডিএনএ ভ্যাকসিন তৈরি করছে পুণের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া।

ল্যানসেটের রিপোর্ট সামনে আসার আগেই সেরামের সিইও আদর পুনাওয়ালা জানিয়েছিলেন, অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যয়ারে ট্রায়ালে ইতিবাচক ফল মিলেছে বলেই খবর এসেছে। ব্রিটেনে অক্সফোর্ডের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের প্রতি পদক্ষেপের দিকে নজর রাখা হচ্ছে। সবুজ সঙ্কেত মিললেই ভারতে এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু হবে মানুষের শরীরে।

গতকাল, সোমবার প্রথম পর্যায়ের ট্রায়ালের রিপোর্ট সামনে আনে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রজেনেকা। সেই রিপোর্টে সারা গিলবার্টের টিম জানায়, দুই পর্যায়ে ১০৭৭ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছিল। দুটি দলে ভাগ করে একটি দলকে ভ্যাকসিনের একটি ডোজ ও অন্যদলকে নির্দিষ্ট দিনের ব্যবধানে দুটি ডোজ দেওয়া হয়। দেখা গেছে, যাদের একটি ডোজ দেওয়া হয়েছিল তাদের ৯০ শতাংশের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। ইতিবাচক দিক হল এই ভ্যাকসিন শুধু অ্যান্টিবডি তৈরিই করছে না, দেহকোষের টি-কোষকেও সক্রিয় করে তুলছে।

এই টি-কোষ হল শরীরের রোগ প্রতিরোধের মূল বর্ম। বেশিরভাগ ভ্যাকসিনই অ্যান্টিবডি তৈরির প্রক্রিয়াকেও যেমন সক্রিয় করে তেমনই টি-কোষকে সক্রিয় করে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। ভ্যাকসিনে কাজ হলে ইঞ্জেকশন দেওয়ার ১৪ দিনের মাথায় টি-কোষ সক্রিয় হয়ে ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তুলতে শুরু করে। বি-কোষ সক্রিয় হয়ে অ্যান্টিবডি তৈরি করে ২৮ দিনের মাথায়। অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনও তাই করেছে।

সেরাম সিইও আদর বলেছেন, যে কোনও ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে প্রথম পর্যায়ের রিপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই রিপোর্ট দেখেই বোঝা যায় ভ্যাকসিন আগামী দিনে কতটা কার্যকরী হবে। অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনে সেই আশা জেগেছে। তাই আর দেরি না করে অগস্টেই হিউম্যান ট্রায়াল শুরু করার জন্য ড্রাগ কন্ট্রোলের অনুমতি চাওয়া হবে।

এক বছরের মধ্যে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রজেনেকা ভ্যাকসিনের প্রায় ১০০ কোটি ডোজ তৈরির পরিকল্পনা আছে বলে জানিয়েছেন আদর। তাঁর বক্তব্য, মানুষের শরীরে ভ্যাকসিনের প্রভাব কার্যকরী প্রমাণিত হলেই ফি মাসে এক কোটিরও বেশি ভ্যাকসিনের ডোজ তৈরি শুরু হয়ে যাবে। কাজ করবে পুণের দুটি ফার্ম। ইতিমধ্যেই ভারতের বাজারে নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন নিয়ে এসেছে সেরাম। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন ড্রাগ কন্ট্রোলের অনুমোদন পেয়েছে।

অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে ব্রিটেনে। ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকায় দুই পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে। এই ট্রায়ালের রিপোর্টও সামনে আনা হবে বলে জানিয়েছে অক্সফোর্ড।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here