ম্প্রতি খোদ রাজধানীতে যে দাঙ্গা ও হিংসার প্রদর্শন দেখা গেল তা দেশের সাধারণ মানুষের মনে গভীর আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।গোটা দেশ জুড়ে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন লাগু হতে যাওয়া নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে আতঙ্ক ও আশঙ্কার উদয় হয়েছিল তা যেন বাস্তব রূপ পেল দিল্লির এই দাঙ্গার মধ্যস্থতায়।

অনেকদিন ধরেই এমন প্রচার সামনে আনা হচ্ছিল যে বিজেপি ও তার সহযোগী সংগঠনগুলি যেমন আরএসএস ও নানাবিধ হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি এ দেশে এক দাঙ্গার পরিবেশ তৈরি করে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার প্রয়াস করবে।এনআরসি ও সিএএ নিয়ে যে আগ্রাসী মানসিকতা বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার দেখাচ্ছিল তাতে মনে হচ্ছিল তারা যেন একরকম তাড়াহুড়ো করেই দেশের মানুষের মধ্যে এই ব্যবস্থা চালু করতে বদ্ধপরিকর।

স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ছিল কেন এত তাড়াহুড়ো বর্তমান কেন্দ্রীয় শাসক দলের?ক্রমে বোঝা গেল আসলে বর্তমান কেন্দ্রীয় শাসক চাইছে দেশের সংখ্যাগুরু হিন্দুদের ধর্মীয় পরিচয়কে প্রাধন্য দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দাকে দীর্ঘস্থায়ী ও নিশ্চিত করে তুলতে।সেই কারণেই রাম মন্দির নির্মাণে ও হিল্দুদের সংখ্যা গরিষ্ঠতার নিরিখে মুসলিমদের এদেশে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক করে তুলতে এনআরসি নিয়ে তাদের এত তাড়াহুড়ো।

বিজেপি চালিত বর্তমান কেন্দ্রীয় শাসক দল মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা নিয়ে যতটা ভাবিত তার চেয়ে বেশী ভাবিত ধর্ম ও বিভাজন নিয়ে।গোটা দেশের অর্তনৈতিক পরিস্থিতি ভয়াবহ,চাকরি হারাচ্ছেন অসংখ্য যুবত যুবতী,শিল্পে মন্দা,কৃষি মুখ থুবড়ে পড়েছে তা নিয়ে কোন হেলদোল নেই দেশের শাসকের তারা শুধু ব্যস্ত দেশ জুড়ে এক বিভাজন তৈরির নেশায়।

আর এটা করতে গিয়ে তারা ডেকে আনলেন দিল্লির এই ভয়াবহ দাঙ্গা।এখনও পর্যন্ত যে দাঙ্গার বলি ৫০ জনেরও বেশী মানুষ।গোটা দিল্লি জুড়ে বাজার পুড়েছে,ঘরবাড়ি ভাঙা হয়েছে,মরেছে মানুষ।এই কি বিকাশের চেহারা,এই কি প্রগতির চিহ্ন?

দিল্লির দাঙ্গায় পরিষ্কার প্রশাসন তার যথার্থ ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ।প্রশাসন একেবারে চুপ করে বসে থেকে দাঙ্গা ছড়াতে মদত দিয়েছেমানুষের হাতে মানুষ দিনের পর দিন খুন হয়েছে আর প্রশাসন নিরাপদ দুরত্বে বসে ঘটনার আঁচ পোহাতে ব্যস্ত থেকেছে।আনেকেই বলছেন গুজরাত দাঙ্গায় যে ভাবে প্রশাসনকে ব্যবহার করা হয়েছে সেই একি ভাবে এবারের দিল্লি দাঙ্গাতে প্রশাসন কে ব্যবহার করা হয়েছে,ডিজাইনটা একেবারে সেম টু সেম।

এথচ এ দেশ সবার দেশ হিন্দু মুসলমান একত্রিত হয়ে এই ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধের লড়াই লড়েছে।এ দেশে বিসমিল রামপ্রসাদ যেমন শহিদ হয়েছেন তেমনি শহিদ হয়েছেন আসরাফউল্লা খানও।এদেশে মুসলিম নবাব সিরাজউল্লাহের সঙ্গে আজীবন মিশে থাকেম হিন্দু সেনাপতি মোহনলাল।আজ এই ঐক্যের ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।

এই চেষ্টা মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করে ক্ষমতাকে নিশ্চিত করতে করা হচ্ছে।এতে মানুষের কোন উপকার হবে না।মানুষের তা সে হিন্দু বা মুসলমান যে সম্প্রদায়েরই হোন না কেন তাদের ক্ষতি হবে।ধ্বংস হবে আমাদের ভারতীয় ঐতীহ্য।হানাহানি হিংসা আমাদের কোন দিশা দিতে পারে না,এদেশ তাই গান্ধিজির ্হিংসা ও সততাকে প্রশ্রয় দেয়,সম্মান করে।আমাদের আবার সেই সততা ও অহিংসার শিক্ষা দিযেই বর্তমান হিংসার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

সাধারণ মানুষের তাই সব রাজনৈতিক দলগুলোকে সোচ্চারে বলার সময় এসেছে আমরা সম্পরিতীর বন্ধন চাই,মানুষে মানুষে ভালবাসা চাই,চাই ঐক্য ও সংহতি।যে দল তা ভাঙবে আমরা তার বিরোধিতা করবো।রক্ত ও হানাহানি দিয়ে কোন ভাল কাজ হয় না হতে পারে না,দেশের বর্তমান শাসক দলকে তা বুঝিয়ে দিতে হবে।

বলতে হবে সুশাসন দেওায়াই সরকারের কাজ।মন্দির বা হিন্দু মুসলমান বিভাজন করাটা কোন সরকারি কর্মসূচি হতে পারে না।সেই কর্মসুচি নেওয়ার প্রয়াস করবে যে সরকার সে সরকার ভারত রাষ্ট্রের পক্ষে শুভ নয়।এই সহজ সত্যটা বুঝে নেওয়া ও বুঝিয়ে দেওয়ার সময় এসে গেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here