দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সোমবার রাতে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত-চিন সেনা সংঘাতে দু’দেশের কমপক্ষে ৬০ জন সেনা অফিসার ও জওয়ান হতাহত হয়েছে বলে খবর।

মঙ্গলবার রাতে সংবাদসংস্থা এএনআই জানিয়েছে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন ওই সীমান্ত সংঘাতে। সরকারি সূত্রের মতে, এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

ভারতীয় বাহিনীর প্রত্যাঘাতে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মির সেনা জওয়ানদের হতাহতের সংখ্যা তুলনায় এখনও পর্যন্ত বেশি। পিএলএ-র অন্তত ৪৩ জন সৈনিক হতাহত হয়েছে বলে ভারতীয় সেনা গোয়েন্দারা বেতারে আড়ি পেতে জানতে পেরেছে।

মঙ্গলবার সকালে নয়াদিল্লির সাউথ ব্লকের তরফে জানানো হয়েছিল লাদাখে চিনা সেনার সঙ্গে মুখোমুখি সংঘাতে ভারতীয় বাহিনীর এক কর্নেল ও দুই জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ঘটনা হল মঙ্গলবার সন্ধে পর্যন্ত আরও অন্তত কুড়ি থেকে তিরিশ জনের জওয়ান ও অফিসারের সেনা ছাউনিতে ফেরার খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। উদ্বেগের শীতল স্রোত বইতে শুরু করেছিল তখন থেকেই। পরে রাত ১০ টা নাগাদ সংবাদসংস্থা এএনআই জানিয়েছে যে সরকার স্বীকার করেছে ভারতীয় বাহিনীর অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে এই সংঘাতে।

১৯৭৫ সালে ভারত-চিন সীমান্তে শেষবার কোনও সেনা জওয়ানের মৃত্যু হয়েছিল। তার পর থেকে ওয়েস্টার্ন সেক্টরে লাদাখে বা ইস্টার্ন সেক্টরে অরুণাচলে দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে হাতাহাতি-মারামারি কম হয়নি। বলা যেতে পারে আকছার তা হয়। কিন্তু এ ধরনের প্রাণঘাতী মারামারি কখনও হয়নি। আরও অবাক করার মতোই ঘটনা যে, এই সংঘাতে কোনও পক্ষই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেনি। লোহার রড, লাঠি, পাথর নিয়ে হামলা করেছে চিনা সেনা। তার পরই প্রত্যাঘাত করেছে ভারতীয় বাহিনী।

সংঘাত কেন?

পূর্ব লাদাখের গালওয়ান ও শাইওক নদীর মোহনার কাছে যে স্থানে সংঘাত বেঁধেছে তাকে ১৪ নম্বর পেট্রলিং পয়েন্ট বলা হয়। ভারত ওই অঞ্চলে কৌশলগত কারণে দুটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা নির্মাণ করছে। এক তো শাইওক নদীতে সেতু তৈরি করেছে। আর তার মাধ্যমে দারবুক শাইওক-দৌলত বেগ ওলদি রাস্তা সংস্কার করে মজবুত করেছে। এই রাস্তা কারাকোরাম পাসের দক্ষিণে শেষ আউটপোস্ট পর্যন্ত যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। তারই প্রতিবাদ করতে ১৪ পয়েন্টে তাঁবু গেড়েছিল চিনা সেনা।

চিনা সেনা ১৫ নম্বর পেট্রলিং পয়েন্টেও তাঁবু গেড়েছিল। তার পাল্টা হিসাবে কয়েক গজ দূরে তাঁবু গেড়েছিল ভারতীয় সেনা। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে দুই দেশের সেনাবাহিনীর পদস্থ কর্তা স্তরে আলোচনার পর ওই তাঁবু সরিয়ে নেওয়ার কথা ছিল পিএলএ-র।

সোমবার রাতে ১৪ নম্বর পেট্রলিং পয়েন্টে চিনা সেনার তাঁবু সরাতে গিয়েছিল ভারতীয় বাহিনী। তখনই প্রথমে উঁচু জায়গা থেকে পাথর ছুড়তে শুরু করে চিনা বাহিনী। তার পর লোহার রড নিয়ে মারতে নেমে পড়ে। পাল্টা আঘাত করে ভারতীয় সেনাও। তার জেরেই দুই বাহিনীর অন্তত ৬০ জন হতাহত হয়েছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here