দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দেশে জুড়ে উদ্বেগজনক ভাবে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ৷ এই পরিস্থিতিতে চলতি আনলক-১-এ নতুন নিয়ম কী হওয়া উচিত? এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য আরও একবার সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ রাজ্যগুলিকে দু’দফায় ভাগ করে ১৬ ও ১৭ জুন আজ মঙ্গলবার ও কাল বুধবার ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ে হবে এই বৈঠক। দিল্লির একটি সূত্র থেকে জানাগিয়েছে, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠকে যোগ দেবেন ১৭ জুন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসলেও বক্তা তালিকায় নাম নেই বাংলার। সূত্রের খবর এমনটাই।

সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্নাটক, পঞ্জাব, বিহার ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীরা বক্তার তালিকায় থাকলেও তাতে নাম নেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। উল্লেখ্য, এর আগে একাধিক বৈঠকে মোদীর সঙ্গে বৈঠকে বসলেও সেখানে খুব কম কথা বলারই সুযোগ পেয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তা নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভও ব্যক্ত করেছিলেন তিনি। এবারও তাঁর নাম নেই বক্তার তালিকায়।

এর আগে অবশ্য করোনাভাইরাস নিয়ে রাজনীতি করছে কেন্দ্রীয় সরকার, মোদীর সঙ্গে বৈঠকে এমনই অভিযোগ করে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ ছিল, কেন্দ্র করোনা-যুদ্ধে তাদের পছন্দের রাজ্যগুলির প্রতি পক্ষপাতিত্ব করছে এবং একটি নির্দিষ্ট স্ক্রিপ্ট মেনে কাজ করছে। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, ‘কেউ আমাদের পরামর্শ দিতেও বলছে না৷

যদিও আমপানের পর রাজ্যে পরিদর্শনে এসে করোনা মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। কিন্তু এবারের বৈঠকেও মুখ্যমন্ত্রীকে জায়গা না দেওয়ায় স্বাভাবিক কারণেই বাংলাকে ‘বঞ্চনার’ অভিযোগ উঠছে।

বিজ্ঞাপন:

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন এর আগের বৈঠকগুলিতে ‘জান আর জাহান’ রক্ষার আবেদন জানান, তখন তাঁর প্রস্তাবে সায় দিয়েছিল সব রাজ্য৷ তার ভিত্তিতেই নানা ছাড় দিয়ে ১ জুন থেকে আনলক-১ চালু হয়েছে। তা হলে প্রধানমন্ত্রী মাসের মাঝামাঝি কেন বৈঠকে ডাকছেন মুখ্যমন্ত্রীদের? সূত্রের খবর, বৈঠকের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে থাকতে পারে লোকাল ও ট্রেন ও মেট্রো চালু হওয়ার প্রশ্ন৷ পুরোমাত্রায় চালু হয়নি দূরপাল্লার ট্রেন সার্ভিসও।

দেশে সংক্রমণের মাত্রা যে স্তরে রয়েছে, তাতে এই দু’টি পরিষেবা শুরু করা ঠিক হবে কি না, তা জানতে চাইবেন প্রধানমন্ত্রী৷ আলোচনা হতে পারে যাত্রিবাহী ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো নিয়েও৷ বর্তমানে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনের পাশাপাশি ২০০টি যাত্রিবাহী ট্রেন চলাচল করছে৷

পরিযায়ী শ্রমিকদের ব্যাপারে কেন্দ্র ও রাজ্য দুই সরকারকেই চেপে ধরেছে শীর্ষ আদালত। এ ব্যাপারে রাজ্যগুলির মনোভাব বুঝে নিতে চান প্রধানমন্ত্রী। শুধু তাই নয়, দেশজুড়ে বন্ধ আছে শিক্ষাঙ্গনও। সংক্রমণ থেকে সন্তানদের রক্ষা করতে এখন অভিভাবকদেরই একাংশ চাপ তৈরি করছেন, এখন আপাতত শিক্ষাঙ্গন বন্ধ থাক। মনে করা হচ্ছে, এই বিষয়গুলিও আলোচনায় উঠে আসতে পারে।

বরাবর বলে এসেছে লকডাউন এদিকে সব কিছুই আনলক। পরিস্থিতি যা এখন আছে তাতে সমস্যা আরও বাড়বে। রাজ্যে রেল পরিষেবা বন্ধ কিন্তু বাস, অটো, টোটো, সব ই চলছে। এতে গোষ্ঠী সংক্রমণ আরও বাড়ছে৷

রাজ্যের পাশে দাঁড়িয়েই এই প্রশ্নে সরব হয়েছে বিরোধী সিপিএম ও কংগ্রেস। বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, বিষয়টি‘‘খুবই দুর্ভাগ্যজনক! বাংলায় করোনা মোকাবিলা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। সেই জন্যও তো বাংলার কথা শোনার প্রয়োজন ছিল কেন্দ্রের। তা হলে কি ধরে নিতে হবে, বাংলায় কী হচ্ছে, তা নিয়ে কেন্দ্র মাথাই ঘামাচ্ছে না? নাকি তারা নিজেদের মত ছাড়া অন্য কিছু শুনতেই চায় না?’’

প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রও তাঁর বক্তব্য, ‘‘করোনা মোকাবিলায় রাজ্যগুলো প্রথম সারিতে থেকে লড়াই করলেও তাদের কোনও দাবি-দাওয়া মানেনি কেন্দ্র। মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বা বিরোধী দলগুলির সঙ্গে একাধিক বার বৈঠক হলেও সমস্যার কোনও সুরাহা হয়নি। এখন কোন কোন রাজ্য কথা বলবে, সেটাও তো আলোচনা করে ঠিক হচ্ছে না। গোটা প্রক্রিয়াটাই অর্থহীন হয়ে যাচ্ছে!’’

রাজ্যের তরফে সরকারি ভাবে অবশ্য কেউ এ দিন মুখ খোলেননি। তবে নবান্নের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘বাংলায় করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে মুখ্যমন্ত্রী যে দক্ষ, তা মোদী সরকারও বুঝে ফেলেছে। তাই হয়তো তারা বাংলা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না কেন্দ্র!’’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here