দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বৃহস্পতিবার, পয়লা জুলাই থেকে কলকাতা-সহ রাজ্যে বাস পরিষেবা চালু করার ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। সেই মতো বৃহস্পতিবার থেকে শহর ও শহরতলীতে গণ পরিবহণ মাধ্যম ব‍্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে বুধবার রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম দফায় দফায় বৈঠক সারলেন পরিবহন আধিকারিকদের সঙ্গে।

বৈঠক শেষে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানান, “বৃহস্পতিবার রাজ্যে গণ পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে অন্তত তিন হাজার সরকারি বাস রাস্তায় নামানো হবে। কলকাতায় ৮০০ সরকারি বাস চলবে।” একইসঙ্গে বেসরকারি বাস মালিক সংগঠনগুলির কাছে পরিবহণ মন্ত্রীর আবেদন, “কোভিড পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে বৃহস্পতিবার থেকে বেশি সংখ্যক বাস রাস্তায় নামান।”

রাজ্য পরিবহণ দফতরের ঘোষণা মতো সরকারি বাস পর্যাপ্ত সংখ্যায় থাকলেও বৃহস্পতিবার আদপে ঠিক কত সংখ্যক বেসরকারি বাস রাস্তায় নামবে, তা নিয়ে ঘোর অনিশ্চয়তা রয়েছে।

বুধবারও বেসরকারি বাস ও মিনিবাস মালিক সংগঠন গুলির পক্ষ থেকে পরিবহণ মন্ত্রীর কাছে কেরলের অনুকরণে ‘কোভিড স্পেশাল ফেয়ার’ চালু করার আর্জি জানানো হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি বাস মালিকদের একাংশের বক্তব্য, ভাড়া বাড়ানো না হলে ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে বাস পরিষেবা দেওয়া কার্যত অসম্ভব।

এই অবস্থায় একাধারে বেসরকারি বাস মালিকদের ওপর রাস্তায় বাস নামানোর জন্য চাপ তৈরি করা হবে না। অন্যদিকে বাস না নামানোর কথাও স্পষ্ট করে বলছেন না বেসরকারি বাস মালিক সংগঠনগুলো।

বেসরকারি বাস মালিক সংগঠনগুলির আরও বক্তব্য প্রায় দেড় মাস বসে থাকার ফলে অধিকাংশ বাস ও মিনিবাসের টায়ার, যন্ত্রাংশ রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। একইসঙ্গে বাস পরিষেবা চালু করতে পাঁচ হাজার টাকার জ্বালানি প্রয়োজন। এই সব অসুবিধার কথা মাথায় রেখেই বৃহস্পতিবার থেকে রাস্তায় বেসরকারি বাস নামানোর ভাবনা থেকে পিছিয়ে আসছেন বাস মালিকরা।

বৃহস্পতিবার থেকে গন্তব্যে পৌঁছতে বস্তুত সরকারি বাস পরিষেবার ওপরেই নির্ভর করতে হবে শহর ও শহরতলীতে। তবে স্বস্তির বিষয়, বৃহস্পতিবার পয়লা জুলাই ছুটি ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। ফলে তুলনামূলকভাবে গণপরিবহণ মাধ্যমের ওপর চাপ কম থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

১৫ই জুলাই পর্যন্ত রাজ্যের কোভিড বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ঠিকই, তবে বেশ কিছু ক্ষেত্রে ছাড়ও দিয়েছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্ন থেকে ঘোষণা করেছেন সরকারি বেসরকারি বাস, অটো, টোটো ইত্যাদি যানবাহন চলবে ১ জুলাই থেকেই।

রাজ্যে চলতি বিধিনিষেধের মেয়াদ শেষ হয়েছে বুধবার ৩০ জুন। তারপর আগামীকাল ১ জুলাই থেকে বিধিনিষেধ একেবারে তুলে নিচ্ছে না সরকার। তবে বাস অটোর মতো যানবাহনে ছাড় দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে সরকারি বেসরকারি বাস চলবে আগামী ১ জুলাই থেকে। তবে ট্রেন চালানো হবে না এখনই।

বাসচালক, কন্ডাক্টর, এবং অন্যান্য কর্মীদের ভ্যাকসিনেশন নিশ্চিত করা হবে। এছাড়াও নিয়মিত স্যানিটাইজেশনের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক।
সকাল ১১টা থেকে ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকবে বিউটি পার্লার এবং সেলুন। জিম খোলা থাকবে সকাল ৬টা থেকে ১০টা এবং বিকেল ৪টে থেকে ৮টা পর্যন্ত। এছাড়াও দোকানপাট খোলা রাখা যাবে ১১টা থেকে ৮টা পর্যন্ত। সবজি বাজার মাছের বাজার খোলা থাকবে সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত।

বেসরকারি ও কর্পোরেট অফিসে কর্মচারীর সংখ্যা ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত অফিস খোলা থাকবে।

ব্যাঙ্ক খোলা থাকছে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত। বিয়েবাড়িতে ৫০ জন অতিথির অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সুস্থতার হার ৯৭.৩৬ শতাংশ। আর সংক্রমণের হার নেমে এসেছে ৩.৩ শতাংশে।

কিন্তু তবু এখনও যাঁরা কোভিড বিধিনিষেধ মানছেন না, মাস্ক পরছেন না, এদিন তাঁদের উদ্দেশেও কড়া বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, অনেকেই সামাজিক দূরত্ববিধি মানছেন না। কোভিড বিধি না মানলে বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

রাজ্যে ইতিমধ্যে ২.১২ কোটি মানুষ ভ্যাকসিন পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৪০ লক্ষ সুপার স্প্রেডার ক্যাটেগরির মানুষও পেয়েছেন ভ্যাকসিন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here