দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ প্রথমে একটা ফেসবুক পোস্ট। তারপর নিজের মুখেই স্বীকার করে নেওয়া। একই সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া অমিত শাহ তাঁর পরিচিত, শনিবার দিল্লি গেলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বৈঠক হতেই পারে। ফলে শতাব্দী রায়কে দলবদলের জল্পনা ঘিরে আপাতত সরগরম রাজ্য রাজনীতি। দু’বারের দলীয় সাংসদকে ঘিরে তৃণমূলের তবু চেষ্টার কসুর নেই।

বীরভূমের সাংসদ তথা অভিনেত্রী শতাব্দী রায়কে তৃণমূলে রাখতে মরিয়া চেষ্টা শুরু হয়ে গেল। শুক্রবার সন্ধ্যায় শতাব্দীকে নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে পৌঁছে গেলেন দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। যা কিনা বরফ গলানোর চেষ্টা বলেই মনে করা হচ্ছে।

রাজ্য রাজনীতি ও টলিপাড়ায় হেন লোক নেই জানেন না যে শতাব্দীর বন্ধু ছিলেন তাপস পাল। তবে শতাব্দী প্রথম বার লোকসভা ভোটে জেতার সময়েই আলোচনা ছিল যে শতাব্দীর পরম বন্ধু কুণাল ঘোষও। কুণালই তাঁকে নাকি হাত ধরে তৃণমূলে এনেছিলেন।


শতাব্দীকে তৃণমূলে রাখতে এখন সেই কুণালকেই দেখা যাচ্ছে অনুঘটকের ভূমিকায়।

গতকাল থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত শতাব্দীর ‘কথাবার্তা’ শুনেই দুপুরেই তাঁর আনোয়ার শাহ রোডের বাড়িতে কুণাল ঘোষকে পাঠায় তৃণমূল। দুজনের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ কথাও হয়। মাঝে ফোন যায় সৌগত রায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো শীর্ষ নেতাদের। কিন্তু বৈঠকের ফলে আদৌ কি ‘আটকানো’ গেল শতাব্দীকে?

কুণালের ‘বডি ল্যাঙ্গোয়েজ’ অবশ্য তা বলছে না। বৈঠক সেরে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে হাসিমুখে কুণালকে বলতে শোনা যায়, ‘শতাব্দী আমার বন্ধু, আমার অনেকদিনের পরিচিত। মিষ্টি নিয়ে বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম। কথা হল। দুজনেই যেহেতু রাজনীতির জগতের মানুষ, তাই রাজনীতি নিয়েও কথা হয়েছে। এটুকুই।’ শতাব্দী রায় কি তৃণমূল ছাড়ছেন আর বিজেপিতে যাচ্ছেন? প্রসঙ্গে এড়িয়ে কুণাল বলেন, ‘শতাব্দী রায় এখনও পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেসেই আছেন। শতাব্দীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে তৃণমূল নেতৃত্ব আর শতাব্দী। আমার কিছু বলা সাজে না। দল তাঁর সঙ্গে কথা বলবে।’ বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হল, তা অবশ্য জানাতে চাননি তৃণমূলের প্রাক্তন রাজ্যসভা সদস্য, বর্তমানে দলীয় মুখপাত্র কুণাল। এদিকে, এদিনই দিল্লি থেকে তাঁকে মুকুল রায় ফোন করেন শতাব্দীকে। শনিবারের দিল্লি বৈঠক নিয়ে কথা হয় দুজনের।

তবে, রাজনৈতিক মহলের ধারণা, কুণালের বাচনভঙ্গি বলে দিচ্ছে, বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি। শতাব্দীর বিজেপি যাত্রা এখন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। একমাসও হয়নি, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বোলপুরের পদযাত্রাযর সঙ্গী হয়েছিলেন শতাব্দী। কিন্তু বৃহস্পতিবার থেকেই খেলা ঘুরে যেতে শুরু করে। গতকালের ফেসবুক পোস্টের পর এদিন শতাব্দী নিজের মুখেও বলেন, ‘এলাকায় যেভাবে যেতে চেয়েছি, সেভাবে পারছি না। মনে হচ্ছে নেতৃত্বকে জানিয়েও কোনও লাভ হবে না।’ আর শনিবার অমিত শাহের সঙ্গে দেখা বিষয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘দিল্লি যাচ্ছি, পরিচিতদের সঙ্গে দেখা হতেই পারে। দেখা হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।’ অর্থাৎ, বার্তা স্পষ্ট।

এরপরই কুণালকে শতাব্দীর বাড়িতে পাঠায় শাসক দল। তার আগেই অবশ্য সৌগত রায় সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘দলে তো কথা বলার সুযোগ রয়েছে। সুব্রত বক্সী, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায় – সকলেই তো দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। শতাব্দী দলের মধ্যেই কিছু জানাতে পারত। এখনও দল তাঁর সঙ্গে কথা বলবে।’ কিন্তু কুণাল ঘোষকে পাঠিয়েও তেমন কোনও লাভ তৃণমূলের হল না বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

কেন বিজেপির পথে শতাব্দী? রাজনৈতিক মহলের মতে, সাংসদ শতাব্দীর সঙ্গে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ঠান্ডা লড়াই নতুন নয়। শতাব্দী রায়কে দীর্ঘদিন অনুব্রতর ধারেকাছেও দেখা যায়নি। বরং জেলার অন্য সাংসদ বোলপুরের অসিত মাল অনুব্রতর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। শতাব্দীর বিষয়ে বৃহস্পতিবারই অনুব্রত এদিন বলেন, ‘যাকে জানাবে জানাক। দলের চেয়ারপার্সন তো আমি নই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে জানালে তিনি যা ভালো বুঝবেন করবেন। আমি চাষার ঘরের ছেলে। অত ভনিতা, ইঙ্গিত বুঝি না। সরাসরি কথা বলি।’ প্রশ্ন উঠছে, সেই কারণেই কি শতাব্দী সরাসরি বিজেপির পথে? উত্তর দেবে সময়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here