লিখছেন-দীপাঞ্জয় দত্ত
আইনজীবী

শ্রদ্ধেয় আইনজীবী নির্মলেন্দু বিশ্বাস ,আমাদের সবার ভালবাসার নিমাই কাকু। এই অদ্ভুত সময়ে, দীর্ঘ রোগভোগের পর চীর শান্তির আশ্রয়ে চলেগেলেন ৷

দক্ষ সংগঠক, সুবক্তা, দীর্ঘ ডানপন্থী রাজনৈতিক জীবন, বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন উপ পুরপ্রধান এবং বনগাঁ বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ছিলেন ৷

ওঁনার সাথে সম্পর্কটা পারিবারিক ৷ নিমাই কাকুর বাবা শ্রদ্ধেয় স্বর্গীয় শ্যাম বিশ্বাস আমার ঠাকুরদা স্বর্গীয় দেবকীদুলাল দত্তের অভিন্ন হৃদয় বন্ধু ও রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ৷ স্বর্গীয় শ্যাম বিশ্বাস প্রথিতযশা আইনজীবী, আর তাঁর যোগ্য উত্তরসূরী নিমাই কাকু, আমার বাবার সহপাঠী ৷ সম্ভবত ১৯৬৫ এর ব্যাচ।

তিনি দীর্ঘদিন ধরেই বয়স জনিত নানান রোগে ভুগ ছিলেন, সোমবার দুপুর ২.১০ মিনিট নাগাদ নিজ বাস ভবনে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ৷ ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল এবং ২০০০ সাল থেকে ২০০৫ সাল তিনি বনগাঁ পুরসভার উপ পৌর প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন৷মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর৷এই মূহুর্তে পরিবারে রয়েছেন স্ত্রী, পুত্র,ও কন্যা।

বাবা ,কাকাদের স্মৃতি চারনায় নিমাই কাকুর রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক জীবন এক আলোয় ভরা অধ্যায় ৷ রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান, তাই ছাত্রাবস্থা থেকেই ফ্রন্টফুটে ছাত্র পরিষদকে নেতৃত্ব দেওয়া ৷ কলেজ জীবনে রাজনৈতিক বিতর্ক সভায় তাঁর হাস্য রসাত্বক বক্তব্য গুণমুগ্ধ শ্রোতা দর্শক সংখ্যা শুধু দিনে দিনে বাড়িয়েছিলেন তাই নয়, বরং বলা ভাল তিনি ছিলেন একজন ক্রাউড হান্টার ৷ প্রথমে জাতীয় কংগ্রেস পরবর্তীতে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে বাম বিরোধী মানুষদের এক জোট করতে তাঁর রাজনৈতিক মঞ্চে বক্তব্য ছিল নজরকাড়া ৷ বনগাঁর বাইরে শুধুমাত্র রাজনৈতিক কর্মীদের সতেজ করার জন্য ছুটে গেছেন বহুবার৷ একটা সময় ছিল, দিনের মধ্যে বহু রাজনৈতিক সভায় বক্তব্য রাখতে হত, তাই ফ্লাক্সে করে গরম জল নিয়ে ঘুরতেন গার্গেল করার জন্য। রাজনৈতিক সহকর্মীদের ব্যক্তিগত সমস্যা , কেউ অসুস্থ হলে ছুটে যেতেন যেকোন প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে ৷ বনগাঁর বেশ কিছু বর্ধিষ্ণু ক্লাবের সাথে যুক্ত ছিলেন আমৃত্যু ৷ বনগাঁর সংস্কৃতি জগৎ ,নাট্যজগতে সুমিস্ট পদ চালনা ৷ আবার রাস্তার ভবঘুরে , গরীব ভ্যান -রিকসা চালকদের অসময়ের ত্রাতা ছিলেন তিনি ৷

সম্পর্কটা আমার সাথে বন্ধুত্বের ৷ হ্যাঁ, আমরা অল্প কয়েকজন জুনিয়ারই ছিলাম যারা ওনার কাছে আবদার করতে পারতাম আবার পিতৃসম সিনিয়ারকে বকতেও পারতাম ৷ অনবদ্য রসিক মানুষ ৷ বয়সটা ওনার কাছে সংখ্যা মাত্র ৷ আর জীবনটা ,আনন্দ করার জন্যই ৷ আমি সেভাবে সিভিল প্রাকটিস করি না ৷ তবে ,ও বাড়িতে মানে, সিভিল বার লাইব্রেরিতে আমার অবাধ যাতায়াত পারিবারিক সম্পর্ক আরও মজবুত করেছে ৷ কাকু মানেই সকালে ঠিক করে দুপুরে পিকনিক ৷ অল্প সময়ের নোটিশে সবাইকে নিয়ে দীঘায় ঘুরতে যাওয়া ।

আমার বিগত আট বছরের প্রাকটিস জীবনে কাকুকে দেখেছি স্যেশান কোর্টগুলিতে আপিল অথবা ও.এস মামলা করতে ৷ কাকু যখন মুভ করতেন , আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে শুনতাম ৷ কি অসাধারণ বাচনভঙ্গি ,প্রেসেন্টেশন, কোর্টকে অ্যাড্রেস করার ধরন , আইনের ব্যাখ্যা। সি.পি.সি , এভিডেন্স এ্যাক্ট , ট্র্যান্সফার অব প্রপার্টি , সব রুলস্ এন্ড অর্ডার যেন আত্মস্থ ৷

আমরা হারালাম ৷ বনগাঁর মানুষ হারালো এক সুবক্তাকে, দক্ষ সংগঠনকে , এক জন অসাধারন মানুষকে যিনি মিশে যেতে পারতেন সমস্ত স্তরের মানুষের সাথে ৷আর সর্বোপরি রাজনৈতিক শালিনতা, সৌজন্য, শিষ্টাচারে ভরপুর একজন ব্যক্তিকে ৷ যিনি সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক কর্মীদের জন্য সহজেই অ্যাক্সেসেবল ৷জীবনের শেষ অধ্যায় পর্যন্ত যা অক্ষুন্য ছিল৷

কি অদ্ভুত পরিস্থিতি ! বর্তমানে বাফার জ্যোনের মধ্যে কাকুর বাড়ি । যাওয়া নিষেধ ৷ এমনি সময় হলে কয়েক হাজার মানুষ এখন বোধহয় ওনার বাড়ির সামনে ভীড় করত ৷শেষ শ্রদ্ধা জানাতে তাদের প্রিয় নিমাই দা কে৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here