দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ গোটা দেশের মনে এখন একটাই প্রশ্ন, — ১৭ মের পর কি লকডাউন উঠে যাবে? সেই বিষয়টি এখনও অনিশ্চিত। আজ সোমবার বিকেল ৩ টে থেকে সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভিডিও কনফারেন্সে যে বৈঠক চলছে তাতেই গরিষ্ঠ জনের মত নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে এই বৈঠকেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করলেন। তিনি বলেছেন, “সরকার যখন স্থল সীমানা থেকে শুরু করে ট্রেন, প্লেন সবই চালানো শুরু করে দিয়েছে, তখন ১৭ মে-র পর আর লকডাউন চালিয়ে কী লাভ!” তাঁর কথায়, “কেন্দ্রের সরকার একটার পর একটা পরিষেবা শুরু করে দিচ্ছে, আর রাজ্যগুলিকে বলা হচ্ছে এ জন্য যে সংকট তৈরি হচ্ছে তা মোকাবিলা করতে”। প্রধানমন্ত্রীকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আপনি এই বিষয়টায় নজর দিন। এটা স্ববিরোধিতা হচ্ছে। বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। তাতে সংক্রমণ রুখতে আমাদের অসুবিধা হচ্ছে। আমার মতে, কী খোলা থাকবে আর কী খোলা থাকবে না সে ব্যাপারটা ঠিক করার দায়িত্ব রাজ্যের হাতে ছেড়ে দিন। রাজ্য বাস্তব পরিস্থিতি ও নিজেদের ক্ষমতা বুঝে ঠিক করুক কী ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

বাংলায় কোভিড মোকাবিলা নিয়ে গত প্রায় এক মাস ধরে বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনার মুখে পড়েছে নবান্ন। ক্রমশ তা তীব্রতর হয়েছে। রাজ্যস্তর থেকে সেই সমালোচনা ছড়িয়ে পড়েছে জাতীয় স্তরেও। সর্বভারতীয় সব সংবাদমাধ্যমেও রাজ্যে কোভিড মোকাবিলা নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলার শাসক দল ড্যামেজ কন্ট্রোলের জোরদার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে খবর। এও খবর যে, এ সবের নেপথ্যে রয়েছেন দুঁদে ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর। অনেকের মতে তাঁর পরামর্শেই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল ও রাজ্য সরকার। এবং যে কৌশলের মূল মন্ত্র হয়তো, টার্ন দ্য টেবিল! অর্থাৎ পাল্টা আক্রমণে জর্জরিত করে দাও বিজেপি ও কেন্দ্রের সরকারকে।

এদিন মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক শেষ হওয়ার আগেই শাসক শিবির থেকে মমতার বক্তব্যের যে সারাংশ সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া হয়েছে তাতে সেই কৌশলের ভরপুর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

জানা গিয়েছে, বৈঠকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, এমন ভিডিও কনফারেন্স আগেও হয়েছে। আমরা যে সব পরামর্শ দিয়েছি তার কিছুই শোনা হয়নি। কোভিড মোকাবিলায় এখনও পর্যন্ত এক তরফা ভাবে সব কৌশল নির্ধারণ করেছে কেন্দ্রের সরকার। রাজ্যের সঙ্গে প্রকৃতপক্ষে কোনও আলোচনাই করা হয়নি। কিন্তু তার পর যখন প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যায়নি, তখন গোটা দায় রাজ্যের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা চলছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমার স্পষ্ট কথা হল, এ ভাবে রাজ্যের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে না দিয়ে বলুন যে আগামী দিনে কোভিড সংক্রমণের মোকাবিলায় কী ভাবে এগোনো হবে। যে রকম অব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে লকডাউন হয়েছে এবং তার ফলে যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে তার থেকে মুক্তির পথ কী হবে?”

মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য শুনে বিজেপি নেতারা প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করে দিয়েছেন। রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “কেন্দ্রের লকডাউনের শর্ত তো মুখ্যমন্ত্রী নিজেই ভাঙতে উৎসাহ দিয়েছেন। কখনও মিষ্টির দোকান, কখনও ফুলের বাজার, কখনও পানের দোকান খুলতে বলেছেন। তাঁর কথায়, কাকে বোকা বানাতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? বাংলার মানুষ তো দেখেছেন, লকডাউন ভাঙার সাহস কে যুগিয়ে চলছিলেন একশ্রেণির লোককে!”

এ সব রাজনৈতিক চাপানউতোর চলবেই। আটকানো যাবে না। কারণ, কোভিড, করোনা যাই আসুক, এও ঘোর বাস্তব যে বাংলায় এক বছরের মধ্যেই বিধানসভা ভোটও আসছে।

জানা গিয়েছে, এদিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, ভিন রাজ্যে আটকে থাকা বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরাতে রাজ্য সরকার আগ্রহী। ইতিমধ্যে এক লক্ষ শ্রমিককে ফেরানো হয়েছে। তবে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট বলেছেন, বাইরে থেকে যে শ্রমিকরা আসবেন তাঁদের একশ শতাংশ টেস্ট করে পাঠাতে হবে। নইলে এই পরিযায়ী শ্রমিকদের কারণেই রাজ্যের তিনটি গ্রিন জেলা এখন অরেঞ্জ হয়ে গিয়েছে।

কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের আর্থিক দাবিদাওয়ার প্রসঙ্গও এদিন তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, বকেয়া ৫২ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্র দ্রুত দিক বাংলাকে।

সেই সঙ্গে পরিশেষে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার জন্য বার বার কেন্দ্র রাজ্যকে নিশানা করেছে। পর্যবেক্ষণের নামে কেন্দ্রীয় টিম পাঠিয়ে রাজ্যের অফিসারদের সময় নষ্ট করেছে। কিন্তু আমি মনে করি, এখানে কারও দোষ নেই। না কোনও রাজ্যের না আমাদের নাগরিকদের। এই ভাইরাসের সংক্রমণ বাইরের দেশ থেকে এসেছে। আমরা যখন বাইরের কোনও দেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছি না, তখন কেন নিজেদের রাজ্য বা লোকের বিরুদ্ধে আঙুল তুলব। তাই পারস্পরিক দোষারোপ না করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করাই সময়ের দাবি। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার উপর যেন বুলডোজার চালানো না হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here