দেশের সময়ওয়েবডেস্কঃ কুড়ি সালের সেপ্টেম্বর মাসের স্মৃতি ফিরছে। করোনা সংক্রমণ ক্রমেই বিপদসীমা পার করছে। ৪৭ হাজার নতুন সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গতকালই। আজ দেখা গেল, গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিড আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৫৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। সংক্রমণে মৃত্যু আড়াইশোর বেশি। গত বছর এই সময় সংক্রমণের পারদ এত বেশি চড়েনি। সেপ্টেম্বরে গিয়ে দৈনিক আক্রান্ত ৯০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তবে অক্টোবরের পর থেকেই ফের সংক্রমণের পাল্লা কমেছিল। কিন্তু এবার করোনা লাগামছাড়া। বিপজ্জনকও বটে। কারণ সংক্রমণের হার বাড়ছে, স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানাচ্ছে ভাইরাসের মধ্যে এত বেশি মিউটেশন বা জিনগত বদল হচ্ছে যে ক্রমেই তা সুপার-স্প্রেডার হয়ে দেখা দিচ্ছে বেশিরভাগ রাজ্যেই।

আরও একটা বিপদের কথা জানাচ্ছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক, তা হল দেশে কোভিড সংক্রমণে মৃতদের বেশিরভাগই ৪৫ বছর বা তার বেশি বয়সী। সমীক্ষায় দেখা গেছে, সংক্রমণে মৃত্যুর ৮৮ শতাংশেরই বয়স ৪৫ বছরের বেশি। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ বলছেন, এই বয়সী লোকজনের মধ্যে করোনায় মৃত্যুর হার ২.৮৫ শতাংশের কাছাকাছি, যেখানে সংক্রমণে মৃত্যুর জাতীয় গড় ১.৩৭ শতাংশ। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আগেই বলেছিলেন, দেশে ক্রনিক অসুখে ভোগা রোগী ৬৫ শতাংশের কাছাকাছি।

হার্টের অসুখ, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, লিভার-কিডনির রোগ, ক্যানসার ইত্যাদি রোগ থাকলে সংক্রমণ দ্রুত বাসা বাঁধতে পারে শরীরে। মৃত্যুহারও বাড়ে। এই কোমর্বিডিটি শুধু প্রবীণদের আছে তা নয়, কম বয়সীদের মধ্যেও দেখা গেছে। তাছাড়া সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, কোমর্বিডিটির রোগীরা ছাড়াও মৃত্যুহার বাড়ছে। তাই দেরি না করে ৪৫ বছরের ওপর থেকে সকলকেই করোনার প্রতিষেধক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।


মহারাষ্ট্র, কেরল, কর্নাটক, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, পাঞ্জাব ও পশ্চিমবঙ্গে করোনা সংক্রমণ বাঁধ ভেঙেছে। মহারাষ্ট্রে একদিনেই নতুন সংক্রমণ ধরা পড়েছে ৩১ হাজারের বেশি। করোনায় মৃত্যু হাজারের বেশি। সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ মুম্বই, নাগপুর, ঠাণে, পুণেতে। মুম্বইতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন সংক্রমণ ধরা পড়েছে ৫ হাজার ১৮৫। দেশের মেট্রো শহরগুলির মধ্যে যা সবচেয়ে বেশি। সংক্রমণের হার বেড়েছে ৪৮ শতাংশ, যা রীতিমতো অ্যালার্মিং। মুম্বইয়ের বর্তমান করোনা পরিস্থিতি দেখে ঘুম উড়েছে স্বাস্থ্য দফতরের। একই অবস্থা নাগপুর ও পুণেতে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে শুরু করেছে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে। পাঁচ রাজ্যে ভোটের পরে সংক্রমণের পারদ যে আরও চড়বে সে ব্যাপারে অনেকটাই নিশ্চিত স্বাস্থ্যকর্তারা। তাই এখন থেকেই সংক্রমণে লাগাম টানতে বিভিন্ন রাজ্যে করোনার বিধিনিষেধ আরও কড়া করা হচ্ছে। করোনা সংক্রমণ যেভাবে ছড়াচ্ছে তাতে প্রকাশ্যে যে কোনও অনুষ্ঠান পালন বন্ধ করতে রাজ্যগুলিকে নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। হোলি, শবে-বরাত, বিহু, ইদ, ইস্টার ইত্যাদি উৎসব পালনে স্থানীয় স্তরে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।


কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানাচ্ছে, করোনার ডবল মিউট্যান্ট ভ্যারিয়ান্ট ছড়িয়ে পড়েছে ১৮টি রাজ্যে। ‘ইন্ডিয়ান সার্স-কভ-২ জিনোমিক্স কনসরটিয়াম’ (INSACOG) জানাচ্ছে, ১০,৭৮৭ কোভিড আক্রান্তের নমুনার জিনোম সিকুয়েন্স বা জিনের গঠন বিন্যাস বের করে ৭৭১ রকম ভ্যারিয়ান্ট পাওয়া গেছে। করোনার তিন বিদেশি প্রজাতি যথা ব্রিটেন স্ট্রেন (বি.১.১.৭), দক্ষিণ আফ্রিকার মিউট্যান্ট স্ট্রেন (বি.১.৩৫১) ও ব্রাজিলিয় স্ট্রেনের (পি.১) মিউটেশনের ফলেই এই ডবল ভ্যারিয়ান্ট ছড়াচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। দেশের ১০টি ল্যাবরেটরিতে আক্রান্তের নমুনার জিনোম সিকুয়েন্স করা হচ্ছে। দুরকম মিউটেশন হতেও দেখা গেছে–E484Q এবং  L452R। মহারাষ্ট্রেমূলত করোনার এমন মিউটেশনের ফলে সংক্রামক স্ট্রেন ছড়িয়ে পড়েছে। কেরলে N440K মিউটেশন বেশি দেখা গেছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের মেলামেশা, জনসমাগম যত বাড়ছে কোভিড স্ট্রেন তত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। যত বেশি মানুষের শরীরে ঢুকছে স্ট্রেনের জেনেটিক মিউটেশন ততটাই বেশি হচ্ছে। তাই কোভিডের সুপার-স্প্রেডার জিনের আধিক্য বাড়ছে দেশে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here