দেশের সময় ওয়েবডডেস্কঃ যত দিন যাচ্ছে গ্রীষ্মের দাবদাহের সঙ্গে রাজনৈতিক তাপমাত্রাও বাড়ছে। ভোট বাজারে আক্রমণ পাল্টা আক্রমণে যখন তপ্ত বাংলা তখন বিষ্যুদবার যেন বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ করতে সমস্ত আগল ভেঙে ফেললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।


এদিন পাথরপ্রতিমার সভা থেকে মমতা বলেন, “একটা লোক যদি কারও কাছ থেকে ৫০০ টাকা নেয়, তাহলে বলছে তৃণমূল কংগ্রেসে সব চোর। আমি চোর? আমি ডাকাত? আমি খুনি? আমি মানুষকে জীবন দিয়ে ভালবাসি। আর তুমি শালা খুনিদের রাজা। খুনিদের জমিদার। ডাকাতদের জমিদার। সব টাকা খেয়ে নিয়েছো।”

অমিত শাহ দু’দিন আগের সভা থেকে সরাসরি দিদির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন। বলেছিলেন, “ভাইপোর টাকা তো আপনার কাছে যায়।” সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এও বলেন, সেই জন্যই দিদির কাছে পাঁচশ টাকা কোনও ব্যাপার নয়। কিন্তু যাঁরা মজুর, খেটে খায় তাদের কাছে ৫০০ টাকাই অনেক বড়। ৫ আনাও কাটমানি নেবে কেন!


দুর্নীতি ও রাজনৈতিক সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে নরেন্দ্র মোদীও সরাসরি নিশানা করেছিলেন দিদিকে। বলেছেন, দিদির পাঠশালায় কাটমানিই সিলেবাস। আর বাংলায় ভাইপোর উইন্ডোই সিঙ্গল উইন্ডো। তবে একটা কথা ঠিক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আক্রমণে শালীনতার সীমা ছাড়াননি বিজেপির এই দুই শীর্ষ নেতা। দুজনেই মমতাকে কখনও দিদি কখনও বা মমতাদিদি বলে সম্মোধন করছেন।

বিপরীতে মমতা ছিলেন নিজস্ব ছন্দে। ভোট ঘোষণার আগে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তুই তোকারি পর্যন্ত করেন তিনি। এ বার শালীনতার সীমাও অতিক্রম হয়ে গেল। অথচ তাৎপর্যপূর্ণ হল, এই ভোটে তৃণমূল নিজেদের বাংলা ও বাঙালির সংস্কৃতির রক্ষক হিসাবে তুলে ধরতে চেয়েছে। বলতে চেয়েছে বহিরাগতর আক্রমণে বাংলার সংস্কৃতি বিপন্ন।


এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বিজেপি-র মুখপাত্র সায়ন্তন বসু বলেন, “আমরা অনুরোধ করব বাংলার মানুষের কাছে, ভোটের কটা দিন বাড়ির বাচ্চাদের সামনে যেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতা না চালান। তাতে শিশু মনে অন্য প্রভাব পড়তে পারে। ভোটের পর এমনিই উনি চলে যাবেন। আর তখন এসব শুনতে হবে না।”


সিপিএম নেতা শমীক লাহিড়ী বলেন, “একজন মুখ্যমন্ত্রীর যদি এই ভাষা হয় তা হলে বোঝাই যাচ্ছে দলটার কী সংস্কৃতি। এরা আবার বাংলার সংস্কৃতির সত্ত্ব নিতে চাইছে। ছিঃ ছিঃ।” আর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বলেন, “এতে আমার কিছু বলার নেই। বাংলার মানুষ বলুক এমন মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের পছন্দ কিনা।”

বিজেপির বিরুদ্ধে আরও নানা ইস্যুতে আক্রমণ শানান দিদি। তাঁর অভিযোগ, কে কী খাবে, কে কী পরবে সব বিজেপি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। মমতা এদিন পাথরপ্রতিমার সভায় বলেন, “বলে কিনা মেয়েরা পোয়াতি হলে ডিম খাবে না। তাহলে কী খাবে? তোমার মাথা খাবে?”

প্রথম দফার নির্বাচনের আগে বৃহস্পতিবারই প্রচারের শেষ দিন। আর তাই শেষ বেলার প্রচারে ঝড় তুলতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷পৌঁছন দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমায়। বিজেপি-কে নিশানা করার পাশাপাশি বিগত ১০ বছরের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরেন নেত্রী। তিনি বলেন, ‘আমফান, বুলবুলে বিজেপি আপনাদের কারও পাশে ছিল না। আমরা আমফানে ১৯ লাখ মানুষকে বাঁচিয়েছি। নবান্নে বসে সারা রাত জেগে পাহারা দিয়েছি।’ একইসঙ্গে মমতার বক্তব্য, ‘দুর্গত মানুষদের পাশে থাকতে কোনও কার্পণ্য করিনি। বিজেপি পার্টির মতো ধান্দাবাজ নই ।

এদিন ফের একবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করার পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন নাম না করে আব্বাস সিদ্দিকিকেও আক্রমণ করেন । তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে একটা রাজনৈতিক দল গজিয়ে উঠেছে। বিজেপি-র থেকে প্রচুর টাকা নিয়েছে। আর সংখ্যালঘু ভোট ভাগ করবে বলছে।’

অন্যদিকে, পাথরপ্রতিমায় মমতার আশ্বাস, ‘আড়াই হাজার টিউবওয়েল দেওয়া হয়েছে। বাংলা আবাস যোজনাতে ৩০ লক্ষ বাড়ি তৈরি করে দিয়েছি। ক্লাস নাইনের ছেলেমেয়েরা আগামী দিনে সবুজ সাথী সাইকেল পাবে। ক্লাস টুয়েলভের ছেলেমেয়েরা স্মার্ট ফোনের জন্য ১০ হাজার টাক পাবে। দুয়ারে দুয়ারে রেশন পৌঁছবে। কৃষকদের জন্য বছরে দশ হাজার টাকা। কোনও কৃষক মারা গেলে ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘সেল্ফ হেল্প গ্রুপে ৫ হাজার টাকা করে পাবে। আরও ১০ লক্ষ মেয়ে নেব। তাদের ২৫ হাজার কোটি ঋণ দেব। তাঁরা যাতে নিজের পায়ে দাঁড়ায়। মাত্র ২ শতাংশ সুদের হারে ৩০ শতাংশ ভর্তুকি দেব। বিধবাদের জন্য ভাতা দেব। ১৮ বছরের পর যে কোনও বিধবাকে ১ হাজার টাকা করে ভাতা। মৎস্যজীবীদের মৃত্যু হলেও ক্ষতিপূরণ। বাড়ির মহিলাদের ৫০০ টাকা করে হাতখরচ। এসসি, এসটি মহিলাদের জন্য ১০০০ টাকা হাতখরচ।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here