দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ লড়াই শেষ। করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে হেরে গেলেন ফলতার তৃণমূল বিধায়ক তমোনাশ ঘোষ।

গত সপ্তাহেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তমোনাশের ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। বলেছিলেন, “চিকিৎসকরা চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমি জানি না তমোনাশ ঘোষ বাঁচবে কিনা।” আশঙ্কাই সত্যি হল।

তমোনাশবাবু ছিলেন দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান। সেই কাজেই গত মাসে দুর্গাপুর গিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই অসুস্থ হয়ে পড়েন ফলতার তিন বারের তৃণমূল বিধায়ক। তারপর কলকাতায় ফিরে আসার পর ২২ মে তাঁর নমুনা পরীক্ষা হলে করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে।

কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। গত তিনদিন ধরে সঙ্কটজনক ছিল তাঁর অবস্থা। শেষপর্যন্ত বুধবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি। জানা গিয়েছে, শরীরের একাধিক অঙ্গ–প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়ার কারণেই মৃত্যু হয়েছে বিধায়কের। হৃৎপিণ্ড, লিভার, কিডনি–তিনটিই বিকল হয়ে গিয়েছিল বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। করোনায় আক্রান্ত হয়ে পশ্চিমবঙ্গে এই প্রথম কোনও বিধায়কের মৃত্যু হল। 

এর আগে, হাসপাতালে ভর্তির সময় মাঝে সুস্থও হয়ে উঠছিলেন তিনি। মাঝে জানা গিয়েছিল তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। কিন্তু কিছু দিন আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন তমোনাশের পরিস্থিতির অবনতির কথা। আর বুধবার শেষ হল সমস্ত লড়াই।

কালীঘাটে বাড়ি তমোনাশ ঘোষের। তবে তিনি দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতা বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন। ২০০১ সালে ওই আসনে তৃণমূলের টিকিটে জয়লাভ করেন তিনি। তার পর থেকে টানা চারবার বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।

ইতিমধ্যে টুইটে শোকপ্রকাশ করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি লেখেন, ‘খুবই, খুবই দুঃখের খবর। ১৯৯৯ সাল থেকে ফলতার তিনবারের বিধায়ক ও দলের কোষাধ্যক্ষ তমোনাশ ঘোষ আজ আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন। ৩৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি জনগণ ও দলের জন্য অনেক কিছু করেছেন। 

তাঁর সামাজিক কাজের মাধ্যমে অনেক অবদান রয়ে গিয়েছে তমোনাশের। তিনি এমন এক শূন্যতা রেখে গেলেন যা পূরণ করা কঠিন হবে। আমাদের সবার পক্ষ থেকে তাঁর স্ত্রী ঝর্ণা, তাঁর দুই কন্যা, বন্ধু এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা রইল।’‌

তমোনাশবাবুর দুই মেয়েও কোভিডে সংক্রামিত হয়েছিলেন। তাঁরা অবশ্য সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন।তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে দলে ছিলেন তমোনাশবাবু। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বহু আন্দোলনের শরিক ছিলেন তিনি। বরাবরই মিশুকে প্রকৃতির মানুষ, তাই অন্য দলেও তাঁর ব্যক্তিগত স্তরে অনেক বন্ধু রয়েছে। এদিন সকালে তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়েই শোকের ছায়া নেমে এসেছে শাসক দলে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই নিয়মিত তমোনাশ বাবুর ব্য়াপারে হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছিলেন পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তমোনাশবাবুর দুই মেয়েও পরিবহণ মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছিলেন। সতীর্থের মৃত্যুর খবরে তিনি অত্যন্ত মর্মাহত বলে তাঁর ঘনিষ্ঠরা জানাচ্ছেন।দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক আন্দোলনের অন্যতম সঙ্গী তমোনাশবাবুর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইট করে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, “ফলতার তিন বারের বিধায়ক এবং ১৯৯৮ সাল থেকে দলের কোষাধ্যক্ষ আজ আমদের ছেড়ে চলে গেলেন। আমাদের সঙ্গে তিনি ৩৫ বছর ধরে ছিলেন। সাধারণ মানুষ ও দলের প্রতি অত্যন্ত নিষ্ঠাবান ছিলেন তিনি। সামাজিক নানা কাজে তাঁর অবদান রয়েছে।” তমোনাশবাবুর স্ত্রী ঝর্ণা ঘোষ, দুই মেয়ে ও পরিবারপরিজনদের সমবেদনা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here