দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দিল্লিতে কৃষক-পুলিশ সংঘর্ষে পরিস্থিতি উত্তপ্ত। লালকেল্লায় উড়েছে কৃষক সংগঠনের পতাকা। সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে এক কৃষকের। আহত হয়েছেন অনেক পুলিশকর্মীও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে হয়েছে পুলিশকে। নিরাপত্তা নিয়ে তড়িঘড়ি বৈঠক ডেকেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কিন্তু দিল্লিতে এদিন এই ঘটনার জন্য কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকারকেই দুষলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ট্যুইটে তিনি লিখেছেন, ‘দিল্লির রাজপথে আজ যা ঘচল তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। গোটা ঘটনাই সাংঘাতিক বেদনাদায়ক। কেন্দ্রের উদাসীন এবং অসংবেদনশীল মনোভাবের কারণেই এমন ঘটনা ।’ কেন্দ্রের কৃষি আইনের প্রতিবাদে প্রথম থেকেই সরব তৃণমূলনেত্রী । এই আইন প্রত্যাহারের দাবিতে দিল্লি সীমান্তে কৃষকদের আন্দোলনকেও সমর্থন জানিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এদিনের ঘটনাতেও কেন্দ্রকেই দায়ী করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষক ভাই-বোনদের প্রতি কেন্দ্রের অসংবেদনশীল ও উদাসীন মনোভাবই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। নিজেদের ব্যর্থতায় ওনাদের দুষছে কেন্দ্র ।’

একইসঙ্গে এদিন ফের ট্যুইটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, কেন এই আইন পাসের সময় কৃষকদের কী মত তা জানতে চাওয়া হয়নি। দু’মাস ধরে গোটা দেশ সহ দিল্লি সীমান্তে কৃষকদের প্রতিবাদ, বিক্ষোভ অবস্থান সত্ত্বেও কেন কেন্দ্র তাদের ক্ষোভ প্রশমনের কোনও চেষ্টা করল না কেন? ট্যুইটে তাঁর দাবি, ‘কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের আস্থা অর্জনের কোনও চেষ্টাই করেনি কেন্দ্র । এমনকী গত দু’মাস ধরে এই কৃষক আন্দোলন নিয়ে বরং গা-ছাড়া মনোভাবই দেখিয়েছে কেন্দ্র । এই আইন তৈরি ও প্রণয়নের সময় তাদেরও যুক্ত করার উদ্যোগ নিতে পারত কেন্দ্র কিন্তু তা না করে কৃষকদের সম্মতি ও আস্থা ছাড়াই এই কালা আইন পাস করিয়ে নেয় সরকার।’

এদিন সকাল থেকে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গে গোটা দেশের নজরে ছিল কৃষকদের ট্র্যাক্টর র‍্যালি । সময় যত গড়িয়েছে ততই কৃষক বিক্ষোভের আঁচে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজধানীর রাজপথ । বিশৃঙ্খলার মধ্যেই দিল্লির আইটিও-তে নিজের ট্রাক্টর উল্টে গিয়ে মারা যান এক আন্দোলনকারী কৃষক। পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে ট্র্যাক্টর মিছিল এগিয়ে চলার সঙ্গে সঙ্গেই শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে বিশৃঙ্খলা । কোথাও পুলিশকে লক্ষ করে ছোড়া হল পাথর কোথাও আবার তাদের উপর দিয়েই ট্র্যাক্টর চালিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টারও অভিযোগ ওঠে । অবাধে ভাঙচুর চালানো হল পুলিশের গাড়িতে, বাসে । পাল্টা বিক্ষোভরত কৃষকদের রুখতে কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটানো থেকে চলে লাঠিচার্জও । বিশৃঙ্খলা চরমে ওঠে লালকেল্লায় পৌঁছায় মিছিল । এই প্রতিবাদে অংশগ্রহণকারী বেশ কিছুজন ঐতিহ্যশালী এই কেল্লার পাঁচিল বেয়ে ভিতরে ঢুকে ত্রিরঙার বদলে কৃষক সংগঠনের বেশ কিছু পতাকা সেখানে লাগিয়ে দেয় । কৃষকদের কর্মসূচি হিংসাত্মক রূপ নিতে বন্ধ করে দেওয়া হয় সিঙ্ঘু, গাজিপুর, টিকরি সীমান্ত, মুকারবা চক ও নাঙ্গলোই এলাকার ইন্টারনেট সংযোগ । রাজধানীর এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে নিজের বাসভবনে জরুরি বৈঠক ডাকেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

এই পুরো ঘটনার পিছনেই ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন বিরোধীরা । বাম থেকে কংগ্রেস, তৃণমূল থেকে আপ সমস্ত দলেরই দাবি, সুচিন্তিতভাবে কৃষক আন্দোলনকে কলঙ্কিত করার স্বার্থেই এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে । কিষান নেতা রাকেশ টিকাইত বলেন, ‘আমরা শান্তিতে মিছিল করেছি। কিন্তু যারা অশান্তি করছে, তাদের আমরা চিনে ফেলেছি। দিল্লিতে পৌঁছলেও সেখানে বসে আন্দোলনের কোনও পরিকল্পনা আমাদের ছিল না। এমনকী লালকেল্লা যাওয়ার কোনও পরিকল্পনা কৃষক সংগঠনের ছিল না। কিন্তু তাও কেন এমন ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ কিষান নেতা হান্নান মোল্লাও একই দাবি জানিয়েছেন । সিপিএম নেতা তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘লালকেল্লার এই ঘটনার পিছনে রয়েছে ষড়যন্ত্র। এর নিরপেক্ষ তদন্ত করা হোক ।’

তৃণমূল সুপ্রিমোর মতোই কৃষক বিক্ষোভের এমন পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্রকে দায়ী করেছে আপ সরকারও । দলের তরফে বলা হয়, “এদিনের প্রতিবাদ আন্দোলনের যে হিংসাত্মক রূপ দেখা গেল, তার কঠোর নিন্দা করছি। গত ২ মাস ধরে কিন্তু কৃষি আন্দোলন শান্তিপূর্ণই ছিল। এটা দুঃখজনক যে, কেন্দ্রীয় সরকার পরিস্থিতির এমন অবনতি হতে দিল।” দিনভর অশান্তির পর অবশেষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ট্রাক্টর মিছিল অবিলম্বে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করল সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা।

মোদী সরকার যেদিন থেকে সংসদে তিনটি কৃষি আইন পাশ করেছিল সেদিন থেকেই তার বিরোধিতা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। একদিকে সংসদে যখন তৃণমূল সাংসদদের অবস্থান বিক্ষোভ করতে দেখা গিয়েছে, অন্যদিকে তখন বিভিন্ন সভা থেকে বারবার এই আইনের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছেন তিনি ও তাঁর দল কৃষকদের পক্ষে রয়েছে।
দিল্লি সীমান্তে যখন কৃষকরা আন্দোলন করছেন, তখনও তৃণমূলের সমর্থন তাদের কাছে পৌঁছেছে। কৃষকদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন। ফোনে মমতা কথা বলেছেন কৃষক নেতাদের সঙ্গে। তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন তাঁর দল কৃষকদের সঙ্গে রয়েছে ও আন্দোলনে সম্পূর্ণ সমর্থন করছে। মোদী সরকারকে এই আইন প্রত্যাহারের দাবিও করেছেন তিনি। ফের সেই দাবি এদিন শোনা গেল তৃণমূল নেত্রীর গলায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here