দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আশঙ্কার মেঘ ঘনাল এবার কলকাতায়!

নোভেল করোনা আতঙ্কে আজও বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভিড়। কুয়েতে কর্মরত বহু মানুষ ফিটনেস সার্টিফিকেট নিতে এসেছেন হাসপাতালে। নোভেল করোনা সন্দেহে এই মুহূর্তে বেলেঘাটা আইডি–তে ভর্তি রয়েছেন সাত জন। এদের মধ্যে রয়েছেন এক বাংলাদেশি নাগরিক ও ইন্দোনেশিয়া ফেরত এক যুবক। বৃহস্পতিবার করোনা সন্দেহে ভর্তি হন তিন জন রোগী। এদের মধ্যে একজন জাপান ফেরত, অন্যজন দুবাই থেকে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তৃতীয়জন বাংলাদেশি। এর আগে আরও দু’‌জন করোনা সন্দেহে বেলেঘাটা আইডিতে ভর্তি হন, যারমধ্যে একজন ইন্দোনেশিয়া ফেরত। ৪ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার বা শনিবার রিপোর্ট পাওয়া যাবে। এমনটাই জানা গিয়েছে হাসপাতাল সূত্রে।

করোনার সংক্রমণ সন্দেহে শুক্রবার সকালে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি করা হল এক মহিলা-সহ তিনজনকে। সূত্রের খবর, ওই তিনজনকেই আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। তাঁদের রক্তের নমুনা পাঠানো হয়েছে পুণের ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে। সেই রিপোর্ট হাতে আসার পরেই জানা যাবে তিনজনের শরীরে সিওভিডি-১৯ পজিটিভ কিনা।

সিঙ্গাপুর ফেরত কসবার এক মহিলার শরীরে করোনার সংক্রমণ সন্দেহ করা হচ্ছে। সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফেরা বেলেঘাটার এক যুবক এবং কুয়েত ফেরত টালিগঞ্জের আরও এক যুবক। বেলেঘাটা আইডিতে এর আগেও উহান ফেরত কয়েকজনকে সংক্রমণ সন্দেহে ভর্তি করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে বেলেঘাটার হাসপাতালে ভাইরাসের সংক্রমণ সন্দেহে ভর্তি আট জন।

ভারতে এখনও পর্যন্ত ৩১ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তাঁদের মধ্যে ১৬ জন ইতালীয় পর্যটক। বিশ্ব জুড়ে এই ভাইরাস ৩ হাজার মানুষের প্রাণ নিয়েছে। সংক্রামিত ৯৫ হাজারেরও বেশি। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন জানিয়েছেন, দেশের ২১টি বিমানবন্দরে চলছে বিশেষ থার্মাল স্ক্রিনিং। নজরদারি চলছে সমুদ্রবন্দরগুলিতেও। বিদেশি পর্যটকদের শরীরে সংক্রমণ সন্দেহ করা হলেই তাঁদের ১৪ দিনের জন্য পাঠানো হবে আইসোলেশন ক্যাম্পে।

সংক্রামিত রোগীদের আলাদা করে রাখার জন্য বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ১৬টি কেবিন ও দু’টি আইসিইউ প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য ভবনের সঙ্গে কথা হলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর মতো যাবতীয় ওষুধপত্রও মজুত রাখা হয়েছে। অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশেষ টিম তৈরি রাখা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নোভেল করোনাভাইরাস বা উহান ভাইরাসের সংক্রমণ অনেকটাই সার্স বা ‘সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম’-এর মতো। প্রবল জ্বর-সর্দি-কাশি থেকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন রোগী।

সংক্রমণ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে গোটা শরীরেই। বিকল হতে শুরু করে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। শেষ পরিণতি মৃত্যু। যার জন্য বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের প্রতিটি কেবিনে আইসোলেশন ওয়ার্ডের মতো ব্যবস্থা রয়েছে। প্রত্যেক রোগীর জন্য রয়েছে আলাদা অক্সিজেন মাস্ক। বাথরুমও আলাদা। ২৪ ঘণ্টা রোগীদের পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে৷

ভারতে প্রায় ৩০ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। এই অবস্থায় সাধারণ মানুষকে ভয় না পেয়ে সুস্থ থাকার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পাশাপাশি কীভাবে সুস্থ থাকা যায় এই সময় সেই বিষয়েও মানুষকে আশ্বস্ত করেছেন তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। অন্যদিকে, করোনা ভাইরাস নিয়ে অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।

ভারত করোনা মোকাবিলায় পুরোপুরিভাবে তৈরি রয়েছে, সংসদে বিবৃতি দিয়ে জানালেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন। চিকিৎসা নিয়েও তৎপর রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর। সব সরকারি হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডের নির্দেশ। পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য কর্মীদের কর্মশালা। ভারতে ক্রমশ ছড়াচ্ছে করোনার সংক্রমণ। তাই রোগীদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য রাজ্যের সবকটি হাসপাতালকেই তৈরি থাকার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর। প্রয়োজনে ভেন্টিলেশন সাপোর্টেরও ব্যবস্থা রাখতে হবে।

জেলা হাসপাতালেও আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি রাখতে হবে। মহকুমাস্তরেও করোনা মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হবে। নির্দেশ জারি করা হয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে।

অন্যদিকে ভারত বাংলা -দেশের পেট্রাপোল সীমান্তের দু’দেশের যাত্রীদের কে নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে,কারণ ভারত -বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াতের সবচেয়ে গুরুত্ব পূর্ণ সড়ক পথ পেট্রাপোল সীমান্ত।এই পথেই রোজ হাজার হাজার বিদেশিরা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে যাতায়াত করেন তাঁদের ব্যাবসা বা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য৷ভারতের এক ব্যাবসায়ীর কথায় বাংলাদেশের বহুমানুষ চিনে ব্যাবসার প্রয়োজনে বছরের পর যাতায়াত করেন এবং তাঁদের মধ্যে অনেকেই আবার পেট্রাপোল দিয়ে ভারতে ঢোকেন এবং খুব অনায়াসেই এই পথে কলকাতা হয়ে চিনে পাড়ি দেন বৈধ পাশ পোর্টের মাধ্যমে। তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার তেমন কোন ব্যাবস্থা চোখে পড়ছে না এখনও পর্যন্ত। যদিও দেশের সময় এর খবরের জেরে কিছুদিন আগে একটি মেডিকেল ক্যাম্প বসেছিল সীমান্তে কিন্তু সেটাও নাম মাত্র বলেই অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় মানুষ৷

কিন্তু প্রশ্ন হল এখন তারা বাংলাদেশে ফিরে ভারতে ঢুকছেন অথচ কোন সংক্রমণ ঢুকছে কিনা সেটাই দেখা উচিত প্রশাসনের। যদিও শুক্রবার পেট্রাপোল সীমান্তে অভিবাসন দফতরে গিয়ে দেখাগেল তেমন কোন পরিকাঠামো নেই,এক কথায় অবাধ যাতায়াত চলছে,এক প্রশাসনিক কর্তার কথা ছিল এমন,’চিন থেকে কি হাওয়ায় উড়ে আসবে করোনা ভাইরাস’ যত সব আজগুবি প্রশ্ন৷ যদিও এদিন বাংলাদেশের অনেক যাত্রীদের মুখে মাস্ক পড়ে থাকতে দেখা যায়৷ তাদেরকে প্রশ্ন করলে বলেন ঠান্ডা -গরমে সর্দি লেগেছে তাই মাস্ক ব্যাবহার করছি৷ ভারতের এক রপ্তানী কারক প্রদীপ দে জানান,চিনে এই মাস্ক এর অভাব পড়েছে ভারত থেকে চিনের বাজারে যাচ্ছে প্রচুর মাস্ক।অনেক বাংদেশী ব্যাবসায়ীরা চিনের সাথে যুক্ত বিভিন্ন ব্যাবসার প্রয়োজনে এবং প্রচুর শ্রমিক কাজ করেন চিনে তারা অনেকেই দেশে ফিরে ভারতে ঢোকেন এই পথেই, চিন্তার যথেষ্ঠ কারণ থেকেই যায়।কিন্তু আজ শুক্রবার সকালে পেট্রাপোল সীমান্তের ছবিটা ছিল সম্পূর্ণ উল্টো, কোথাও কোন মেডিকেল টিমের সদস্যদের দেখা মেলেনি।পরিস্থিতি জানতেগিয়ে শুল্ক বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, মুলত এদিন বাংলাদেশে ছুটি থাকে তাই যাত্রী সংখ্যা কম,হয়ত মেডিকেল টিম আশেপাশে কোথাও আছে।


পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এন্ড স্টাফওয়েল ওয়েল ফেয়ার এ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী জানান ছুটি বা কোন কারণে যাত্রী যাতায়াত সংখ্যা কম বেশি হতে পারে ,কিন্তু প্রশ্ন হলো পেট্রাপোল স্থলবন্দরে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে কতটা প্রস্তুত প্রশাসন।কারণ তেমন কোন পরিকাঠামো চোখেই পড়ছেনা এখানে।অথচ কয়েক হাজার ভিনদেশী নিত্যযাত্রীর যাতায়াত করেন এই পথে।আর ভয়াবহ করোনা সংক্রমণের জন্য এক জনই যথেষ্ঠ।সুতরাং করোনা আতঙ্ক পেট্রাপোল সীমান্তে প্রতিমুহুর্তে তাড়া করে বেড়াচ্ছে বলা যেতেই পারে৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here