দেশের রান্নাঘর: ছোটবেলা থেকেই মাকে দেখেছি রান্না করতে৷ ওঁনার হাতের রান্না সবসময় আমার প্রিয়৷ সবচেয়ে ভালো লাগত শুক্তো৷ গরম ভাতের সঙ্গে শুক্তো খেতে যে কী ভালো লাগে সেটা কোনও বাঙালিকে বুঝিয়ে বলতে হয় না৷ মায়ের কাছ থেকেই আমি শেফ হওয়ার উদ্যম পেয়েছি৷

রান্নাবান্না শিখেছি ওঁনারর কাছে৷ বলা বাহুল্য শুক্তো রাঁধতে শিখিয়েছেন মা৷ উনি বরাবর দারুন রান্না করতেন তো৷ তাই আমিও ভাবতাম যে আমিও বড় হয়ে মায়ের মতো হব৷ শুক্তো অনেক রকমের হয়৷ কেউ তরমুজের খোলা দিয়ে শুক্তো বানান, কেউ আবার কাঁচকলা বা বেগুন বাদ দিয়ে বানান৷

আমার কিন্তু শুক্তো রান্না করার বা খাওয়ার ক্ষেত্রে একেবারে সাবেকি স্টাইল পছন্দ৷ যেহেতু আমি সবকিছুই খাই সেহেতু বিশেষ কোনও সবজি বাদ দিয়ে রান্না করার প্রয়োজন পরে না৷

আসলে দেশের রান্নাঘর আমার প্রিয় জায়গা, ফলে খাওয়ার ক্ষেত্রে বেশি বাছ বিচার করলে চলে না৷ সব কিছুই ভালোবেসে খেতে হয়৷ তবে শুক্তো তো আমার ফেভারিট৷ পরিবারের সদস্য সহ বাইরের আত্মীয় স্বজন অনেক ।তাঁরা বলেন বেগুন, কাঁচকলা কিংবা অন্য কোনও সবজি বাদ দিয়ে শুক্তো রান্না করতে৷ তখন তাঁদের পছন্দ অনুযায়ী আমি রান্না করি৷ তবে সব সবজি দিয়ে রান্না করলে একটা অন্যরকম ও দারুন স্বাদ হয়৷ যারা শুক্তো পছন্দ করেন তাঁদের একটা কথা বলব প্লিজ কোনও সবজি বাদ দেবেন না৷ দেখবেন স্বাদটাই অন্যরকম৷

বেশ ভালো লাগবে৷ আসলে শুক্তো রান্না করার ক্ষেত্রে খুব বেশি এক্সপেরিমেন্ট করলে চলে না৷ যদি আমি এই রান্নায় এক্সপেরিমেন্ট করতে যাই তাহলে যিনি সেটা খাবেন তার ভালো লাগবে না৷ এতে শুক্তোর আসল স্বাদ হারিয়ে যাবে৷
এটা কিন্তু খুব সত্যি৷ সাধারনত সব জায়গাতেই এক রেসিপি মেইনটেন করেই শুক্তো রাঁধা হয়৷ শুক্তো রান্না করার সময় প্রথমে সব সবজি ফ্রাই করে নিই৷ তারপর রাঁধুনি, ঘি আর রিফাইন অয়েল এই তিনটে একসঙ্গে দিয়ে সট করে তরকা মেরে শুক্তো বানাই আমি৷

এক কথায় বলতে পারি বাংলার শুক্তো বেস্ট৷ আরে এটা তো বাঙালি খাবার৷ তাই বাঙালিদের জায়গাতেই এটা ভালো বানানো হবে৷ যুক্তি তো তাই বলে৷ যদিও অন্য কোনও শহরে আমি শুক্তো খাইনি৷

শুক্তো

উপকরন- ১টি করলা (স্লাইস করে কাটা), ১টি রাঙা আলু, ১ কাপ বেগুন (চৌকো করে কাটা), ১ কাপ কুমড়ো (চৌকো করে কাটা), ১০টি সজনে ডাটা, ১/২ কাপ কাঁচা পেঁপে, ১/২ কাপ ঝিঙে, ১/২ কাপ কাঁচকলা, ১/২ টেবিল চামচ সর্ষে পেস্ট, ১ টেবিল চামচ পোস্ত পেস্ট, ১ টেবিল চামচ চিনি, ১/২ কাপ দুধ, ২ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো, ১ চা চামচ জিরে গুঁড়ো, ১ চা চামচ মেথি, ১টি গোটা শুকনো লঙ্কা, ১টি তেজ পাতা, ১ টেবিল চামচ আদা পেস্ট, ১ টেবিল চামচ ঘি, সর্ষে তেল (প্রয়োজন অনুযায়ী), নুন (দরকার মত)৷

পদ্ধতি- ফ্রাইং প্যানে সর্ষে তেল গরম করুন৷ এবার তেলে বড়ি ছেড়ে সেগুলিকে বাদামি করে ভেজে নিন৷ এবার ওই তেলে করলাগুলিকে ভালো করে ভেজে নিতে হবে৷ পেপার তোয়ালেতে জড়িয়ে বাড়তি তেল ঝড়িয়ে নিয়ে একপাশে রেখে দিন এগুলি৷ ফ্রাইং প্যানে আরও এক চামচ তেল দিয়ে ফের গরম করে নিন৷ এবার ওতে শুকনো লঙ্কা, তেজপাতা আর রাঁধুনি দিয়ে দিন৷ মশলা ফাটতে শুরু করলে সবজিগুলি দিন৷ অল্প ভাজা ভাজা হলে ওর মধ্যে নুন এবং হলুদ গুঁড়ো দিতে হবে৷ অল্প আঁচে ৫ মিনিট মতো রান্না হতে দিন৷ এবার ওতে পোস্ত এবং সর্ষে পেস্ট দিয়ে ৫ মিনিট নাড়াচাড়া করুন৷ জিরে গুঁড়ো এবং চিনি দিন৷ ১ কাপ জল দিয়ে ঢেকে দিন৷ ১৫ মিনিট মত লাগবে সবজি সেদ্ধ হতে৷ হয়ে গেলে বড়ি এবং করলা ভাজা ওতে দিন৷ আদা পেস্ট দিন৷ ৫ মিনিট নাড়াচাড়া করার পর ওর মধ্যে দুধ ও ঘি দিয়ে রান্না হতে দিন৷ ফুটতে শুরু করলে গ্যাস বন্ধ করে দিন৷ ঠান্ডা হলে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here