দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ জুন মাস থেকেই দেশের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ ফ্যাভিপিরাভিরের জেনেরিক ভার্সন ফ্যাবিফ্লু। গ্লেনমার্ক  জানিয়েছিল ফ্যাভিফ্লু ওষুধের একটি ট্যাবলেটের দাম পড়বে ১০৩ টাকা। আজ, সোমবার সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, প্রায় ২৭% দাম কমানো হচ্ছে ওষুধের। এখন ফ্যাভিপিরাভিরের এই ব্র্যান্ডের একটি ট্যাবলেটের দাম পড়বে ৭৫ টাক।

রেমডেসিভিরের দুই জেনেরিক ভার্সন সিপ্রেমি ও কোভিফোরের আকাশছোঁয়া দাম নিয়ে তুমুল চর্চা চলছে। এই দুই ওষুধের নির্মাতা সংস্থা সিপলা ফার্মাসিউটিক্যালস ও হেটেরো ল্যাব দাম কমালেও একটি ভায়ালের (১০০ মিলিগ্রাম)দাম সেই পাঁচ থেকে ছ’হাজার টাকার মধ্যেই। করোনা ওষুধের এই প্রতিযোগিতার দৌড়ে এবার ফ্যাভিপিরাভিরের ব্র্যান্ড ফ্যাবিফ্লু (FabiFlu) ওষুধের দাম কমাতে চলেছে মুম্বইয়ের গ্লেনমার্ক ফার্মাসিউটিক্যালস।

গ্লেনমার্ক ফার্মাসিউটিক্যালসের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অলোক মালিক জানিয়েছেন, ফ্যাভিপিরাভির ওষুধের বিক্রি লাভজনক হয়েছে। ভারতের বাজারে এই ওষুধের চাহিদাও রয়েছে। তাই দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফ্যাভিপিরাভির ওষুধের নির্মাতা জাপানি কোম্পানি ফুজিফিল্ম। সে দেশে এই ওষুধের ব্র্যান্ড নাম ‘অ্যাভিগান’ । তবে ফ্যাভিরাপিরাভির ওষুধের ব্র্যান্ড ফ্যাবিফ্লু বানিয়েছে মুম্বইয়ের গ্লেনমার্ক। এই ওষুধের মূল উপকরণগুলি গ্লেনমার্কই তৈরি করে। বিদেশ থেকে এই ওষুধ তৈরির কোনও উপকরণই আমদানি করার প্রয়োজন পড়ে না।

সংস্থার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্টের কথায়, “বিশ্বের অন্যান্য দেশে এখন ফ্যাভিপিরাভিরের ব্র্যান্ডের যা দাম তার থেকে অনেক কমে ভারতের বাজারে ওই ওষুধের ব্র্যান্ড এনেছি আমরা। এরপরেও দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আশা করা যায় সাধ্যবিত্তের মধ্যে এই দাম পড়লে বহু মানুষ উপকৃত হবেন।”

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক ও ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের উদ্যোগে করোনার সলিডারিটি ট্রায়ালে ফ্যাভিপিরাভিরের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করেছিল গ্লেনমার্ক ফার্মাসিউটিক্যালস। প্রথম দুই ট্রায়ালের রিপোর্ট সন্তোষজনক হওয়ায় তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল হয় এই ওষুধের। সেই ট্রায়ালের রিপোর্ট দেখেই করোনা চিকিৎসায় ফ্যাভিপিরাভিরের ব্র্যান্ড ফ্যাবিফ্লু প্রয়োগ করার ছাড়পত্র দেয় ড্রাগ কন্ট্রোল। কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোলার জানান, হয়েছে, মৃদু ও মাঝারি সংক্রমণের রোগীদের উপরেই জরুরি ভিত্তিতে ফ্যাভিপিরাভিরের থেরাপি করা যাবে।গ্লেনমার্ক ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর গ্লেন সালদানহা বলেছেন, ফ্যাবিফ্লু করোনা সংক্রমণ কমাতে পারবে। যেভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে দেশে, এই ওষুধের প্রয়োগে কিছুটা হলেও তার রাশ টানা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্যারাজাইকার্বোক্সামাইডের ডেরিভেটিভ হল এই ড্রাগ ফ্যাভিপিরাভির। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, হলুদ জ্বর, হাত ও পায়ের যে কোনও ভাইরাল ইনফেকশন কমাতে পারে এই ওষুধ। আরএনএ ভাইরাসের প্রতিলিপি তৈরি করে সংখ্যায় বাড়ার ক্ষমতাকে আটকে দিতে পারে। সাধারণত দেখা যায়, আরএনএ ভাইরাস তাদের সংক্রামক ভাইরাল প্রোটিন মানুষের দেহকোষের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। সার্স-কভ-২ ভাইরাসের সংক্রামক আরএনএ স্ট্রেন কোষের ACE-2 রিসেপটরের মাধ্যমে ভেতরে ঢুকে বিভাজিত হতে শুরু করে। এই বিভাজন প্রক্রিয়াকে থামিয়ে দিতে পারে অ্যান্টি-রেট্রোভিয়াল ওষুধ ফ্যাভিপিরাভির। চিন, জাপান, রাশিয়া, ইতালি, ব্রিটেন, ফ্রান্স, মিশরে কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় এই ওষুধের ব্যবহার শুরু হয়েছে। জানা গিয়েছে, গ্লেনমার্ক ড্রাগ কন্ট্রোলের অনুমতি পাওয়ার পরে দিল্লি ব্রিনটন ফার্মাসিউটিক্যালস, বেঙ্গালুরুর স্ট্রাইডস ফার্মা, মুম্বইয়ের লাসা সুপারজেনেরিকস এবং হায়দরাবাদের অপটিমাস ফার্মা এই ওষুধ বাজারে আনার জন্য ড্রাগ কন্ট্রোলের কাছে প্রস্তাব করেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here