দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ পুরুলিয়ার পর মঙ্গলবার বাঁকুড়াতে সভা করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হুইলচেয়ারে বসে তিনি বক্তব্য রাখার জন্য মঙ্গলবারও ক্ষমা চেয়ে নেন। মন্তব্য করেন, ‘আমি যখন হাঁটি, উন্নয়নও হাঁটে।’

তাঁর অভিযোগ, কলকাতায় বসে চক্রান্ত করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রশ্ন তোলেন, নির্বাচন কমিশন কে চালাচ্ছেন? অমিত শাহ চালাচ্ছেন না তো? কেন কমিশনের কাজে হস্তক্ষেপ করছেন তিনি! মমতা বলেন, ‘হোম মিনিস্টার দেশ চালাবেন। তা না করে কলকাতায় বসে চক্রান্ত করছেন, কোথায় কাকে গ্রেফতার করা হবে। শিল্পপতিদের ঘরে ঘরে রেইড করা হচ্ছে।

কী ভাবেন অমিত শাহ নিজেকে?’ তাঁর অভিযোগ, নন্দীগ্রামের আন্দোলনকারীদের বেছে বেছে নোটিস দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনকে দেখতে বলব, কেন এই সময় সরকারি আধিকারিক, রাজনৈতিক নেতাদের হেনস্থা করা হচ্ছে। রাজ্যের প্রতিদিনের কাজেও হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাঁর। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবকে এদিন নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সরাসরি অমিত শাহকে কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘মিটিংয়ে লোক হচ্ছে না তাই গায়ের জোরে এজেন্সি দেখাচ্ছেন। ওরা কি প্রাণে মেরে ফেলতে চায়? এত গুলি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কলকাতায় বসে আছে। জল, খাদ্য, রেশন দিতে আসে না, কোভিড হলেও আসে না, এখনও এসেছে।’ তাঁর অভিযোগ, রেলে করে গুন্ডা নিয়ে আসা হচ্ছে। সেই গুন্ডারা রেল স্টেশনে থাকবে। নির্বাচনের দিন এলাকায় এলাকায় ঢুকবে। আমার তৃণমূল কংগ্রেসের একজনও যদি কর্মী থাকেন, আপনারা আগে ১২ ঘণ্টা কাজ করলে এখন ১৮ ঘণ্টা কাজ করুন।

রবিবার রাতেই সফরসূচি সামান্য অদলবদল করে কলকাতায় এসে রাজ্য বিজেপি নেতাদের সঙ্গে তড়িঘড়ি বৈঠকে বসেন অমিত শাহ নিজেই। গেরুয়া শিবিরের অন্দরের খবর, বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রার্থীদের নিয়ে কর্মীদের অসন্তোষ সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করেছেন দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়দের থেকে। রাজনৈতিক মহলের মতে, কর্মী অসন্তোষের পারদ মেপে প্রয়োজনে একটি বা দু’টি কেন্দ্রে প্রার্থী বদলও করতে পারে বিজেপি। যদিও মুখ্যমন্ত্রী এদিন অভিযোগ করেছেন, সারা রাত বসে পরিকল্পনা চলছে, কোথায় কাকে গ্রেফতার করা হবে। তিনি বলেছেন,’ মা বোনেরা মাঝে মাঝে রান্না করবেন। আরা হাঁটা খুন্তি দেখে নেবেন। গায়ের জোরে বাংলা জয় করতে চাইছে বিজেপি।’

‘বাঁকুড়া জেলার শালতোড়ায় জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতায় যা বললেন এক নজরে:-

প্রথমেই আমি দুঃখপ্রকাশ করছি। আমি উঠে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করতে পারছি না।
আমি রোজ ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার হাঁটি। আমি যখন হাঁটি, উন্নয়নও আমার সঙ্গে হাঁটে, আমার মাথাও হাঁটে, আমার হৃদয়ও হাঁটে।
মাথায় আমি অনেকবার আঘাত পেয়েছি, হাতে পেয়েছি, কোমরে পেয়েছি, চোখে পেয়েছি। কিন্তু সব আঘাত সহ্য করে নিয়েছি। মানুষের পায়ে যদি আঘাত লাগে, মানুষ দাঁড়াতে না পারলে তার যে যন্ত্রণা যে কী যাঁদের হয়েছে তাঁরাই জানেন।
আমাকে চিকিৎসকরা বারণ করেছিলেন, বলেছিলেন এত তাড়াতাড়ি রিস্ক নেবেন না। কিন্তু আমার যে কোনও উপায় নেই। আমি প্রশাসনের সহযোগিতায়, সংবাদমাধ্যমের সহযোগিতায়, স্থানীয় কর্মীদের সহযোগিতায় এবং সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় রাস্তায় বেরিয়েছে। কিন্তু আমি যদি আমার পায়ের যন্ত্রণায় শুয়ে থাকি, তা হলে বিজেপি মানুষকে যে যন্ত্রণা দেবে তা থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া যাবে না।

বাঁকুড়া টেরাকোটার জেলা। অনেক কিছু রয়েছে। শুশুনিয়া পাহাড় থেকে জঙ্গলমহল শিল্প সুন্দরী তৈরি করছি। ৬৪ হাজার কোটি টাকা দিয়ে এই প্রকল্প হবে। লক্ষ লক্ষ ছেলে-মেয়ে কাজ হবে।
পেট্রল ডিজেলের দাম বাড়ায় সবার কষ্ট হচ্ছে।
নরেন্দ্র মোদীকে বলুন, বিজেপির লোক কে বলুন, বিনা পয়সায় গ্যাস দিতে। আমরা বিনা পয়সায় খাদ্য দিচ্ছি। সারা ভারতে হাজার হাজার কল কারখানা বন্ধ বিজেপির আমলে।
আজকে রেল, কোল ইন্ডিয়া, থার্মাল পাওয়ার, বিএসএনএল, ব্যাঙ্ক বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। আগামী কাল
অমিত শাহ কলকাতায় বসে চক্রান্ত করছেন। কাকে কোথায় গ্রেফতার করা হবে, কাকে কোথায় মারা হবে, কোথায় এজেন্সিকে কার পিছনে লাগানো হবে…। স্বরাষ্ট্র সচিবকেও কিছুক্ষণ আগে নোটিস পাঠানো হয়েছে। কেন সরকারি কর্মচারীদের হেনস্থা করা হবে, কেন রাজনৈতিক কর্মীদের হেনস্থা করা হবে?

নন্দীগ্রামে যাঁরা কৃষক আন্দোলন করেছিল তাদের বিরুদ্ধে এখন গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। কী ভাবেন অমিত শাহ নিজেকে। মিটিংয়ে লোক হচ্ছে না, তাই গায়ের জোরে সব বন্ধ করে দেবেন?
আমার সিকিউরিটির ইনচার্জকে সরিয়ে দিয়েছে। কী চায় প্রাণে মেরে ফেলতে? বহিরাগত গুণ্ডা দিয়ে ইলেকশন করতে দেব না।
মা-বোনেরা তৈরি থাকুন। আমার মা বোনেরা যেমন রাঁধে তেমন চুলও বাঁধে। লুঠেরারা লুঠ করতে এলে হাতা, খুন্তি, উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনি, ধামসা-মাদল, ঝুমুরনাচ, বিষ্ণুপুরী ঘরানার গানকে শক্তিশালী করুন।
মিটিংইয়ে লোক হচ্ছে না আর সারা রাত বসে চক্রান্ত করছে।

মানুষ সঙ্গে নেই বলে আমায় খুন করতে হবে? আমায় খুন করলে আরও গোল্লা পাবে। খেলা হবে।
কন্যাশ্রীরা খেলবে, যুবশ্রীরা খেলবে, রুপশ্রী খেলবে, কৃষক, মজুর, পঞ্চায়েত, মিউনিসিপ্যালিটি ছাত্র-যৌবন সবাই খেলবে।
আমি এক পায়ে খেলব। খেলা হবে, জেতাও হবে।
এই যুদ্ধে বাংলা জিতবে, দিল্লি হারবে।
ছাত্র-যুবদের দুটো পা তাদের সাপোর্টে খেলব। শ্রমিক-কৃষকদের দুটো পা, তাদের সাপোর্টে খেলব।
আমি চাই এই নির্বাচনী যুদ্ধে মা-বোনেরা সামনে থাক। তফশিলীরা সামনে থাক।
মায়েরা দিচ্ছে উলুধ্বনি ভাইয়েরা দিচ্ছে তালি, আগামী নির্বাচনে সমস্ত আসন থেকে বিজেপিকে করতে হবে খালি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here