দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দেশে সেনাকর্মী নিয়োগে দুর্নীতি চলছে? এমন খবর মেলায় তড়িঘড়ি তদন্তে নেমেছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। দেশের অন্তত ১৩টি শহরে তল্লাশি চালিয়ে চমকে গিয়েছেন তদন্তকারী অফিসাররা। সিবিআইয়ের দাবি, দেশের নানা শহরে ঘুষ নিয়ে সেনা কর্মী নিয়োগ করা হচ্ছে। আর এই কাজে নাম জড়িয়েছে ২৩ জনের। অভিযুক্তদের মধ্যে আবার সাতজন উচ্চপদস্থ সেনা অফিসার, পাঁচ জন লেফটেন্যান্ট কর্নেল, একজন সেনা মেজর ও একজন লেফটেন্যান্ট অফিসার।


কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, সেনা অফিসাররাও ছাড়াও ঘুষকাণ্ডে নাম জড়িয়েছে ১৭ জন সেনা জওয়ানের। তাছাড়া ওই দলে রয়েছেন ৬ জন সার্ভিস সিলেকশন বোর্ডের অফিসার। এই সার্ভিস সিলেকশন বোর্ডের মাধ্যমেই সেনা অফিসার নিয়োগ করা হয়। লিখিত পরীক্ষা, ইন্টারভিউ ও শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে অফিসার নিয়োগের প্রক্রিয়া চলে। সিবিআইয়ের অভিযোগ, এখানেই দুর্নীতি হচ্ছে। যোগ্যতার পরীক্ষা ছাড়াই মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ নিয়ে অফিসার পদে নিয়োগ করা হচ্ছে। এমনকি হাসপাতালে শারীরিক পরীক্ষার সময়েও দুর্নীতি চলছে। সার্ভিস সিলেকশন সেন্টার ছাড়াও বেশ কিছু এজেন্সির নামও জড়িয়েছে এই ঘুষকাণ্ডে।

গত মাসে কয়েকজন সেনা আধিকারিকের তরফেই খবর দেওয়া হয়েছিল যে সেনা নিয়োগে বড়সড় দুর্নীতি চলছে দেশে। সিবিআইয়ের কাছে খবর পাঠান ওই আধিকারিকরা। বেশ কিছু তথ্যপ্রমাণও হাতে আসে। তদন্তে শুরু করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। তদন্ত করতে গিয়েই সর্ষের মধ্যে ভূত বের হয়। উঠে আসে লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমভিএসএনএ ভাগওয়ানের নাম। তদন্তকারীদের অভিযোগ, এই কর্নেলই সমস্ত দুর্নীতির মাস্টারমাইন্ড। তাঁর সাজানো ছকেই কাজ করছিলেন বাকি অফিসার, সেনা জওয়ান ও সার্ভিড বোর্ডের অফিসাররা। কর্নেল ভাগওয়ান এখন স্টাডি লিভে রয়েছেন কিন্তু আড়ালেই কলকাঠি নাড়ছেন বলে অভিযোগ তদন্তকারীদের। তাঁর সঙ্গেই নাম জড়িয়েছে নায়েব সুবেদার কুলদীপ সিংয়ের। অভিযোগ, সুবেদার কুলদীপ সিং কয়েক লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে এসএসবি সেন্টার থেকে সেনা অফিসার নিয়োগ করেছেন।

দেশের ১৩টি শহরের ৩০টি জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে তাজ্জব হয়েছেন সিবিআই অফিসাররা। তাঁদের অভিযোগ, কর্নেল ও মেজর পদমর্যাদার এক একজন অফিসার দেশের বিভিন্ন শহরের এসএসবি সেন্টারের দায়িত্বে রয়েছে। আর সেখান থেকেই বেআইনিভাবে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। এমনকি দিল্লির বেস হাসপাতালে টাকা নিয়ে মেডিক্যাল পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। দিল্লি, লখনৌ, জয়পুর, গুয়াহাটি, কাপুরথালা, বাতিন্দা, কৈথাল, পালওয়াল, বরেলি, গোরক্ষপুর, বিশাখাপত্তনম, জোড়াহাট, চিরঙ্গন প্রভৃতি জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে অনেক তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে বলে দাবি সিবিআইয়ের।

তদন্তকারীদের অভিযোগ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুরেন্দর সিং উত্তরের রাজ্যগুলির ৩১টি এসএসবি সেন্টার থেকে ঘুষ নিয়ে সেনা অফিসার নিয়োগ করেছেন। অন্যদিকে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল ওয়াইএস চৌহান ৬টি মাউন্টেন ডিভিশন অর্ডন্যান্স ইউনিট থেকে সেনা নিয়োগ করেছেন। ডিরেক্টরেট জেনারেল রিক্রুটিংয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুখদেব অরোরার বিরুদ্ধে, দক্ষিণের সিলেকশন সেন্টারগুলো থেকে ঘুষ নিয়ে অফিসার নিয়োগের অভিযোগ রয়েছে লেফটেন্যান্ট কর্নেল বিনয়ের বিরুদ্ধে। সিবিআই জানাচ্ছে, মেজর ভবেশ কুমারের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ রয়েছে। আর কোনও সেনা অফিসার এই দুর্নীতিতে জড়িত কিনা তার খোঁজ করছে সিবিআই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here