দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শুভেন্দু এপিসোড নিয়ে যখন রাজ্য রাজনীতিতে কৌতূহল, রহস্যের স্রোত বয়ে যাচ্ছে ঠিক তখনই এক অদ্ভুত অবস্থান নিয়ে আবির্ভূত হয়েছেন মদন মিত্র। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সংবাদমাধ্যমের বুমের সামনে গত দু’তিনদিন যাবৎ প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী এমন কিছু মন্তব্য করেছেন যা শাসকদলের অস্বস্তির কারণ বলেই মনে করছেন অনেকে। বিশেষ করে ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের বিরুদ্ধেও তির্যক মন্তব্য করেছিলেন মদন। ঠিক তারপরই দেখা গেল, মদন মিত্রকে একটি সরকারি কমিটির চেয়ারম্যান করে দেওয়া হয়েছে।


পরিবহণ দফতর একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে, স্বাস্থ্যসাথী-সহ সরকারি সমস্ত প্রকল্পের সুবিধা পরিবহণকর্মীরা পাচ্ছেন কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য একটা কমটি গঠন করা হয়েছে। তার চেয়ারম্যান করা হয়েছে মদন মিত্রকে। বলা হয়েছে, সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে পরিবহণকর্মীদের ভালমন্দ দেখবে মদন মিত্রের নেতৃত্বাধীন এই কমিটি।

অনেকে বলেন, তৃণমূলে কোনও নেতা যদি হঠাৎ বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন তাঁকে কোনও একটি সরকারি কমিটির পদে বসিয়ে দেওয়া অনেক পুরনো কৌশল। আগেও এই ধরনের এমন অনেক নজির রয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে মদন মিত্র ঠিক কী বলেছিলেন?


সম্প্রতি তৃণমূলের অনেক নেতাই প্রশান্ত কিশোর নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া মিহির গোস্বামী, শিবপুরের বর্ষীয়ান বিধায়ক জটু লাহিড়ী, তারপর মদন মিত্র—তালিকাটা ক্রমশ লম্বা হচ্ছে। মদন মিত্র বলেন, “শুনছি পিকে দলের স্ট্র্যাটেজি মেকার। আমি কামারহাটির মানুষকে কী ভাবে কাছে পাব সেটা পিকে শিখিয়ে দেবেন? সরি!”

শুধু তাই নয়। শুভেন্দু অধিকারী নিয়ে যখন তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব দৌত্য চালাচ্ছেন তখন নন্দীগ্রামের বিধায়ক সম্পর্কেও ট্যারাব্যাঁকা কথা বলে বসেন মদন। তাঁর কথায়, “শুভেন্দু বড় নেতা। ওঁকে আমি ভালবাসি। কিন্তু জনপ্রিয়তা ওই ভাবে মাপা যায় না। সাত বছর হয়ে গেল মন্ত্রিত্ব নেই। এখনও আমি বাংলার যেখানেই যাই ভগবানের আশীর্বাদে ডায়ে-বাঁয়ে কয়েকশ লোক থাকেন।” তাঁর কথায়, “নন্দীগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কিন্তু ওটাই সব নয়। শুভেন্দুর এটা মনে রাখা উচিত। নন্দীগ্রামের নিশ্চয়ই ভূমিকা রয়েছে। তাই বলে কি মজিদ মাস্টারের বিরুদ্ধে লড়াই করা শাসনের ভূমিকা কম? চমকাইতলা, নানুর, আরামবাগ, মঙ্গলকোট, কেতুগ্রামের ভূমিকা কম?”


হেলিকপ্টার, প্যারাশ্যুট, লিফট—এই শব্দগুলো যখন হঠাৎ রাজনৈতিক টিকাটিপ্পনির অংশ হয়ে উঠেছে তখন তা নিয়েও মন্তব্য করেন মদন। বলেন, “ক্যাপসুল লিফট আমার বাড়িতে নেই। কথায় কথায় কলকাতা থেকে মালদা-মুর্শিদাবাদ যাই না। চপারে করে কলকাতা ছাড়ার ভাগ্য আমার নেই!’
কয়েক দিন আগে নিজের ফেসবুক পেজ ‘সিটিজেন মদন মিত্র’-এর ডিপি বদল করেন ভবানীপুরের এই নেতাটি। তার ক্যাপশনে লেখেন ‘টাইম ফর প্যাক আপ!’ এর পরই গুঞ্জন তৈরি হয়। তাহলে কি মদন মিত্রও পাত্তারি গোটাতে চাইছেন? কিন্তু কোথা থেকে? পরে অবশ্য মদন মিত্র বলেন, “প্যাকআপ বোঝেন না? প্যাক বোঝেন, র‍্যাক বোঝেন, র‍্যাকেট বোঝেন, আর প্যাক আপ বোঝেন না!”

সারদা কাণ্ডে অভিযুক্ত হয়ে জেল থেকে ষোলোর বিধানসভা লড়েছিলেন মদন। কিন্তু কামারহাটিতে হেরে গিয়েছিলেন সিপিএমের মানস মুখোপাধ্যায়ের কাছে। তারপর তাঁকে ক্ষমতার অলিন্দে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হয়েছিল বটে। কিন্তু তা আর তেমন ভাবে দানা বাঁধেনি। অর্জুন সিংয়ের ছেড়ে যাওয়া ভাটপাড়ার উপনির্বাচনে তাঁকে প্রার্থী করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু অর্জুন-পুত্রের কাছে হেরে যান মদন।


একুশের ভোটের দামামা বেজে গিয়েছে তখন সরকারি কমিটির মাথায় বসানো হল মদন মিত্রকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here