দেশের সময ওয়েবডেস্ক: মঙ্গলবারের রাতের বৈঠক শেষে নাকি কথা হয়েছিল, এ ব্যাপারে যা বলার শুভেন্দু অধিকারীই বলবেন। কিন্তু তিনি কিছু বলার আগেই দেখা যায়, বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় বলছেন, “শুভেন্দু তৃণমূলেই রয়েছেন। ও তৃণমূল ছেড়ে যাচ্ছে না। বাকি যা বলার ও নিজেই বলবে।”


শুভেন্দু ঘনিষ্ঠরা রাতেই জানাচ্ছিলেন, এতে শর্ত ভঙ্গ হয়েছে। কারণ, দল চাইছিল ৭ ডিসেম্বর মেদিনীপুরের কলেজ মাঠে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় যেন শুভেন্দু উপস্থিত থাকেন। সদ্য প্রাক্তন মন্ত্রী বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসার সময়ে বলেছিলেন, ৬ ডিসেম্বর তিনি তাঁর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বা অবস্থান জানাবেন। তবে তার আগেই দেখতে পান অনেক সংবাদমাধ্যমে হইহই করে খবর চলছে যে সমস্ত মিটমাট হয়ে গিয়েছে।

তার পর যা হওয়ার এদিন তাই হয়েছে। সূত্রের খবর, বুধবার বেলা গড়ানোর আগেই শুভেন্দু একটি টেক্সট মেসেজ পাঠিয়েছেন সৌগত রায়কে। তাতে মোদ্দা বক্তব্য হল, “আপনারা কথা রাখেননি। আমি কিছু বলার আগেই সংবাদমাধ্যমে বাইট দিতে শুরু করেছেন। অথচ আমার সমস্যাগুলো মেটেনি। এ ভাবে আর একসঙ্গে কাজ করা সম্ভব নয়।”

গত কিছুদিন ধরে শুভেন্দু ও তাঁর পরিবার সম্পর্কে এক নেতা প্রকাশ্যে যা নয় তাই বলছিলেন। পরে দলের আর এক নেতাও ঠারেঠোরে তাঁকে উদ্দেশ্য করে অনেক কিছু বলেছেন। এর পরেও মঙ্গলবার শুভেন্দু অধিকারী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে বৈঠকে বসায় অনেকেই হতচকিত। তাঁরা মেলাতে পারছিলেন না।
কিন্তু শুভেন্দু ঘনিষ্ঠদের কথায়, কথার খেলাপ হয়েছে দাদার সঙ্গে। গত শনিবার শুভেন্দুর সঙ্গে সৌগত রায় ও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আলোচনায় বসার কথা ছিল। তার ঠিক আগে সৌগতবাবু নাকি শুভেন্দুকে বলেছিলেন, অভিষেক ও প্রশান্ত কিশোরও বৈঠকে থাকতে চান। শুভেন্দু খুব একটা রাজি না হলেও হ্যাঁ বলে দেন।

কিন্তু শনিবার শুভেন্দুর মা গায়েত্রী দেবীর শরীর হঠাৎ করে খারাপ হয়। বাড়িতেই তাঁকে স্যালাইন দিতে হয়। তাই শুভেন্দু সেদিন বৈঠক বাতিল করেন। সৌগতবাবুকে তা জানিয়ে দেন। ঠিক হয়, মঙ্গলবার ওই বৈঠক হবে। এরই মধ্যে রবিবার সাতগাছিয়ায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সভা করেন। সেই সভার পর শুভেন্দু ফের বেঁকে বসেন, তিনি আর আলোচনায় বসবেন না।
শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর, তখন সৌগতবাবু শুভেন্দুকে বলেন, ঠিক আছে বাকি দুজন মিটিংয়ে থাকবেন না। তিনি আর সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় থাকবেন। তাতে রাজি হন শুভেন্দু।

কিন্তু মঙ্গলবার রাতে উত্তর কলকাতায় তাঁর নির্ধারিত একটি স্থানে শুভেন্দু যখন মিটিংয়ে পৌঁছন, গিয়ে দেখেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রশান্ত কিশোরও উপস্থিত রয়েছেন। তার পরে ওই বৈঠক থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও স্পিকার ফোনে ধরা হয়।

শুভেন্দু ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, এমন কথা কিন্তু ছিল না। দাদাকে এমন ভাবে ঘিরে ধরে অনুনয় বিনয় করা হয় যে তিনি অস্বস্তিতে পড়ে যান। তদুপরি বৈঠক শেষ হতেই সৌগত বাবু সংবাদমাধ্যমে বাইট দিতে শুরু করেন।


একটি সূত্রের দাবি, সৌগতবাবুকে পাঠানো বার্তায় শুভেন্দু নাকি বলেছেন, “আমার উদারতাকে দুর্বলতা ভাববেন না।”
এখন প্রশ্ন, তা হলে বিষয়টা কী দাঁড়াল?
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, শুভেন্দু স্বভাবগত ভাবে এক রোখা। তিনি মন্ত্রিসভা থেকে ইতিমধ্যে ইস্তফা দিয়েছেন। অর্থাৎ যতটা এগিয়ে গিয়েছেন তার পর আর পিছু হটার হয়তো সম্ভাবনা নেই। তৃণমূল নেতৃত্ব তাঁকে ধরে রাখার চেষ্টা করেছে ঠিকই। কিন্তু তা বিশেষ কাজে লাগল না বলেই মনে করা হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here