দেশের সময় মালদা: আদিবাসীদের জমি আদিবাসীদের অধিকার। আদিবাসীদের জমি কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।’‌ ‌বৃহস্পতিবার গাজোলে আদিবাসী সম্প্রদায়ের গণবিবাহের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এই বার্তাই দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

জমি বরাবরই আদিবাসীদের কাছে স্পর্শকাতর বিষয়। জমির অধিকার রক্ষা করতে তারা সবসময়ই তৎপর। তাই মুখ্যমন্ত্রী জমির অধিকার রক্ষার কথা ঘোষণা করায় খুশি আদিবাসী সমাজ।

আদিবাসীদের আশ্বস্ত করে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকার একটা আইন করেছে, আদিবাসীদের জমি কেউ নিতে পারবে না। টাকা আছে বলে নিয়ে নেবে তা হবে না।’‌ বৃহস্পতিবার গাজোলে আদিবাসীদের গণবিবাহে অংশ নেন মুখ্যমন্ত্রী।

নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ৩০০ জোড়া আদিবাসী পাত্র–‌পাত্রীর বিয়ের তদারকি করেন অভিভাবকের মতো। এমনকী আদিবাসী নাচেও পা মেলান তিনি। আদিবাসী বিয়েতে নাচ একটা রীতি। তাই আদিবাসীরা যখন মাদলের তালে নাচছিলেন, তখন মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চ থেকে নেমে এসে আদিবাসী চাদর গায়ে জড়িয়ে নাচের তালে পা মেলান। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী তঁাদের সঙ্গে নাচে পা মেলানোয় আপ্লুত আদিবাসীরা।

এদিন ‘‌রূপশ্রী’‌ প্রকল্পের আওতায় গাজোল থেকে শুরু হয় আদিবাসী গণবিবাহের অনুষ্ঠান। গোটা রাজ্য জুড়ে আদিবাসীদের প্রথা মেনে বিয়ের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‌আজ আমরা গাজোলে গণবিবাহ দিয়ে শুরু করলাম। প্রায় ৩০০ জোড়া পরিবার গণবিবাহে শামিল হয়েছে। চা–বাগানেও গণবিবাহের আয়োজন করব।’‌ আদিবাসী–অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে যাঁরা চাইবেন, তাঁদের নিয়ে আদিবাসী প্রথা মেনে এই গণবিবাহের আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

মু্খ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‌আদিবাসী–অধ্যুষিত জেলাগুলিতে প্রতি বছর এভাবেই গণবিবাহ অনুষ্ঠান হবে। যে যে পরিবার চাইবে, আমাদের সরকার এবার থেকে সব ব্যবস্থা করবে। জেলা পুলিশ ব্যবস্থাপনায় থাকবে। তাতে বছরে যদি ১০ হাজার মহিলার বিয়ে দিতে হয়, আমরা তার ব্যবস্থা করব।’‌

এদিন মুখ্যমন্ত্রী গাজোল কলেজ মাঠে এই গণবিবাহের অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তিনি ছাড়াও মঞ্চে হাজির ছিলেন জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ সরলা মুর্মু, আদিবাসী সেলের নেতা চুনিয়া মুর্মু, জেলা পরিষদের সদস্য সনাতন মুর্মু–‌সহ অন্যরা।

মুখ্যমন্ত্রীর হাতে আদিবাসীদের কাপড় তুলে দেওয়া হয়। বাঁশের তৈরি একটি কভার ফাইলও উপহার হিসেবে তুলে দেন আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধিরা। উপহার হিসেবে পাওয়া আদিবাসীদের চাদরটি পরেই নাচে অংশ নেন তিনি। আদিবাসীদের বিয়েতে অংশ নিয়ে নবদম্পতিদের আশীর্বাদও করেন মুখ্যমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য আদিবাসী ভাষায় সকলকে নতুন জীবনের শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, ‘‌আমি ভাল করে আপনাদের ভাষা বলতে পারি না। কিন্তু শেখার চেষ্টা করি। আপনারা অনেক ভাল থাকুন। খুব সুন্দর থাকুন। আপনারা আপনাদের সমাজের গর্ব। আমাদের সম্পদ। আপনাদের সুন্দর জীবন কামনা করি।’‌ তিনি আরও বলেন, ‘‌আজ আমাদের এখানে আপনাদের অনেকেই এসেছেন, তাঁদের জানাই জয় জোহার।

আদিবাসীদের অনেককেই চিনি, যাঁরা চা–বাগানে কাজ করেন, কিংবা অন্য কোনও কাজ করেন।’‌ আদিবাসীদের জন্য রাজ্য সরকার সবসময় পাশে থেকে এসেছে জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পেনশন প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘‌‌আদিবাসী যত পরিবার আছে, ৬০ বছর বয়স হলে, অন্য কোনও পেনশনের সুবিধা না পেয়ে থাকলে, তাঁরা ১,০০০ টাকা করে পেনশন পাবেন।

যিনি চাইবেন, তিনি পাবেন। তফসিলি বন্ধুদের জন্যও ব্যবস্থা করা হয়েছে। ‘‌জয় বাংলা’‌ প্রকল্পে যাঁরা ৬৫০ টাকা করে পেনশন পেয়ে এসেছেন, তাঁদের ১,০০০ টাকা করা হয়েছে।’‌ এদিন অনুষ্ঠান শেষ করে কলকাতার উদ্দেশে রওনা হন মুখ্যমন্ত্রী।

আদিবাসী নৃত্যে পা মেলালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। মালদায়, বৃহস্পতিবার। ছবি: এ আই টি সি৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here