দেশের সময়, কলকাতা : সম্প্রতি আদালতে জমা দেওয়া নথিতে ইডির দাবি, ২০১২-১৩ আর্থিক বর্ষে ‘এস আর আঢ্য ফাইন্যান্স লিমিটেড’ নামে শঙ্কর আঢ্যর বিদেশি মুদ্রা বিনিময় (ফরেন এক্সচেঞ্জ বা ফরেক্স) সংস্থার মাধ্যমে প্রায় হাজার কোটি টাকার বিদেশি মুদ্রার লেনদেন হয়েছিল। তদন্তকারীদের দাবি, ওই টাকা মূলত দুবাইয়ে পাচার হয়েছে।

ইডির অভিযোগ অনুযায়ী, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই)-য় জমা দেওয়া নথিতে ওই আর্থিক বর্ষেই শঙ্করের ওই সংস্থা মাত্র ৫০ হাজার টাকার ভারতীয় মুদ্রার সমমূল্যের ফরেক্স ব্যবসা করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আরবিআই-য়ে জমা দেওয়া নথির সেই প্রতিলিপি শঙ্করের অফিস থেকে উদ্ধার হয়েছে বলে আদালতে দাবি করেছেন ইডির তদন্তকারীরা।

কেন্দ্রের পাঠানো রেশন সামগ্রী বেআইনি ভাবে খোলা বাজারে বিক্রির অভিযোগে শঙ্কর এখন জেলে। ইডি সূত্রের দাবি, তিনি ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় (বালু) মল্লিকের ঘনিষ্ঠ। সেই বালুও দুর্নীতির অভিযোগে জেলে। গ্রেফতার হয়েছেন রেশন ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমান। তদন্তকারীদের দাবি, শঙ্করকে ঘিরে তদন্ত যত এগোচ্ছে ততই বেরিয়ে আসছে নতুন নতুন তথ্য।

ইডির এক কর্তার কথায়, আরবিআই-কে প্রায় এক দশক জাল নথি পেশ করে অন্ধকারে রেখে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। শঙ্কর ও তাঁর পারিবারিক সদস্যদের আটটি ফরেক্স সংস্থার সমস্ত আর্থিক লেনদেনের নথি আরবিআই-কে পাঠানো হয়েছে। সম্প্রতি কলকাতার চৌরঙ্গি লেন ও ফুলবাগানে শঙ্করের দু’টি অফিসে তল্লাশি চালিয়ে বিদেশি মুদ্রা বিনিময় ব্যবসার প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার হয়েছে।

অন্যদিকে, সন্দেশখালি কাণ্ডে তদন্ত নেমে কদিন আগে সল্টলেকে ইডির দফতর সিজিও কমপ্লেক্সে পৌঁছে গেছিল ন্যাজাট থানার পুলিশ। শেখ শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি করতে গিয়ে মারধর খেয়েছিলেন ইডির অফিসাররা। গুরুতর আহত হয়েছিলেন তিন অফিসার। সেই ঘটনা নিয়ে সবিস্তার অভিযোগ দায়ের করেছিল ইডি। তার পর ইডির বয়ান রেকর্ড করতে কদিন আগে বসিরহাটের ডিএসপি-র নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম সিজিওতে যায়। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন পুলিশের ক্যামেরাম্যানও।

এবার রেশন দুর্নীতি কাণ্ডের প্রধান তদন্তকারী অফিসার প্রশান্ত চান্ডিলকে জেরা করতে সিজিওতে গেল বনগাঁর পুলিশ। সম্প্রতি রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্যকে গ্রেফতার করে ইডি। সেদিনও ইডি অভিযোগ করেছিল যে, শঙ্কর আঢ্যকে গ্রেফতারের সময়ে তাঁর বাড়ির বাইরে বিশাল জমায়েত হয়েছিল। বিকেল চারটে নাগাদ ইডির তরফে বনগাঁ পুলিশ জেলার সুপারকে ফোন করে বাহিনী পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু তা পাঠায়নি পুলিশ। এ ব্যাপারে পুলিশের বিরুদ্ধে চরম অসহযোগিতার অভিযোগ করা হয়েছে।

জানা গিয়েছে, ওই ঘটনার ব্যাপারে ইডির তদন্তকারী অফিসার প্রশান্ত চান্ডিলকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে সিজিওতে গিয়েছিল বনগাঁর পুলিশ। মূলত তাঁর বয়ান রেকর্ড করা ছিল তাঁদের উদ্দেশ্য। 

সিজিও সূত্রে বলা হচ্ছে, এই সব জিজ্ঞাসাবাদ ও বয়ান রেকর্ড নিয়ে তাঁরা খুব একটা আশাবাদী নন। তাঁদের মতে, সন্দেশখালিতে হামলা ও বনগাঁর পরিস্থিতি নিয়ে কোনও পুলিশি তদন্ত শেষমেশ হবে না। শুধু কিছু ফর্মালিটি সেরে রাখা হচ্ছে। 

এদিকে সন্দেশখালি কাণ্ডের তদন্তের জন্য কলকাতা হাইকোর্ট যে সিট গঠন করে দিয়েছিল, ইডি তা নিয়ে ইতিমধ্যে আপত্তি জানিয়ে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন জানিয়েছে। তাদের বক্তব্য, রাজ্য পুলিশ ও সিবিআইয়ের যৌথ তদন্তের প্রয়োজন নেই। কারণ তাতে তদন্তই এগোবে না। রাজ্য পুলিশের থেকে অতীতেও কোনও সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। তাই শুধু সিবিআইকেই তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হোক। ওই মামলারও আজকালের মধ্যেই শুনানি হতে পারে উচ্চ আদালতে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here