দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ এটাই প্রত্যাশিত ছিল তৃণমূলের সাংঠনিক নির্বাচনে। হলও তাই, সূত্রের খবর, বুধবার নেতাজি ইনডোরে তৃণমূলের চেয়ারপার্সন নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কেউ মনোনয়ন জমা দেননি। ফলে দিদিই আবার চেয়ারপার্সনের চেয়ারে।

যদিও ভোটের প্রস্ততি রাখা হয়েছিল নির্বাচনী কমিটির তরফে। রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে ছিলেনন মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। দলের সাংগঠনিক নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলের চেয়ারপার্সন পদে জয়ী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘোষণা করলেন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

ঐক্যের বার্তা দিলেন মমতা। নির্বাচন কমিশনের নীতি মেনেই আজ, বুধবার নেতাজি ইন্ডোরে সাংগঠনিক নির্বাচনের আয়োজন করে তৃণমূল। জেলা নেতৃত্ব ছাড়াও ভিন রাজ্য থেকে এই নির্বাচনে যোগ দিতে এসেছেন নেতারা। যশবন্ত সিনহা, লোকেশ ত্রিপাঠী, রাজেশ ত্রিপাঠী, ত্রিপুরার সুবল ভৌমিক, অশোক তানওয়ারের মতো নেতারাও এদিন যোগ দেন বৈঠকে। ছিলেন ফিরহাদ হাকিম, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মদন মিত্রের মতো নেতারাও।  

নির্বাচিত হওয়ার পরেই মঞ্চ থেকে সকলকে ধন্যবাদ দিলেন মমতা। ব্যাখ্যা দিলেন, কেন তৃণমূলকে সর্বভারতীয় তৃণমূল ঘোষণা করা হল। তাঁর কথায়, ‘‌তৃণমূল তৈরি হয়েছিল ৯৮ সালের ১ জানুয়ারি। অনেক বাধা অতিক্রম করে আজ এই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথমে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল কংগ্রেস হয়েছিল। পরে অনেক জায়গায় ইউনিট খোলা হয়েছিল। তাই অল ইন্ডিয়া করে দিলাম। কোনও না কোনও জায়গা থেকে একটা দল তৈরি হয়।

এদিন পুনর্নির্বাচিত হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ১৯১৬ সালেই সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে তৃণমূল, মনে করিয়ে দিয়ে মমতা আরও বললেন, ‘‘আপনারা বাংলা সামলান, আর আমাকে বলুন আপনি দেশ থেকে বিজেপিকে হটান। তৃণমূল যদি বাংলা থেকে সিপিএমকে তাড়াতে পারে, তবে কেন্দ্রেও পারবে’’, কেন্দ্রে ক্ষমতা থেকে  বিজেপিকে সরানো প্রসঙ্গে বললেন মমতা।   বাজেটের সমালোচনা করে মমতা বললেন, বাজেটে হিরের দাম কমেছে, মানুষের জন্য একটুও ভাবেনি কেন্দ্র। ডাল-ভাতের কথা ভাবা হয়নি। হিরের দাম কমিয়েছে। তাঁকে সমর্থনের জন্য সকলকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এদিন বক্তৃতা শুরু করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলকে কেন সর্বভারতীয় তৃণমূল করা হয়েছে তার ব্যখ্যা দিলেন দলনেত্রী। 

পদ্মসম্মান নিয়ে মমতা বললেন, পদ্মভূষণ রাজনৈতিক দূষণে পরিণত হয়েছে, সন্ধ্যা দিকে অসম্মান করা হয়েছে।’’ কংগ্রেস বিজেপির হয়ে ভোট করে দেয়, বলেন মমতা৷

১৯১৬ সালেই সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে তৃণমূল, মনে করিয়ে দিয়ে মমতা বললেন, ‘‘আপনারা বাংলা সামলান, আর আমাকে বলুন আপনি দেশ থেকে বিজেপিকে হটান।’’
‘‘তৃণমূল যদি বাংলা থেকে সিপিএমকে তাড়াতে পারে, তবে কেন্দ্রেও পারবে’’, কেন্দ্রে ক্ষমতা থেকে  বিজেপিকে সরানো প্রসঙ্গে বললেন মমতা।  আপনি দেশ থেকে বিজেপি–কে হঠান।’‌

একুশে ক্ষমতায় আসার পর এবার সাংঠনিক নির্বাচনকে অন্য মাত্রায় তুলে ধরতে চেয়েছে শাসকদল। বিজেপি বাদে সমস্ত বিরোধী দলকে নেমন্তন্ন করা হয়েছিল। যদিও বিমান বসু, প্রদীপ ভট্টাচার্যরা ইনডোরে যাননি। অন্যবার যেমন সংবাদমাধ্যমকে নির্দিষ্ট সময়ে থাকতে দেওয়া হয় এবার পুরো সময়েই সাংবাদিকরা ছিলেন ইনডোরে।

উত্তরপ্রদেশ থেকে কংগ্রেস তৈরি হয়েছিল। গুজরাট থেকে বিজেপি। আমাদের অরিজিনাল জায়গা বাংলা। আমরা মিট করব খুব শিগগিরই। আপনারা বাংলার দলটা করব। আপনারা বলুন, বাংলার দলটাকে বুক দিয়ে আগলে রাখব।

অন্যদিকে বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার আইএনটিটিইউসি সভাপতি নারায়ণ ঘোষের মতো নেতারাও ৷ এদিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন , নারায়ণ ঘোষের কথায় দিদিকে চোখের সামনে চেয়ারপার্সনের চেয়ারে পুনর্নির্বাচিত হতে দেখব বলে বনগাঁ থেকে ছুটে এসেছি, পাশাপাশি বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় বাবুর সঙ্গে সাক্ষাত হল এটা বড় পাওনা৷

বেআইনি কয়লা ও গরু পাচার কাণ্ডের তদন্তের সূত্র ধরে মঙ্গলবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপ্ত সহায়ক সুমিত রায়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছিল সিবিআই। একইসঙ্গে অন্য একটি মামলার সূত্রে বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকেও তলব করেছে সিবিআই।


এহেন পরিস্থিতিতে বুধবার দলের সাংগঠনিক নির্বাচনের মঞ্চ থেকে তীব্র সমালোচনা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই সিবিআই-ইডি লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তৃণমূল সভানেত্রী জানান, “অভিষেকের প্রাইভেট সেক্রেটারি, ওর আইনজীবী এমনকি টিকিট কেটে দেয় যে ট্রাভেল এজেন্ট সবাইকে নোটিস পাঠাচ্ছে। ওর স্কুলের যত বন্ধু রয়েছে সবাইকে নোটিস দিচ্ছে”।

প্রসঙ্গত, বাংলায় বিধানসভা ভোটের কয়েক মাস আগে থেকে বেআইনি কয়লা ও গরু পাচার নিয়ে সিবিআই-ইডি দৃশ্যতই সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। কিন্তু ভোটের পর বেশ কয়েক মাস তা বিশেষ দেখা যায়নি। একমাত্র নারদ স্টিং মামলায় ফিরহাদ হাকিম-মদন মিত্রদের হেফাজতে নিয়েছিল সিবিআই। কিন্তু আবার বিক্ষিপ্তভাবে তদন্তের অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী সঞ্জয় বসু, আপ্ত সহায়ক সুমিত রায়কে জেরার জন্য তলব করা হয়েছে। তা ছাড়া রাজনৈতিক হিংসার মামলাতে সক্রিয় হচ্ছে সিবিআই। এই প্রেক্ষাপটেই বুধবার ফের ক্ষোভের জ্বালামুখ খুলে দিয়েছেন মমতা। এখন দেখার এর পর তদন্তের গতি বা প্রকৃতি কোন দিকে এগোয়।

অনেকের মতে, সংবাদমাধ্যম থেকে বিরোধী দল সবাইকে তৃণমূল দেখাতে চাইছে দলের মধ্যে কতটা সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিসর রয়েছে। শুধু তাই নয়। পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, বিজেপিকে না ডেকে বাকি দলগুলির কাছে তৃণমূল এও বোঝাতে চাইল, গেরুয়া বিরোধিতার প্রশ্নে তাদের কোনও ছুৎমার্গ নেই। যদিও বিরোধীরা অনেকেই বলছেন, এই নির্বাচন লোক দেখানো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here