অর্পিতা বনিক , বনগাঁ :

হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথি তথা শনিবার ভোরবেলা মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশী তিথিতে উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগরের “কামনাসাগরে” পুণ্যস্নানে অংশ নেবেন কয়েক লক্ষ ভক্ত। মন্দির সূত্রে জানা গেছে,
মতুয়া সম্প্রদায়ের ভক্তদের সেই ভিড়েই ঠাকুরনগরের মতুয়া ধর্ম মহামেলার প্রথমদিনে একসঙ্গে উপস্থিত থাকবেন বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর এবং তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস। দেখুন ভিডিও

শুক্রবার মন্দিরে পূজো দিয়ে মেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন বনগাঁ জেলা পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার।

প্রতিবছর চৈত্র মাসে মতুয়া সম্প্রদায়ের ধর্মগুরু হরিচাঁদ এবং গুরুচাঁদ ঠাকুরের আদর্শে মতুয়া ধামে মহা মেলার আয়োজন করা হয়। এবারও সেই মেলার আয়োজন হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার ঠাকুরনগরে। শনিবার ৬ এপ্রিল থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত ঠাকুরনগরের শ্রীধামে এই মেলা চলবে বলে জানা গেছে মন্দির সূত্রে। এই মেলাকে কেন্দ্র করে লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম হয়।

শুক্রবার থেকেই ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়িতে ভক্তদের জমায়েত শুরু হয়েছে। শনিবার বারুণী স্নান। তারই আগে শুক্রবার মেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন বনগাঁ জেলাপুলিশ সুপার দীনেশ কুমার। সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন্ত কবিরাজ, মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অর্ক পাজা, গাইঘাটা থানার ভারপরাপ্ত আধিকারিক রাখোহরি ঘোষ সহ অন্যান্য পুলিশ আধিকারিকরা।

এদিন হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে পুজোও দেন পুলিশ আধিকারিকেরা । পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার জানিয়েছেন, মেলায় যাতে কোন রকম অপ্রীতিকার ঘটনা না ঘটে সেদিকে নজরদারি করা হচ্ছে। পাশাপাশি ঠাকুরবাড়িতে পুলিশ কন্ট্রোল রুম তৈরি করা হয়েছে। ৫০০ পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। এবং সিসিটিভি ও ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি করা হবে।

তৃণমূলে রাজ্যসভার সাংসদ মমতা বালা ঠাকুর ঠাকুরবাড়িতে ১৪৪ ধারার জন্য আবেদন করেছিলেন। এই প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার বলেন, কোন ১৪৪ ধারা লাগু হয়নি। উনি আবেদনের করেছিলেন সেটা পেন্ডিং অবস্থায় রয়েছে। আমরা সমস্ত ভক্তদের মেলায় আসার জন্য আবেদন করছি।

এদিকে শনিবার ভোরবেলা হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথি মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশী তিথিতে ঠাকুরনগরের “কামনাসাগরে” পুণ্যস্নানে অংশ নেবেন বিজেপি ও তৃণমূল প্রার্থী শান্তনু ও বিশ্বজিৎ ।

শান্তনু ঠাকুরের কথায়, “প্রতিবারই কামনাসাগরে পুণ্যস্নান সারি। তবে এবছরটা বিশেষ আমার কাছে। কয়েকটি জায়গায় ইতিমধ্যেই প্রচার করেছি। কিন্তু আগামিকাল পুণ্যস্নান সেরে জোরকদমে, নতুন উদ্যমে প্রচার শুরু করব।”

অন্যদিকে তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস জানান, “ধর্মীয় জায়গায় রাজনীতির বিপক্ষে আমি। ছোট থেকে কামনাসাগরে স্নান করি। রাজনীতিতে আসার পর অন্তরালে থেকেই করি। এবছর লোকসভা নির্বাচনের প্রচার শুরুর আগেই ঠাকুরবাড়িতে গিয়ে আশীর্বাদ নিতে চাই।”
তবে জানা গেছে ,শনিবার একসঙ্গে দুই প্রার্থীকে দেখা যাবে না। ভোরে বাড়ির সামনে “কামনাসাগরের” ঘাটে উপস্থিত থাকবেন শান্তনু। তার কিছুক্ষণ পর সেখানে পৌঁছবেন বিশ্বজিৎ। মহামেলার প্রথমদিনে দুই প্রার্থীর উপস্থিতি যে ঠাকুরবাড়ির প্রাঙ্গণে উত্তেজনার পারদ চড়াবে, তা বলাই বাহুল্য।

চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনেও মতুয়াদের মন পেতে মরিয়া রাজ্যের এবং কেন্দ্রের শাসক দল। ২০১৯ -এর আগে পর্যন্ত বনগাঁ লোকসভার সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রই ছিল তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের সময় থেকেই খেলা ঘুরে যায়। তৃণমূলের হাত ছেড়ে মতুয়াদের বড় অংশ ঘুরে যান বিজেপির দিকে।

সেবারের নির্বাচনে ১,০৯,৮৫৫ ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন শান্তনু ঠাকুর। তবে এর পিছনে বিরাট অবদান ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। ২০১৯ সালে ভোটের আবহে ঠাকুরনগরে এসে ঠাকুরবাড়ির মাঠে সভায় দাঁড়িয়ে মোদি মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। উদ্বাস্তু, শরণার্থী তকমা ছেড়ে, ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার আশায় বিজেপির শান্তনুকে জিতিয়েছিলেন মতুয়ারা।

এবার লোকসভা ভোটের আগে সিএএ কার্যকর হতেই প্রথমে ব্যাপক উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন মতুয়াদের একাংশ। তবে কেন্দ্রের তরফে যে নথিপত্র চাওয়া হয়েছে, তা ঘিরেই আতঙ্কও ছড়িয়েছে সকলের মধ্যে। আবেদন করলেই যদি বাংলাদেশী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, সেই উদ্বেগে অনেকেই দরখাস্ত করা থেকে বিরত রয়েছেন।

নিঃশর্ত নাগরিকত্বের জন্য আন্দোলনও করছে মতুয়াদের বিরাট অংশ। ইতিমধ্যেই ভোটের প্রচারে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বারবার সিএএ নিয়ে সতর্ক করছেন। রাজ্যে সিএএ চালু এবং ডিটেনশন ক্যাম্প করতে দেবেন না বলেও সরব হচ্ছেন। রাজনৈতিক মহলে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, যেভাবে মুখ্যমন্ত্রী মতুয়াদের ভরসা জোগাচ্ছেন, এবং নিঃশর্ত নাগরিকত্বের দাবি উঠেছে, তার জেরে বনগাঁয় এবার খেলা ঘোরার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। ঠাকুরনগরের মহামেলাতেও তার আঁচ পাওয়া যাচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here