দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরে বিস্ফোরণকাণ্ডের তদন্তে গিয়ে হামলার মুখে পড়ল এনআইএ। গাড়ি ভাঙচুর হল। দুই এনআইএ আধিকারিক সামান্য আহত হয়েছেন বলেও খবর। 

গত ৫ জানুয়ারি সন্দেশখালিতে কী ঘটেছিল, তা মনে আছে অনেকেরই। শেখ শাহজাহানের বাড়িতে যাওয়ার পথে আক্রান্ত হতে হয়েছিল ইডি আধিকারিকদের। এবার ভোটের মুখে সেই
একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরে। ফের আক্রান্ত কেন্দ্রীয় সংস্থা।

তৃণমূল কর্মীকে আটক করতে গিয়ে আক্রান্ত হতে হল ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি তথা এনআইএ-র অফিসারদের। ভূপতিনগরে যে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল, তার তদন্ত করতে গিয়েই এভাবে আধিকারিকদের হামলার শিকার হতে হল বলে অভিযোগ।

জানা যাচ্ছে, ভূপতিনগর বিস্ফোরণের ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে নোটিস পাঠিয়েছিল এনআইএ।
তাঁরা হাজিরা না দেওয়ায় আশপাশের গ্রামে তল্লাশিতে যান আধিকারিকরা। সেই তালিকাতেই ছিলেন তৃণমূল নেতা বাদল মাইতি।

তাঁর বাড়িতে যাওয়ার পথেই এই ঘটনা বলে অভিযোগ। সূত্রের খবর, ভোর রাতে তল্লাশি চালাতে গেলে গ্রামবাসীদের একাংশ অফিসারদের ওপর আক্রমণ করে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গেও হয় ধস্তাধস্তি।

রাতের অন্ধকারে ছোড়া হয় ইট, গাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়। প্রায় ৩-৪ জন অফিসারের সঙ্গে ছিল ২০-২৫ জনের কেন্দ্রীয় বাহিনী। ধস্তাধস্তির পরও বাদল মাইতিকে আটক করতে পেরেছে এনআইএ।

বিস্ফোরণের ঘটনায় ১৪ জন তৃণমূল নেতার নাম জড়িয়েছিল। তাঁদের দফায় দফায় নোটিস দেওয়া হয়। তৃণমূল দাবি করতে থাকে, ভোটের আগে এগুলো ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি এনআইএ-কে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। এক প্রচার সভা থেকে তিনি বলেন, “বিজেপি নেতারা এনআইএ-র  সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে।” 

২০২২ সালে ভূপতিনগরে বিস্ফোরণ ঘটে, যার জেরে তিনজনের মৃত্যু হয়। উড়ে গিয়েছিল বাড়ির ছাদ। প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে ছিটকে গিয়ে পড়েছিল মৃতদেহ।
সেই বিস্ফোরণের তদন্তভার নিয়েছিল এনআইএ। তার তদন্তে গিয়েই আক্রমণের মুখে পড়তে হল এনআইএ-কে।
ইতিমধ্য়েই এই ঘটনার সমালোচনায় সরব হয়েছেন বিরোধী দলের নেতা। বিজেপি নেতা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী নিজে কেন্দ্রীয় সংস্থার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। সন্দেশখালিতে গিয়ে যে অফিসার আক্রান্ত হয়েছিলেন, রাজ্য প্রশাসন সেই অফিসারের বিরুদ্ধেই অভিযোগ দায়ের করেছিল। রাজ্য জুড়ে প্ররোচনা চলছে।”

প্রসঙ্গত, গত ৫ জানুয়ারি কার্যত একই ভাবে হামলার মুখে পড়েছিল ইডি। সে বার ইডির গন্তব্য ছিল সন্দেশখালির সরবেড়িয়া গ্রাম। যেখানে ‘সন্দেশখালির বাঘ’ শাহজাহান থাকতেন। কিন্তু সাতসকালে গিয়ে শাহজাহানের অনুগামীদের হামলার মুখে পড়েন ইডির আধিকারিকেরা। ইডিকে নিরাপত্তা দিতে যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকে, তাদেরও কার্যত প্রাণ বাঁচিয়ে পালাতে হয়।

একাধিক ইডি আধিকারিক আহত হন। কলকাতায় এনে তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। সে দিন থেকেই উত্তাপ বৃদ্ধি পাচ্ছিল সন্দেশখালির। ফেব্রুয়ারির গোড়ায় এলাকার তৃণমূল নেতাদের ‘অত্যাচারের’ বিরুদ্ধে পথে নামেন সন্দেশখালির মহিলারা। একে একে গ্রেফতার হন অভিযুক্ত তৃণমূল নেতারা। রাজ্য পুলিশ মিনাখাঁ থেকে গ্রেফতার করে শাহজাহানকে। সেই ঘটনায় মহিলাদের আন্দোলনের প্রথম সারিতে থাকা স্থানীয় মহিলা রেখা পাত্রকে এ বারের লোকসভা ভোটে বসিরহাট কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে বিজেপি। অন্য দিকে, সন্দেশখালিকাণ্ডে প্রথমে গ্রেফতার, পরে হাই কোর্টে জামিন পাওয়া নিরাপদ সর্দারকে বসিরহাটের প্রার্থী করেছে সিপিএম। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এ বার পূর্ব মেদিনীপুরে আক্রান্ত হল এনআইএ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here