দেশের সময় কলকাতা: সন্দেশখালির উদ্ভূত পরিস্থিতির উপর টানা নজর রেখে চলেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। সন্দেশখালিতে কী চলছে, সেই বিষয়ে প্রতিদিন রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের সিইও-র দফতর সেই রিপোর্ট পাঠাচ্ছে দিল্লিতে। কমিশন সূত্রে তেমনই জানা যাচ্ছে। বৃহস্পতিবারও সিআরপিএফ-এর নোডাল অফিসারের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন নির্বাচন কমিশনের সিইও।

আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) কলকাতা-সহ দুই চব্বিশ পরগনার সঙ্গে বিশেষ বৈঠক রয়েছে কমিশনের। সূত্রের খবর, সেখানেও উঠতে পারে সন্দেশখালির প্রসঙ্গ। এখনও পর্যন্ত কমিশনের যা ভাবনা, তাতে প্রতিটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি এলাকা টহলদারির উপরেও বিশেষ জোর দিতে চাইছে কমিশন।

সন্দেশখালির পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। সেখানে প্রতি দিন কী ঘটছে, তার রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে দিল্লিতে। তেমনটাই খবর রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও)-এর দফতর সূত্রে।

লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট এখনও ঘোষণা হয়নি। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্বে। বাংলার উপর সামগ্রিকভাবেই বাড়তি নজর রাখছে কমিশন। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনার জন্য বাংলাতেই সবথেকে বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। সেই মর্মে ইতিমধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে কমিশন। কমিশনের যা ভাবনা, তাতে বাংলায় সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য ৯২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখতে চাইছে কমিশন।

গত জানুয়ারির শুরুতে ইডি আধিকারিকদের উপর হামলার ঘটনার পর চলতি মাসের শুরু থেকে আবার উত্তপ্ত সন্দেশখালি। সেখানে তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসনের মদতে জমি দখল, দুর্নীতি, স্থানীয়দের উপর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। যা নিয়ে প্রায় রোজই কোনও না কোনও কারণে সরগরম থাকছে এই দ্বীপ এলাকা।

মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর সূত্রে, যে হেতু আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তাই সন্দেশখালি নিয়ে প্রত্যেক দিন রিপোর্ট পাঠাতে বলেছে কমিশন। সেই মতো সিইও-র দফতর থেকে রিপোর্ট পাঠানো হয়। সন্দেশখালি যে জেলার অন্তর্গত, সেই উত্তর ২৪ পরগনা-সহ কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি কমিশনের ‘বিশেষ বৈঠক’ হওয়ার কথা। ওই সূত্রই জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সিআরপিএফের নোডাল অফিসারের সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ বৈঠকও করেছেন সিইও।

আগামী ৪ মার্চ রাজ্যে আসার কথা মুখ্য নির্বাচন কমিশনার-সহ কমিশনের ফুল বেঞ্চের। ৫ মার্চ স্বীকৃত সব রাজনৈতিক দল এবং জেলা প্রশাসনগুলির সঙ্গে বৈঠক করার কথা তাদের। ৬ মার্চ মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি, এডিজি (আইনশৃঙ্খলা), কলকাতার পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করে দিল্লি ফিরে যাওয়ার কথা কমিশন-কর্তাদের। ভোট বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ওই বৈঠকে ভোটের সঙ্গে যুক্ত সব ক’টি বিষয় আলোচনায় আসে। বিশেষ ভাবে গুরুত্ব পায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। এত দিন ধরে পাওয়া আইনশৃঙ্খলা রিপোর্টের সঙ্গে বিশেষ ভাবে খতিয়ে দেখা হয় প্রশাসনিক পদক্ষেপ এবং ভূমিকা। এলাকায় কারা গোলমাল পাকাতে পারে, যার প্রভাব পড়তে পারে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায়, তাদের ধরতে প্রশাসন কী পদক্ষেপ করেছে, তা-ও জানতে চায় কমিশন। একই সঙ্গে আগের ভোটগুলিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের তথ্যও থাকতে হয়।

অভিজ্ঞ আধিকারিকদের অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সন্দেশখালি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার প্রশ্নে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। বিভিন্ন সময়ে কড়া বার্তা শোনা গিয়েছে কলকাতা হাই কোর্টের তরফেও। তা নজরে রেখেই কমিশন সন্দেশখালির রিপোর্ট চাইছে বলে মনে করছেন তাঁরা।

প্রসঙ্গত, গত ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের তুলনাতেও কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংখ্যাটা অনেকটা বেশি। উনিশের লোকসভা ভোটে  ৭৪০ কোম্পানি বাহিনী এসেছিল বাংলায়। এবার আরও বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনী বাংলায় আনতে চাইছে কমিশন।

উল্লেখ্য, কমিশন সূত্রে এও জানা যাচ্ছে, লোকসভা ভোটের অনেকটা আগে থেকেই বাংলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী পৌঁছে যেতে পারে। জানা যাচ্ছে, চলতি মাসের শেষের দিকেই কেন্দ্রীয় বাহিনী আসতে পারে বাংলায়। সাধারণ ভোটারদের মনে আস্থা বাড়াতেই আগেভাগে এই বাহিনী আনতে চাইছে কমিশন, সূত্রের খবর তেমনই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here